প্রকৃতির নিয়মেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কিছু স্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটে আমাদের দেহমনে। এ পরিবর্তন ঠেকানোর সুযোগ নেই। তবে বয়সের আগেই যদি এ ধরনের কোনো পরিবর্তন দেখা দেয়, তাহলে ধরে নেওয়া যায়, আপনি বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন। কোন ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে বুঝতে পারবেন সময়ের আগেই বুড়িয়ে যাচ্ছেন?
বার্ধক্যজনিত পরিবর্তন যে কেবল বয়সের কারণেই ঘটে, তা নয়। তারুণ্য ধরে রাখতে একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, সময়মতো ঘুমানো, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও শরীরচর্চা করা যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি চাপমুক্ত জীবনযাপন।
তাই পেশাগত কিংবা পারিবারিক জীবনে যাঁরা অত্যন্ত চাপে থাকেন, একটানা দীর্ঘ সময় অফিস কিংবা সংসারের কাজ নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ত থাকতে হয়, তাঁরা বয়সের আগেই খুব সহজে বুড়িয়ে যান। আবার দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগে আক্রান্ত হলেও দেহমনে আগেভাগেই পড়তে পারে বার্ধক্যের ছাপ। কারও কারও ক্ষেত্রে জিনগত কারণও দায়ী। ধূমপান, মদ্যপান, মাদকও সময়ের আগেই বার্ধক্য হাজির হওয়ার অন্যতম কারণ। এমনটাই বলছিলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
মোটামুটিভাবে ৪০ বছর বয়স থেকে আমাদের দেহে বয়সজনিত কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর ৫০ পেরোলে শুরু হয় মানসিক পরিবর্তন। ধরা যাক, আপনার বয়স চল্লিশের কম, কিন্তু আপনার মধ্যে বয়সজনিত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তাহলে কিন্তু আপনাকে নিজের জীবনধারা নিয়ে অবশ্যই নতুনভাবে ভাবতে হবে। এমন কিছু পরিবর্তন সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া
তারুণ্যের উদ্দাম গতি আপনি ৪০ বছর অবধি পুরোপুরি ধরে রাখতে না পারলেও কিন্তু একেবারে অস্বাভাবিক ধীর হয়ে পড়ার কথা নয়। যে কাজে আপনি অভ্যস্ত, সেই কাজ করে উঠতে না পারাটা অস্বাভাবিক। দেহের অধিকাংশ পেশির জোর সামান্য কমে যাওয়া, স্বাভাবিক কাজ করতেই ক্লান্তি অনুভব করা, সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হওয়া, শরীরচর্চার উদ্যম হারানো, পেশির ঘনত্ব কমে যাওয়া—এসবই হতে পারে বার্ধক্যের লক্ষণ।
মানসিক পরিবর্তন
আপনার চিন্তার গতি যদি আগের চেয়ে কমে যায়, কাজকর্মে মনোযোগ হারান কিংবা যদি আপনি অল্পতেই বিরক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে মনটা আপনার একটু বুড়িয়েই গেছে।
স্মৃতিভ্রম
বয়সের সঙ্গে স্মৃতিভ্রমের সম্পর্ক রয়েছে। প্রায়ই যদি আপনি অনেক কিছু ভুলে যান কিংবা নতুন কিছু শিখতে একেবারেই অপারগ হয়ে পড়েন, তা কিন্তু হতে পারে অকালবার্ধক্যের লক্ষণ।
ত্বকের পরিবর্তন
বয়সের আগেই আপনার ত্বকে ভাঁজ পড়তে পারে। আপনার ত্বক হঠাৎ অতিরিক্ত শুষ্কও হয়ে পড়তে পারে। এমন হলে কিন্তু কেবল ত্বকের যত্ন নিলেই হবে না, শরীর ও মনের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
চুলের পরিবর্তন
চুলের বেশ খানিকটা অংশ পেকে যাওয়া কিংবা টাক পড়ে যাওয়া বার্ধক্যের লক্ষণ। তবে মনে রাখতে হবে, টাক পড়ে যাওয়ার পেছনে জিনগত কারণও দায়ী হতে পারে। আপনার পরিবারের আগের কোনো প্রজন্মে এভাবে টাক পড়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে, তা নিজের বেলায় সহজভাবেই নিতে হবে আপনাকে। সেটিকে অকালবার্ধক্যের লক্ষণ ধরে নেওয়া যাবে না।
শেষ কথা
বার্ধক্যের ছাপ ঠেকাতে স্বাস্থ্যকর জীবনধারার কথা তো জেনেছেনই। সুস্থ থাকতে সব বয়সেই ঘুম, খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার অভ্যাস ঠিক রাখতে হবে। কর্মজীবন ও পারিবারিক জীবনের চাপ কমিয়ে ফেলতে হবে। আর বার্ধক্যের এসব লক্ষণ দেখা দিলে চাপমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বিষয়ে নতুনভাবে ভাবতে হবে।
তবে এ–ও মনে রাখা প্রয়োজন, জীবনযাপন স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর থাকা সত্ত্বেও যদি অকালবার্ধক্যের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কিছু রোগের কারণেও কিন্তু এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে।