উজ্জ্বল, সুন্দর ত্বকের জন্য অনেকেই এখন হাইড্রোফেসিয়াল করান। হাইড্রোফেসিয়াল কিন্তু সবার জন্য নয়। বয়স ও ত্বকের পুরুত্ব বিবেচনা করে এরপরই হাইড্রোফেসিয়ালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হাইড্রোফেসিয়ালের আগে ও পরে কিছু বিষয় মেনে চলতে হয়। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এ পদ্ধতি প্রয়োগের আগে তাই কিছু বিষয় জেনে নেওয়া আবশ্যক।
প্রথমেই বয়স। ১৫ বছর বয়সের আগে হাইড্রোফেসিয়াল করানো যাবে না। এমনকি ১৫ বছর বয়সের পরেও যদি ত্বক কোমল থাকে, তাহলে এ প্রক্রিয়া একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। ১৫ বছর পেরোনোর পর কারও ত্বক যদি পুরু হয়ে যায়, অতিরিক্ত ব্রণ হতে থাকে, তাঁর ক্ষেত্রে হাইড্রোফেসিয়ালের পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। ২৯ বছর বয়স পর্যন্ত নিয়মটা এমনই। তবে ৩০ পেরোনোর পর নারী-পুরুষ সবাইকেই প্রতি মাসে একবার হাইড্রোফেসিয়াল করাবার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে দীর্ঘদিন ত্বক ভালো থাকে। তবে যাঁদের ত্বক অতিসংবেদনশীল কিংবা খুব পাতলা, তাঁদের জন্য হাইড্রোফেসিয়াল নয়, এমনটাই বলছিলেন শোভন মেকওভারের কসমেটোলজিস্ট শোভন সাহা।
সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্র পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান জানালেন, হাইড্রোফেসিয়াল করানোর আগে কোন কোন বিষয় মেনে চলতে হবে।
হাইড্রোফেসিয়াল করানোর অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই কিছু পণ্য ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে এক্সফোলিয়েশনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ, যেমন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড বা এনজাইমসমৃদ্ধ পণ্য; ব্রণের জন্য ব্যবহৃত ওষুধ; ট্রেটিনোইনসমৃদ্ধ পণ্য। অবাঞ্ছিত লোম তোলার জন্য ওয়াক্সিং বা কোনো প্রসাধন ব্যবহারও বন্ধ রাখতে হয় অন্তত ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকেই।
অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে কড়া রোদে যাওয়া এবং ট্যানিং বেড ব্যবহার করা বারণ।
বটক্স, কেমিক্যাল পিলিং বা কেমিক্যাল রিসারফেসিং চিকিৎসা ও লেজার চিকিৎসা করানোর দুই সপ্তাহের মধ্যে হাইড্রোফেসিয়াল করানো উচিত নয়। আইসোট্রেটিনোইনসমৃদ্ধ পণ্য বন্ধ রাখতে হবে ছয় মাস আগে থেকেই। কেবল যদি চিকিৎসক আপনাকে অনুমতি দিয়ে থাকেন, তাহলে ভিন্ন কথা।
যেদিন হাইড্রোথেরাপি নেবেন, সেদিন শেভ করা যাবে না।
শোভন সাহা বলছিলেন, হাইড্রোফেসিয়ালের পর তিন দিন ত্বককে বিশ্রাম দিতে হয়। মেকআপ, পলিশিং, এমনকি ঘন ঘন ফেসওয়াশ ব্যবহারেও থাকে বিধিনিষেধ। তাই বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো বড় কোনো আয়োজনের আগে হাইড্রোফেসিয়াল করার ইচ্ছা থাকলে তা অনুষ্ঠানের অন্তত তিন-চার দিন আগেই করিয়ে নেওয়া উচিত। এ ছাড়া হাইড্রোফেসিয়ালে ব্যবহৃত যন্ত্রের কারণে এ প্রক্রিয়ার পর ত্বকে সামান্য দাগ দেখা যেতে পারে, যা পরবর্তীকালে আর থাকে না। যেকোনো সামাজিক আয়োজন, এমনকি অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কোনো সভায় যাওয়ার সময় এ ধরনের দাগের জন্য আপনি অস্বস্তি অনুভব করতে পারেন বলে মনে হলে এমন গুরুত্বপূর্ণ দিনের অন্তত তিন দিন আগেই হাইড্রোফেসিয়াল করিয়ে ফেলা উচিত।
হাইড্রোফেসিয়ালের পরও ত্বকের আলাদা যত্নআত্তি চাই। প্রথম ১২ ঘণ্টা ত্বক স্পর্শ করা যাবে না। এরপর সেরাম, মৃদু ফেসওয়াশ, সানব্লক পণ্য, নাইট ক্রিমের মতো প্রসাধন ব্যবহারের নির্দেশনা যেমন দেওয়া হয়, তেমনি থাকে কিছু বিধিনিষেধও।
অন্তত প্রথম ২৪ ঘণ্টায় অতিরিক্ত উত্তাপ এড়িয়ে চলতে হবে।
এক্সফোলিয়েশনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ, ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, ট্রেটিনোইনসমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করা যাবে না অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। অবাঞ্ছিত লোম তোলার প্রক্রিয়া থেকেও বিরত থাকুন এ সময়।
অন্তত ৭২ ঘণ্টা অবধি অতিরিক্ত সূর্যালোক এড়িয়ে চলা উচিত। এ সময় ট্যানিং বেড ব্যবহারও নিষেধ।
কেমিক্যাল পিলিং ও লেজার চিকিৎসা বন্ধ রাখতে হবে অন্তত দুই সপ্তাহ।
এত সব খেয়াল রেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন, আপনি হাইড্রোফেসিয়াল করাবেন কি না। প্রাথমিকভাবে নিজে মনস্থির করে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তিনি যদি আপনার ত্বক পরীক্ষা করে হাইড্রোফেসিয়ালের পরামর্শ দেন, কেবল তাহলেই গ্রহণ করুন এ পদ্ধতি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এরপর প্রস্তুতি নিন। দক্ষ হাতে হাইড্রোফেসিয়াল করান এবং বিশেষজ্ঞের সব পরামর্শ মেনে চলুন।