আপনি হয়তো খেয়াল করে থাকবেন, এই এশিয়া মহাদেশের ভেতরেই জাপান, কোরিয়া বা চীনের মানুষদের বয়সের তুলনায় তরুণ দেখায়। আবার ভারত বা বাংলাদেশের অনেককেই বয়সের তুলনায় বয়স্ক দেখায়। এই পার্থক্যটা গড়ে দেয় খাবার ও জীবনযাপনের পদ্ধতি। ত্বকে যে টান টান ভাব অনুভূত হয়, তার কারণ হলো আমাদের ত্বকের কোলাজেন নামের প্রোটিন। ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ার কারণ হলো ত্বকের কোলাজেন নামের প্রোটিন ভেঙে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া বা নতুন করে আর উৎপন্ন না হওয়া।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের প্রোটিন ক্ষয় হয়ে যায় এবং ত্বক পাতলা হয়ে যায়। বয়স ৩০ হয়ে যাওয়ার পর স্বতঃস্ফূর্তভাবেই প্রতিবছর কোলাজেন তৈরির হার ১ শতাংশ করে কমতে থাকে। এদিকে যে কোলাজেন আছে, সেটিও নষ্ট হতে থাকে। আরও নানা কিছুর প্রভাবে ত্বকের কোলাজেন দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। এর ফলে আপনি দ্রুত বুড়িয়ে যান। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার পেছনে কী কী কারণ থাকতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি, সিগারেট, অ্যালকোহল, বাইরের তেল–মসলাযুক্ত খাবার বেশি খেলে ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে দ্রুত বুড়িয়ে যায়।
২. ত্বকে মাত্রাতিরিক্ত প্রসাধন ব্যবহার করলে সেখানে ব্যবহৃত টক্সিন ত্বকের প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে ফেলে। ফলে ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যায়। আবার দীর্ঘক্ষণ মেকআপ রাখলে বা ঠিকমতো না তুললেও বলিরেখা পড়ে।
৩. ডিভাইসে আসক্তি থাকলেও আপনাকে বয়সের তুলনায় বয়স্ক দেখাবে। দীর্ঘ সময় একটানা ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকা, মোবাইল স্ক্রল করার ফলে আপনার ত্বক স্বাভাবিক পুষ্টি ও সৌন্দর্য হারায়।
৪. পারিবারিক, অর্থনৈতিক বা কর্মস্থলে যেকোনো চাপ শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত করে তুলতে পারে। সেটা ত্বকে স্পষ্ট ফুটে ওঠে।
৫. রোদে সানস্ক্রিন ব্যবহার না করলে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৬. চেহারায় ঘুমের প্রভাব সরাসরি ও গভীর। অপর্যাপ্ত ঘুম, রাত জেগে থাকা, গভীরভাবে না ঘুমানো—এই সবকিছুই ত্বকে ফুটে ওঠে স্পষ্ট।
৭. অনেকে বাড়িতে বা অফিসে দিনভর শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে কাটান। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আর কম বয়সেই ত্বকে ভাঁজ পড়তে শুরু করে।
৮. এসিতে দীর্ঘক্ষণ থাকার মতো পানি কম খেলে বা শরীরে পানিশূন্যতা থাকলেও ত্বকে সেই প্রভাব পড়বে।
৯. রোদে বের হলে সানগ্লাস অবশ্যই পরা উচিত। যদি এই অভ্যাস আপনার না থাকে, তাহলে চোখের নিচের ত্বক খারাপ হতে শুরু করে, চোখের নিচে কালি পড়ে।
১০. সব সময় মানসিক চাপে থাকলে, দুশ্চিন্তার ভেতর থাকলে, ভ্রু কুঁচকে থাকলেও ত্বকে সেটার ছাপ পড়ে।
আপনি একটা ‘খারাপ’ সম্পর্কে থাকলে বা সুখে না থাকলে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, হতাশা আর টেনশনে দ্রুত বুড়িয়ে যান। আপনার জীবনসঙ্গী ‘টক্সিক’ হলে মানসিক চাপে ত্বক স্থিতিস্থাপকতা হারায়। কুঁচকে যায় ত্বকের চামড়া। সেই সুযোগে ভিড় বাড়ে বলিরেখার। প্রতিরোধব্যবস্থা ভেঙে দ্রুত বুড়িয়ে যায় ত্বক।
আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজির গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে কর্টিসল বৃদ্ধি পায় (বয়স বাড়ার সঙ্গেও শরীরে কর্টিসলের উৎপাদন বাড়ে), আর এ কারণেই ত্বক বুড়িয়ে যায়। কেননা, অতিরিক্ত কর্টিসল কোলাজেনকে ভেঙে ফেলে এবং হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমায়। কোলাজেন ও হায়ালুরোনিক অ্যাসিড কমে যায় বলে ত্বক ভেঙে গিয়ে ত্বকে বয়সের বলিরেখা বা ছাপ পড়ে। এ ছাড়া দুশ্চিন্তা করলে ফ্রি র্যাডিকেল নিঃসৃত হয়। এটি ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ফাইবারের গঠন ভেঙে ফেলে। এর ফলেও দ্রুত ত্বকে বলিরেখা পড়ে।
আর ঠিক এ কারণেই একটা অস্বাস্থ্যকর সম্পর্কে থাকলে আপনাকে বয়সের চেয়েও বেশি বয়স্ক দেখায়।
সূত্র: দ্য অ্যাসথেটিকস সেন্টার