সার্জারি ছাড়া যে ৩ কৌশলে বদলে যাবে আপনার চেহারা

চিবুকে চর্বি জমে তৈরি হয় ‘ডাবল চিন’। ত্বকে পড়ে বলিরেখা, বয়সের ছাপ। কোনো রকম কাটাছেঁড়া ছাড়াই আপনার মুখ পেতে পারে সেরা আকৃতি।

কাটাছেঁড়া ছাড়াই বিভিন্ন ম্যাসাজ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে চেহারায় আনতে পারেন আকর্ষণীয় ভাব। মডেল: মাশিয়াত, কৃতজ্ঞতা: হারমনি স্পা
ছবি: সুমন ইউসুফ

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর ওজন বাড়তে শুরু করলে অনেকের ক্ষেত্রেই সেটা সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে মুখে। চিবুকে চর্বি জমে তৈরি হয় ‘ডাবল চিন’। ত্বকে পড়ে বলিরেখা, বয়সের ছাপ। এ সময় বিভিন্ন ধরনের অয়েল ম্যাসাজ, রোলিং, টোনিং ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক উপায়েই মুখমণ্ডলকে দিতে পারেন সেরা আকৃতি। রূপবিশেষজ্ঞ রহিমা সুলতানা জানালেন মুখের গঠনকে আকর্ষণীয় করে তোলার কিছু উপায়।

রোলারে দূর হবে মুখের মেদ

রোলার ওপরের চোয়ালে ধরে নিচের দিকে নামাতে হবে

ঘুমানোর আগে পাঁচ মিনিট রোলার ব্যবহার করতে হবে। মুখের ত্বককে টান টান করতে ক্রিম বা তেল মেখে রোলারের সাহায্যে নিয়মিত মালিশ করুন। এই মালিশের নিয়ম হলো, রোলার ওপরের চোয়ালে ধরে নিচের দিকে নামাতে হবে। নিয়মিত করলে ঝরে যাবে মুখের বাড়তি মেদ। মুখের গঠন হয়ে উঠবে আরও আকর্ষণীয়। রোলার দিয়ে ম্যাসাজের ফলে ত্বকে রক্তসঞ্চালনও বাড়ে। ফলে ত্বকের দাগছোপ কমে যায়।

তেলের ম্যাসাজ

প্রতিদিন পাঁচ মিনিট এই ম্যাসাজ করলে পরিবর্তনটা নিজেই টের পাবেন

তেল ত্বকের জন্য খুবই ভালো। তেল ত্বকের দাগ দূর করে, বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না, ত্বকের প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে। এ ছাড়া ত্বকে নারকেল তেল, আমন্ড অয়েল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর অয়েল, তিসির তেল, ভিটামিন ডি ক্যাপসুল, তিলের তেল ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। একটা বাটিতে এক টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল ও দুটো ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিন। এবার এগুলো ভালোভাবে মিশিয়ে দুই হাতের দশটা আঙুলে লাগান। এবার আঙুলগুলোর সাহায্যে বিভিন্নভাবে মুখে ম্যাসাজ করুন। মুখের ‘জ লাইন’ বের করতে, চিবুক ভি শেপে আনতে, ত্বকের চর্বি কমাতে, চোখের নিচের কালো দাগ, ফোলা ভাব দূর করতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে, বিভিন্ন স্ট্রোকে ম্যাসাজ করতে হবে। ছবির মতো দুই চোখের নিচে তেল লাগিয়ে টেনে নিন। ভ্রুর ওপরে তেল লাগিয়ে টেনে নিতে পারেন। তর্জনী আর বুড়ো আঙুল দিয়ে আলতোভাবে নাক চেপে ধরে টেনে টেনে ম্যাসাজ করলে নাকের গঠন সুন্দর হবে।

এই ম্যাসাজে নাকের গঠন হবে সুন্দর

দুই হাতের তর্জনী দিয়ে নাকের দুই পাশে চেপে টেনে টেনে অন্তত ১০ মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। মনে রাখবেন, এক দিন–দুই দিন করলে হবে না। ত্বকে তেল ম্যাসাজ করার জন্য প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট সময় রাখুন। নিয়মিত করলে কিছুদিন পর আপনি নিজেই পরিবর্তন বুঝতে পারবেন। হাতের আঙুল দিয়ে ম্যাসাজ করার সবচেয়ে ভালো দিক হলো আঙুলের ত্বকের তাপমাত্রা মুখের ত্বকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। ফলে মুখের ত্বককে শাসন আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ কারণে যেকোনো কিছুর চেয়ে হাত দিয়ে ম্যাসাজ সবচেয়ে বেশি কার্যকর। টোনার দিয়ে দুই গালে একসঙ্গে চেপে চেপে ত্বকে ম্যাসাজ করাটাও বেশ কার্যকর।

মুখের যোগাসন

মুখের ব্যায়ামগুলো বেশ মজার

যাঁরা মুখের ব্যায়াম করেন, তাঁদের কাছে ‘কিসেস টু দ্য এয়ার, কিসেস টু দ্য স্কাই’ খুবই পরিচিত। এটা খুবই সহজ। আপনি প্রথমে আপনার মুখ ডান দিকে ঘোরাবেন। এরপর মুখের পেশির ওপর জোর দিয়ে ৩০ বার শূন্যে চুমু খাবেন। তারপর মুখ ঘুরিয়ে মাঝখানে এনে ৩০ বার ও বাম পাশে নিয়ে ৩০ বার বাতাসে চুমু দেবেন। একইভাবে মাথা উঁচু করে মুখ ডান পাশে, মাঝখানে ও বাম পাশে ঘুরিয়ে ৩০ বার করে ৯০ বার চুমু দেবেন। স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে আপনার ঠোঁট ও দুই গালের মাংশপেশি ব্যথা হয়ে যাবে।

মুখের খুবই মজার একটা ব্যায়াম হলো গাল ফোলোনো। ব্রাশ করার পর যেভাবে মুখ কুলকুচি করেন, সেটাই করবেন। মুখের বাতাস প্রথমে ডান গালে নেবেন। গালের ভেতরের দিকে যতটা সম্ভব ফুলিয়ে দেয়ালকে বাতাস দিয়ে ধাক্কা দেবেন। একই কাজ বাম গালে করবেন। এভাবে ৩০ বার করবেন। আবার একইভাবে একসঙ্গে দুই গাল যথাসম্ভব ফুলিয়ে মনে মনে ৩০ পর্যন্ত গুনবেন। এভাবে কয়েকবার করবেন।

এই যোগাসনে দূর হবে মুখের বাড়তি মেদ

এ ছাড়া দুই ঠোঁট চওড়া হাসির মতো করে যতটা সম্ভব দুই দিকে প্রসারিত করবেন, আবার বন্ধ করবেন। এভাবে ৩০ বার করবেন। হাঁসের ঠোঁট আমরা ছোটবেলায় অনেকেই করেছি। দুই পাশের দুই গাল মুখের ভেতর টেনে নিয়ে দুটো ঠোঁটকে সামনের দিকে হাঁসের মতো চিকন আর লম্বা করে রেখে মনে মনে ৩০ পর্যন্ত গুনবেন। তারপর ছেড়ে দেবেন। এভাবে বিরতি নিয়ে তিন থেকে পাঁচবার করবেন।