ত্বকের এই সমস্যাগুলো যে কারণে হয়

খুব ছোট বয়স থেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত।
ছবি : সুমন ইউসুফ

যত্ন, সময় ও ধারাবাহিকতা—তিনটি দিক মাথায় রেখে কোনো বিষয়ে যত্ন নেওয়া হলে ইতিবাচক ফল আসবেই। ত্বকের ক্ষেত্রেও একই কথা। প্রতিদিন কিছুটা সময় নিয়ে নিয়মিত যত্ন নিলে ত্বক থাকবে ভালো। তারপরও চোখের নিচে কালি পড়া, বলিরেখা, ব্রণ, অসমান রং—ত্বকে দেখা দিতে পারে এমন কিছু সমস্যা। নারী-পুরুষ উভয়েরই হতে পারে এসব ঝামেলা। শুষ্ক, তৈলাক্ত, মিশ্র আর সংবেদনশীল ত্বকের এমন কিছু সমস্যার সমাধান জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন।

 ব্রণ

১২ বছর ধরেই মুখমণ্ডল, গলা, পিঠে ব্রণের উপদ্রব দেখা যায়, ছেলে-মেয়ে উভয়ের ত্বকেই দেখা যায়। তৈলাক্ত ত্বকেই আস্তানা গাড়ে বেশি। তৈলাক্ত ত্বকে লোমকূপ খোলা থাকে, এ কারণে তেলের নিঃসরণ হয় বেশি। অতিরিক্ত তেলের কারণে ত্বকের ওপর জ্বালাপোড়াটাও হয় বেশি। অনেক সময় ব্রণ থেকে পুঁজ বের হয়। একটা থেকে তিনটা, তিনটা থেকে পাঁচটা—গাল, নাক ভরে যায়। তেলের প্রভাব কমানোর জন্য মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে দিনের মধ্যে পাঁচ–ছয়বার। পানির আছে নিজস্ব ঔষধি গুণ। পানি দিয়ে কয়েকবার চেহারা ধুলে ব্রণের সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে। কারণ, এতে লোমকূপ বন্ধ হয়ে যাবে। তেল নিঃসরণও কমে যাবে। মজার বিষয় হলো অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বক থেকেও কিন্তু ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের ত্বকে ক্রিমের একটা আস্তরণ যেন সব সময় থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। 

 বলিরেখা

ত্বক শুষ্ক থাকলে কিছুটা আগেভাগেই চলে আসতে পারে বলিরেখা। এ ধরনের ত্বক পরিষ্কার করার সময় কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক থেকে তেল নিঃসরণ হবে। পাশাপাশি সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার কারণেও কিন্তু এই সমস্যা হতে পারে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি, ডি, ই আছে এমন খাবার রাখুন। এ ছাড়া বেটা কেরোটিনসমৃদ্ধ খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি ত্বকেও লাগাতে পারেন।

 পিগমেন্টেশন

এটা অনেকে বংশপরম্পরায় বা উত্তরাধিকার সূত্রেও পেয়ে যান। এ ক্ষেত্রে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। যেন না বাড়ে, সেই চেষ্টা করে যেতে হবে। নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। রোদে যাওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে ত্বক পুড়তে শুরু করে। সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বকের ক্যানসার হয়ে যেতে পারে বলে জানালেন আফরোজা পারভীন। খুব ছোট বয়স থেকেই এ জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। পিগমেন্টেশনের দাগ দূর করতে অনেকে লেজার করান। কিছুদির পর কিন্তু আবারও ফেরত চলে আসতে পারে। এ কারণে ছোট বয়স থেকেই মনোযোগী হলে ভালো। ত্বকের পোড়া দাগ কমাতে টমেটোর রস লাগানো যায়। এতে একদম চলে না গেলেও দাগ হালকা হবে। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য টমেটোর রস মানানসই নয়।

তেলের প্রভাব কমানোর জন্য মুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে দিনের মধ্যে পাঁচ–ছয়বার।

চোখের কালো দাগ

চোখের নিচে কালো দাগ অনেকে পরিবার থেকেই পেয়ে থাকেন। অনেকের চোখও ডাবা থাকে। দেখলে মনে হয়, দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে আছে। পারিবারিকভাবে এটি পেয়ে থাকলে খুব বেশি কিছু করার নেই। ঘুমের অনিয়ম আর চাপের কারণে যাঁদের চোখের নিচে কালি পড়ে, তাঁরা পানি পান করুন বেশি করে। আফরোজা পারভীন বলেন, ‘আমাদের চেহারায় ত্বকের ভারসাম্য ধরে রাখে পানি। যখন অনেক ঘামা হয় বা কান্নাকাটি করা হয়, এই পানির ওপর চাপ পড়ে। ফলাফল চোখের নিচের অংশে ফুটে ওঠে। ৮ ঘণ্টা ঘুমালে চোখের নিচে দাগ পড়ার আশঙ্কা কমে আসবে। পাশাপাশি আলু আর শসা কুচি করে সপ্তাহে তিন–চার দিন ২০ মিনিট কালো দাগে রেখে ধুয়ে ফেলুন। 

 অসমান বা ছোপ ছোপ দাগ

চেহারার ওপর অসমান রং বা ছোপ ছোপ দাগ নিয়ে অনেকের অভিযোগ আছে। ত্বকের নিচে মেলানিন বেশি থাকায় শ্যামলা রঙের অধিকারীদের এটি বেশি হয়। যে জায়গায় মেলানিন বেশি আছে, সূর্যের রশ্মি সেই জায়গাটিকে আগে পোড়ায়। উপায়—সানস্ক্রিন ব্যবহার। এসপিএফ ৫০ আছে, এমন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন রোজ। চার–পাঁচ ঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে আবারও লাগান।

 সোরিয়াসিস

এই চর্মরোগটিতে যাঁরা ভুগছেন, ২৪ ঘণ্টাই তাঁদের ত্বক ময়েশ্চার (আর্দ্র) থাকতে হবে। এই চর্মরোগ থাকলে ব্যায়াম করুন নিয়মিত। ত্বকের পরিষ্কারক হিসেবে প্রাকৃতিক উপকরণ যেমন চালের গুঁড়া, বেসনের গুঁড়া, অ্যালোভেরা, টক দই ব্যবহার করুন নিয়মিত।

 অ্যালার্জি

মুখে অ্যালার্জি দেখা যেতে পারে প্রায়ই। অ্যালার্জি হতে পারে, এমন খাবার না খাওয়াই ভালো। মুখে অ্যালার্জি দেখা দিলে ঠান্ডা ক্রিম লাগাতে পারেন।

প্রতিদিন কিছুটা সময় নিয়ে যত্ন নিলে ত্বক থাকবে ভালো।

অতিরিক্ত লোম

অনেকের মুখেই লোম থাকে বেশি। ওয়াক্স করা যায় নিয়মিত। এতে করে একটা সময়ের পর লোমকূপ মরে যাবে। লোম ওঠা কমে যায়। চার মাস পরপর ফেয়ার পলিশও করতে পারেন। লোমের রং হালকা হয়ে যাবে। শেভ করলে কিন্তু হিতে বিপরীত হয়। লোম আরও মোটা হয়ে ওঠার আশঙ্কা থাকে। 

 নাকের ত্বক

অনেকেরই নাকের ওপর ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস দেখা দেয় অনেক বেশি। অনেকের আবার নাকের ওপর লোমও থাকে। ওয়াক্সিং করার মাধ্যমে এই দুটি সমস্যা থেকে একবারই সমাধান পাওয়া যায়। নিয়মিত পরিষ্কার করা না হলে নাকের পাশে স্যাঁতসেঁতে একটা ভাব চলে আসে, দেখতে অসুন্দর লাগে। ওয়াক্সিং করতে না চাইলে স্টিকের মাধ্যমেও দূর করতে পারেন ব্ল্যাকহেডস। নাকের ওপর ক্রিম লাগিয়ে, গরম পানিতে ডোবানো ছোট তোয়ালে রেখে দিন কিছুক্ষণ। এরপর সাবধানে স্টিক দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলতে পারেন।