যত্ন নিলে ভালো থাকবে কোঁকড়া চুল
যত্ন নিলে ভালো থাকবে কোঁকড়া চুল

কোঁকড়া চুলের সমস্যা ও সমাধান

প্রচণ্ড গরমে কেরাটিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চুলের টেক্সচার, অর্থাৎ গঠনবিন্যাস নষ্ট হতে দেখা যায়। আবার গরমে মাথার ত্বক হয়ে পড়তে পারে তেল চিটচিটে। এ ছাড়া গরমে চুল বিবর্ণও হয়ে পড়ে। খুশকিও দেখা দিতে পারে।

কয়েকটা দিন বেশ মেঘ-বৃষ্টি-ঝড় গেল। তাতে কি, গরম কিন্তু আবার ফিরে এসেছে। সঙ্গে ধুলাবালুর যন্ত্রণা। চুলের ওপরও এসবের বিরূপ প্রভাব পড়ে। চুল হয়ে পড়ে বেশ রুক্ষ, দেখায়ও শুষ্ক। বিশেষত যাঁদের চুল কোঁকড়া, তাঁদের এ সময় রুক্ষতা বেশ ভোগায়। কোঁকড়া চুল প্রাকৃতিকভাবেই শুষ্ক। কেরাটিন নামের যে প্রোটিন দিয়ে চুলের গঠন হয়, মূলত সেটির বিন্যাসের কারণেই কারও কারও চুল কোঁকড়া। জিনগত, জাতিগত ও ভৌগোলিক বিষয়ও চুলের আকৃতির নিয়ামক।

জট ছাড়াবেন সাবধানে

চুল ফেটে যেতে পারে এ সময়, বিশেষত চুলের আগা; চুল ছিঁড়েও পড়তে পারে। প্রচণ্ড গরমে কেরাটিন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে চুলের টেক্সচার, অর্থাৎ গঠনবিন্যাস নষ্ট হতে দেখা যায়। আবার গরমে মাথার ত্বকে সেবাস, অর্থাৎ প্রাকৃতিক নিঃসরণ বেশি হওয়ার কারণে চুলের গোড়া হয়ে পড়তে পারে তেল চিটচিটে। জমতে পারে ধুলাময়লা। এ ছাড়া গরমে চুল বিবর্ণও হয়ে পড়ে। খুশকিও দেখা দিতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই চুল পেকে যাওয়ার সমস্যাও দেখা যায়। গরমে কোঁকড়া চুলের নানাবিধ সমস্যা এবং সেগুলোর সমাধান জানিয়েছেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি।

তেল চাই ঠিকঠাক

সপ্তাহে দু-তিন দিন মাথার ত্বকে এবং চুলে উষ্ণ তেল মালিশ করুন। এরপর ৫ থেকে ১০ মিনিট গরম ভাপ নেওয়া প্রয়োজন। তেল গরম করার সময়ই একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস যোগ করে দিতে পারেন। হেয়ার প্যাক লাগাতে হলে উষ্ণ তেল মালিশের আধ ঘণ্টা পর লাগানো ভালো।

গোসলেই যত্ন

রুক্ষ ভাব থেকে মুক্তি পেতে রোজ কন্ডিশনার ব্যবহারের বিকল্প নেই। গরমে একাধিকবারও গোসল করেন অনেকে। প্রতিবার গোসলের সময় হালকাভাবে শ্যাম্পু করে ফেলুন। তাহলে চুলের গোড়ায় ময়লা জমতে পারবে না। মৃদু কোনো প্রোটিন শ্যাম্পু বেছে নেওয়া ভালো। চাইলে কিছুদিন পরপর শ্যাম্পুর ধরন বদলাতে পারেন। প্রতিবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

বাজার থেকে চুলের মাস্ক কিনেও লাগাতে পারেন

কন্ডিশনারের বিকল্প

রিঠা ভিজিয়ে রাখতে পারেন সারা রাত। ভেজানো পানিসহ রিঠা সেদ্ধ করে ঘন করে নিন পরদিন। ঠান্ডা হলে ছেঁকে পুরো চুলে লাগিয়ে পেছন থেকে আঁচড়ে মিনিট পাঁচেক পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে রোজ হতে পারে ডিপ কন্ডিশনিং। চাইলে চায়ের লিকার ছেঁকে নিয়েও কন্ডিশনার হিসেবে লাগাতে পারেন। সমপরিমাণ ভিনেগার ও পানির মিশ্রণও বেছে নেওয়া যায়।

চুল পড়ছে?

টক দই আর দুটি ডিমের মিশ্রণে ঘন করে বানানো চায়ের লিকার যোগ করে তুলার প্যাডের সাহায্যে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান সপ্তাহে এক দিন। মিনিট ২০ পর শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগাতে হবে।

সুস্থতায় অন্যান্য প্যাক

সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন প্যাক ব্যবহার করুন—

১টি পাকা কলা, ১টি পেঁয়াজ, আধা চা-চামচ গ্লিসারিন ও ১ চা-চামচ মধু ব্লেন্ড করে নিন, কিংবা

২টি ডিম, ১ কাপ টক দই এবং ২ চা-চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।

বাজার থেকে চুলের মাস্কও কিনতে পারেন। ক্রিমজাতীয় ঘন প্যাক ভালো, যেমন স্পা প্যাক।

চুলের আগা ফাটার সমস্যায়

নারিশমেন্ট ক্রিম, যেমন কেরাটিন ট্রিটমেন্ট ক্রিম বা স্পা ক্রিম কিংবা চুলের মাস্কের সঙ্গে সামান্য সেরাম যোগ করে ফাটা জায়গায় লাগিয়ে প্লাস্টিক ফয়েল দিয়ে জড়িয়ে রাখুন এক থেকে দুই ঘণ্টা, সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।

অতিরিক্ত ফাটা অংশ স্প্লিট কাটার দিয়ে কেটে ফেলুন। নইলে ওপরের অংশও ফাটতে শুরু করবে, চুল দুর্বল হয়ে পড়বে, ঘনত্ব কমতে থাকবে।

খুশকির চিকিৎসায় চুল কোমলও হবে

টক দইয়ের সঙ্গে এর অর্ধেক পরিমাণ পানি দিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিন। চুল ভিজিয়ে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শুকিয়ে এরপর ফেটানো টক দই তুলার প্যাডের সাহায্যে চুলের গোড়ায় গোড়ায় লাগিয়ে নিন। এরপর পেছন থেকে চুল আঁচড়ে নিন। এক থেকে দেড় ঘণ্টা পর আবারও পেছন থেকে চুল আঁচড়ে নিন। খুশকি নরম হয়ে পড়ে যাবে। সবশেষে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। এভাবেই চিকিৎসা করুন সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন।

কোকঁড়া চুলের আছে নিজস্ব সৌন্দর্য

সাধারণ কিছু বিষয়

ছাতা ও স্কার্ফ ব্যবহার করুন। চুল ফাটা ও বিবর্ণ হয়ে পড়ার সমস্যা কম হবে।

জট ছাড়াবেন সাবধানে।

চুল ধোয়ার জন্য মৃদু উষ্ণ পানি ব্যবহার করা ভালো।

ভেজা চুলে নরম, সুতি কাপড় বা তোয়ালে জড়িয়ে রাখুন। দ্রুত শুকাতে হলে ঠান্ডা বাতাসের ড্রায়ার ব্যবহার করুন।

ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ প্রসাধনী বেছে নিন। সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু এড়িয়ে চলুন।

ঘুমের আগে সেরাম লাগিয়ে চুল আঁচড়ে নিন, হালকাভাবে বেঁধে ঘুমান।