ত্বকের সুস্থতা এবং সৌন্দর্যের প্রথম শর্তই হলো ত্বকের পরিচ্ছন্নতা, আর তার জন্য মুখ ধোওয়ার কোনো বিকল্প নেই। পরিচ্ছন্নতার জন্য কতবার মুখ ধোয়া উচিত, কীভাবে মুখ ধোয়া উচিত, সেটারও আছে কিছু নিয়ম
‘আমাদের দেশের আবহাওয়ার যে ধরন, তাতে নিয়ম করে মুখ ধোয়াটা প্রয়োজন। ত্বক থেকে বেরিয়ে আসা সিবাম অর্থাৎ ত্বকের স্বাভাবিক নিঃসরণের সঙ্গে ধুলা আটকে যায় সহজেই। সময়মতো তা পরিষ্কার করা না হলে ত্বকে ফুসকুড়ি, ব্রণ কিংবা জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে। সারা দিনে অন্তত তিনবার ফেসওয়াশ বা এর কোনো কার্যকর বিকল্প ব্যবহার করে মুখ ধোয়া আবশ্যক। মুখে ময়লা জমলে তিনবারের বেশি হলেও ক্ষতি নেই। ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেইসওয়াশ বেছে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য প্রয়োজন তেলবিহীন ফেসওয়াশ আর শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ ফেসওয়াশ। রোজকার ব্যবহারের জন্য হালকা ফেসওয়াশই ভালো। মাঝেমধ্যে কেবল পানি দিয়েই মুখ ধুয়ে নিতে পারেন।’ বলছিলেন বিন্দিয়া এক্সক্লুসিভ বিউটি কেয়ারের রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। তাঁর কাছ মুখ ধোয়ার আরও কিছু পাঠ নেওয়া যাক—
কখন মুখ ধোবেন?
সকালে ঘুম থেকে উঠে অবশ্যই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোবেন। বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে আবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখটা ধুয়ে ফেলুন। অনেকে দুপুরে গোসল করেন, তাঁরা চাইলে এই সময়টাতেই ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। কারও আবার সকালবেলাই বেরোতে হয়। কর্মস্থলে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই যদি অতিরিক্ত ঘাম হয়, মুখের ত্বক চিটচিটে বা ধূলিধূসর হয়ে যায়, তাহলে পৌঁছে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া উচিত। তেমনটা না হলে কেবল পানি দিয়ে মুখ ধুলেও চলে। কর্মস্থলে একবার ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললে দুপুরে আলাদাভাবে মুখ ধোয়ার প্রয়োজন পড়বে না। সুযোগ থাকলে সেখানেই ফেসওয়াশ রেখে দিন। কিংবা ব্যাগেও রাখতে পারেন ছোট আকারের ফেসওয়াশ। বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় বা রাতে মুখ পরিষ্কার করে ফেললে শোয়ার আগে আর ফেসওয়াশ ব্যবহার না করলেও চলে। তবে মেকআপ করলে দিনর শেষে জলপাইয়ের তেল বা বডি অয়েল দিয়ে একবার মুখ ধুতে হবে, এরপর ধুতে হবে ফেসওয়াশের সাহায্যে।
ফেসওয়াশের বিকল্প
মধুর সঙ্গে প্রয়োজন মতো পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে তা দিয়েই মুখ ধোয়া যায়।
মসুর ডালের বেসনের সঙ্গে পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়েও মুখ ধুতে পারেন।
চালের গুঁড়া একটু খসখসে হলেও এটি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করার জন্য ভালো উপকরণ। এটি দিয়ে স্ক্র্যাবিংয়ের কাজও চলে। চালের গুঁড়ার সঙ্গে পানি বা গোলাপজল মিশিয়ে তা দিয়ে রোজই মুখ ধোয়া যায়। চাইলে চালের গুঁড়ার সঙ্গে মধুও মেশাতে পারেন মুখ ধোয়ার জন্য।
গোলাপজলে মুখ ধোয়া
ফেসওয়াশের আরেক বিকল্প গোলাপজল। গোলাপজলে ত্বক হয় সতেজ। তুলার প্যাডে গোলাপজল নিয়ে তা দিয়ে মুখ ঘষে নিন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আবার চাইলে খানিকটা পানি নিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ গোলাপজল মিশিয়ে মুখে ঝাপটা দিতে পারেন চোখ দুটি বুজে। গোলাপজলের ঘ্রাণ যাঁদের পছন্দ নয়, তাঁরা চাইলে গোলাপজলকে আরও পাতলা করতে সমপরিমাণ গোলাপজল আর পানির মিশ্রণও তৈরি করতে পারেন। পানিমিশ্রিত গোলাপজলের পর আর পানি দিয়ে মুখ ধোয়ার প্রয়োজন নেই।
যেভাবে মুখ ধোবেন
ফেসওয়াশ লাগানো বা মুখের ত্বক মালিশের সময় ত্বককে নিচ থেকে ওপরের দিকে টানুন। এতে ত্বকের টোনিং হয়, ত্বক টান টান থাকে। অথবা চাইলে বৃত্তাকার গতিতেও আঙুল ঘোরাতে পারেন। ঘড়ির কাঁটার দিকে তিন থেকে পাঁচবার মালিশ করুন, ঠিক বিপরীত গতিতে আরও তিন থেকে পাঁচবার। এতে যেমন টোনিং হয়, টান টান ভাব বজায় থাকে, তেমনি ত্বকে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়।
রোজ করা যাবে না
স্ক্র্যাব, ফেসপ্যাক কিংবা ফেসমাস্ক মুখের জন্য ভালো হলেও এগুলোর কোনোটিই প্রতিদিন করা যাবে না। স্ক্র্যাব আর ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন। ফেসপ্যাক সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করাই ভালো। এগুলোর মধ্য থেকে একাধিক প্রসাধন একই দিনে প্রয়োগ করা উচিত নয়।
মুখ ধোয়ার পর
মুখ ঘষে মুছবেন না। মুখে নরম তোয়ালে আলতো করে স্পর্শ করিয়ে নিন। তাহলে মুখে আর পানি থাকবে না। ভেজা ভাব থেকে যাবে তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যেই ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। সেটিও বেছে নিন ত্বকের ধরন বুঝে। ফেসওয়াশ–জাতীয় উপকরণ ব্যবহার করলে ময়েশ্চারাইজার আবশ্যক। আবার শুধু পানি দিয়ে মুখ ধুলেও কারও কারও ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন হবে।