প্রচণ্ড গরমে সুস্থ থাকতে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ত্বকের সুস্থতার প্রতিও বাড়তি খেয়াল রাখুন। নইলে ত্বক হয়ে পড়বে নিষ্প্রাণ। গরমে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে পর্যাপ্ত। তাতে ত্বকের কোষও থাকবে সতেজ। ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি যেমন পূরণ করতে হবে, তেমনি ঘামে চিটচিটে হয়ে যাওয়া ত্বক পরিষ্কারও রাখতে হবে ঠিকঠাক। তবেই ত্বক থাকবে সুস্থ, উজ্জ্বল।
ফলে পানি, ফলেই পুষ্টি
ফল খেতে হবে রোজ। তরমুজ, বাঙ্গি, আপেল, আনারস, নাশপাতি, পেয়ারা, জামরুল, জাম্বুরা, হানিডিউ, শসা, গাজর—রোজকার খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন এসব ফল। কাজের ফাঁকে ক্ষুধা মেটাতে অন্য কোনো নাশতার আয়োজন না করে পানি, ফল বা ফলের রস খাওয়া যেতে পারে। ফল ও ফলের রসে মিটবে পানির চাহিদা, পাওয়া যাবে নানা পুষ্টি উপাদান। তবে ফলের রস বা অন্যান্য পানীয় গ্রহণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন, তাতে যেন চিনি যোগ করা না থাকে। আরও মনে রাখতে হবে, ঘরে তৈরি পানীয়ই স্বাস্থ্যকর। আবার যাঁরা শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে সময় যাপন করেন, তাঁদেরও কিন্তু পানি ও তরল খাবার খেতে হবে ঠিকঠাক। প্রচণ্ড গরমে পানির চাহিদা মেটানো প্রসঙ্গে এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শম্পা শারমিন খান।
যেভাবে ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখবেন
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা বলেন, ঘাম, ধুলাবালু ও দূষিত পরিবেশের অন্য যেসব উপাদান ত্বকের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেগুলোর প্রভাব থেকে বাঁচতে সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার করা ভীষণ জরুরি। ত্বক পরিচ্ছন্ন রাখার উপায়ও জানালেন তিনি—
শসার রস নিন এক টেবিল চামচ। সঙ্গে যোগ করুন দুই ফোঁটা লেবুর রস। ফেসওয়াশের বিকল্প হিসেবে প্রতি বেলায় ব্যবহার করতে পারেন এই মিশ্রণ। অবশ্য প্রতিবেলা শসার রস করে নেওয়া সম্ভব না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডিপফ্রিজের বরফের ছাঁচে শসার রস ঢেলে রেখে দিতে পারেন। প্রতি বেলা একেকটি কিউব বের করে মুখ হালকাভাবে ঘষে পরিষ্কার করে নিতে পারবেন।
সপ্তাহে এক দিন ত্বকের মৃত কোষ পরিষ্কার করতে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন প্রাকৃতিক স্ক্রাব।
যেভাবে ত্বক উজ্জ্বল রাখবেন
জারা’স বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও রূপবিশেষজ্ঞ ফারহানা রুমি জানালেন ঘরোয়া উপকরণ দিয়ে সহজে ত্বকের যত্ন নেওয়ার নিয়ম—
শসার রস নিন ২ চা-চামচ, সঙ্গে ১ চা-চামচ টক দই, ১ চা-চামচ বেসন আর ১ চা-চামচ মধু। মাস্কটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলে ত্বকের দাগছোপও কমে আসবে। ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত।
চন্দনের গুঁড়ার সঙ্গে প্রয়োজনমতো তরল দুধ যোগ করুন, যাতে মিশ্রণটি ফেসপ্যাকের মতো ঘন হয়। এই প্যাক সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে বলিরেখাও কমে আসে।
গুঁড়া দুধ নিন ১ টেবিল চামচ। সমপরিমাণ পানি দিয়ে গুলিয়ে নিন। মসুর ডালের বেসন নিন ১ টেবিল চামচ। সঙ্গে নিন ২ টেবিল চামচ ডাবের পানি আর আধা চা-চামচ মধু। মিশ্রণটি লাগিয়ে রাখতে হবে ২০ মিনিট। রাহিমা সুলতানা জানালেন, এই প্যাক ব্যবহারে ত্বক হয়ে উঠবে সতেজ, রোদে পোড়া দাগও দূর হবে। ব্যবহার করতে হবে সপ্তাহে একবার।
যেভাবে মৃত কোষ দূর করবেন
বিশেষজ্ঞদের থেকে জেনে নেওয়া যাক প্রতি সপ্তাহে ত্বকের মৃত কোষ দূর করার কিছু উপায়—
চালের গুঁড়া ও গাজরের রস নিন এক টেবিল চামচ করে। সঙ্গে নিন সিকি চা-চামচ নারকেল তেল আর দুই ফোঁটা লেবুর রস। পাঁচ মিনিট ধরে ত্বকে আলতোভাবে মালিশ করুন এই মিশ্রণ। এরপর ধুয়ে ফেলুন।
এক টেবিল চামচ বেসন, চার থেকে পাঁচ চা-চামচ কাঁচা দুধ আর দুই চা-চামচ মধু দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। মিশ্রণটি মুখে লাগান। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর কুসুমগরম পানি হাতে নিয়ে বৃত্তাকার গতিতে আলতোভাবে মালিশ করে মিশ্রণ উঠিয়ে ফেলতে হবে। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ধীরে ধীরে রোদে পোড়া ভাবও কমে আসবে।
খেয়াল রাখুন
l ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিতে নানা উপকরণই প্রয়োগ করতে পারেন। তবে কোনো উপাদানে অ্যালার্জি থাকলে সেটি বাদ দিয়ে অন্য উপকরণগুলো দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন।
l গরমের সময়টায় ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে অবহেলা করবেন না।
l বাইরে যাওয়ার আগে নিয়মমাফিক সানস্ক্রিনসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে।
l মাঝেমধ্যে মুখে পানি স্প্রে করতে পারেন।