সি টি এম! ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং—ত্বকের যত্নের প্রধান সূত্র। এ সূত্র মানলেই পাওয়া যায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল সুন্দর ত্বক। তবে বেশির ভাগ সময় দেখা যায়, আমাদের ত্বকচর্চার রুটিন ক্লিনজিং আর ময়েশ্চারাইজিংয়ে সীমাবদ্ধ থাকে। টোনিং সম্পর্কে জানার পরও অনেকে সেটা মানেন না বা এড়িয়ে যান। অথচ এ টোনিংই সুস্থ, মসৃণ, টান টান ত্বকের চাবিকাঠি।
টোনার ত্বককে গভীর থেকে পরিষ্কার করে। এটি ত্বকের বাড়তি পুষ্টি জোগায় এবং ত্বকের পিএইচ ব্যালান্স বজায় রাখে। এ ছাড়া রোমকূপ সংকুচিত করে ব্রণের প্রবণতা কমাতে সহায়তা করে। টোনিং ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ রোধ করে। অন্যদিকে এটি ত্বকের বলিরেখা কমাতেও বেশ উপকারী। এ জন্য ত্বকচর্চায় টোনিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
টোনারের সুনামের পাশাপাশি বেশ বদনামও কিন্তু রয়েছে। বাজারে যে ধরনের টোনার পাওয়া যায়, তাদের বেশির ভাগই অ্যালকোহলভিত্তিক। অ্যালকোহল ত্বকের সব তেল শোষণ করে ফেলে এবং ত্বককে বেশি শুষ্ক করে দেয়। এ ধরনের টোনার ব্রণের মতো সমস্যাগুলোকে আরও খারাপ করে তোলে। তবে সুখের বিষয় এই যে এখন ওয়াটার ও গ্লিসারিনভিত্তিক টোনারও পাওয়া যাচ্ছে। যাঁরা ত্বকের যত্নের রুটিনে টোনার যুক্ত করতে চাইছেন, তাঁরা ত্বকের ধরন বুঝে এ দুই ধরনের টোনার বেছে নিতে পারেন।
যাঁরা ত্বকের যত্নের রুটিনে টোনার যুক্ত করতে চাইছেন, তাঁরা ত্বকের ধরন বুঝে টোনার বেছে নিতে পারেন।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য গ্লাইকোলিক, স্যালিসাইলিক অ্যাসিডযুক্ত টোনার ভালো। এ দুই উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে। আর রোমকূপ সংকুচিত করতে চাইলে নায়াসিনামাইড-যুক্ত টোনার ব্যবহার করা যায়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য অবশ্যই হায়ালুরনিক অ্যাসিড, ভিটামিন ই ও গ্লিসারিনযুক্ত টোনার বেছে নিতে হবে। এ উপাদানগুলো ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।
মিশ্র ত্বকের জন্য হায়ালুরনিক, স্যালিলাইলিক বা ল্যাকটিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ টোনার এবং ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য আলফা হাইড্রক্সি বা গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত টোনার সবচেয়ে ভালো। আর রোদেপোড়া এবং সদ্য বলিরেখা পড়া ত্বকে ভিটামিন ই, সি, হায়ালুরনিক ও গ্লাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত টোনার ব্যবহার করা উচিত।
চাইলে ঘরেই বানানো যায় টোনার। এ জন্য খুব বেশি কিছু লাগে না। হাতের কাছে পাওয়া যায়, এমন কিছু উপাদান দিয়ে সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন আপনার ত্বকের উপযোগী টোনার।
গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি–ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি ফ্রি র্যাডিক্যাল প্রতিরোধ করে। গ্রিন টি টোনার বানানোর জন্য প্রয়োজন কোয়ার্টার কাপ গ্রিন টি এবং তিন-চার ফোঁটা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল। দুটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে তুলার প্যাড বা মিস্ট বোতলের সাহায্যে মুখে লাগাতে হবে।
এই ‘পাওয়ার কম্বো’ দিয়ে বানানো অ্যান্টি–এজিং টোনার ত্বকে সূর্যের কারণে হওয়া ড্যামেজ কমাতে পারে। সেই সঙ্গে চোখের নিচের ভাঁজ, ইনফ্ল্যামেশন, ত্বকের লালচে ভাব কমানোর পাশাপাশি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে। আধা কাপ গ্রিন টি ও আধা কাপ বেদানার রস একসঙ্গে মেশালেই তৈরি এই টোনার।
আধা কাপ অ্যাপল সিডার ভিনেগার, আধা কাপ পানি ও এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে তৈরি করা যায় এই সহজ টোনার। তৈলাক্ত ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করা এবং পিএইচ ব্যালান্স ঠিক রাখতে এই অ্যাসিডযুক্ত টোনার ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের আর্দ্রতা বাড়াতে এবং ক্লিনজিংয়ের পর পিএইচ ব্যালান্স ঠিক করতে গোলাপজল বেশ কার্যকর। এক কাপ গোলাপজলের সঙ্গে চার চামচ লেবুর রস মিশিয়ে তৈরি করতে পারেন গোলাপজলের টোনার। তবে ত্বক শুষ্ক হলে লেবুর রস এড়িয়ে শুধু গোলাপজল লাগালেই চলবে।
ত্বকের আর্দ্রতা বাড়িয়ে তারুণ্য ধরে রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। আর এই অ্যালোভেরার টোনার বানাতে প্রয়োজন কেবল আধা কাপ অ্যালোভেরা জেল ও আধা কাপ গোলাপজল। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে এর সঙ্গে মেশাতে পারেন আধা কাপ শসার রস। স্পর্শকাতর ত্বক ছাড়া সব ত্বকেই এই টোনার ব্যবহার করা যাবে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে চাল ধোয়া পানির টোনার লাগাতে পারেন। এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ পানি ও তিন টেবিল চামচ চাল ধোয়া পানি মেশালেই তৈরি এই টোনার।
তিন টেবিল চামচ ডাবের পানি ও আধা চা–চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশিয়ে ফেলুন। জি, তৈরি হয়ে গেছে আপনার ডাবের পানির টোনার। ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা থাকলে এই টোনার ব্যবহারে বেশ উপকার পাওয়া যাবে।
বাড়তি উপকারের জন্য সব কটি টোনারেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল যুক্ত করতে পারেন।
ত্বকে পানি লাগানোর পরপরই টোনার লাগাতে হবে।
টোনার লাগানোর জন্য তুলার প্যাড বা মিস্ট বোতল ব্যবহার করুন।
টোনার লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলবেন না। পাঁচ থেকে সাত মিনিট অপেক্ষা করে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ফেলুন। তাহলে যে উদ্দেশ্যে টোনার লাগানো, সেটা পূরণ হবে।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, হ্যালো গ্লো, ফেমিনা