ভালোবাসাহীন জীবন আর লবণহীন খাবারের ভেতর খুব একটা তফাত নেই। লবণ ছাড়া খাবার খাওয়ার কথা আমরা কেউ ভাবতেও পারি না। এমনকি কখনো কখনো মিষ্টি খাবারের মিষ্টতা বাড়াতেও লবণের ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু শরীরের সুস্থতার জন্য অনেক সময় খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারে লাগাম টানতে হয়। চিকিৎসকেরাই কাঁচা লবণের নাম দিয়েছেন ‘সাদা বিষ’। শরীরের জন্য ক্ষতিকর হলেও লবণ কিন্তু সৌন্দর্যচর্চায় বেশ ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।
নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কসমেটিক অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ইন ডারমাটোলজিস্টের ডিরেক্টর যশুয়া জেইকনার বলেন, প্রাকৃতিক লবণের মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়ামের মতো খনিজ, যা ইনফ্ল্যামেশন বা প্রদাহ হ্রাস করে ত্বককে উজ্জ্বল ও সতেজ করে তুলতে সহায়তা করতে পারে। এ ছাড়া সামুদ্রিক লবণ এক্সফোলিয়েটর হিসেবে খুব ভালো এবং এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান।
আপাতত জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে আমাদের রূপ–রুটিনে লবণের ব্যবহার করা যেতে পারে—
লবণের অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান ত্বকের বিভিন্ন প্রদাহের উপশম করতে বেশ কার্যকর। এ ছাড়া এর খনিজ উপাদানগুলো ত্বকে আর্দ্রতা সঞ্চার করে ও টানটান রাখে।
সুন্দর উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক পেতে দুই চা–চামচ লবণের সঙ্গে চার চা–চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন। পরিষ্কার শুকনো ত্বকে মিশ্রণটি মেখে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে আঙুল দিয়ে আলতো করে ঘষে ঘষে মুখ ধুয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি সপ্তাহে অন্তত একবার ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
এটি ত্বকের ধুলাময়লা শুষে নেয় এবং সেবাম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনে। আর এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ব্রণনাশক হিসেবে কাজ করে। এর জন্য ঘরেই বানিয়ে ফেলুন লবণের টোনার। এক কাপ কুসুম গরম পানিতে কয়েক চিমটি ইপসম বা খাবার লবণ মেশান। তুলা বা স্প্রে বোতলের সাহায্যে ত্বকে ব্যবহার করুন।
লবণ প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েন্ট, যা মৃত কোষ দূর করে ত্বক নরম করে থাকে। এক্সফোলিয়েন্ট বডি স্ক্রাব বানাতে লাগবে কোয়ার্টার কাপ লবণ আর আধা কাপ জলপাই বা নারকেল তেল। এটি স্ক্রাব অনেক দিন রেখে ব্যবহার করা যাবে। গোসলের সময় পুরো শরীরে আলতো করে মেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলেই চলবে।
ত্বক থেকে বয়সের ছাপ তাড়াতে আমরা কত টাকা খরচ করে অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করি। অথচ আমাদের কিচেনে থাকা লবণ দিয়েই এর সমাধান সম্ভব। তাই বলিরেখাকে বলি দিতে ত্বকে লবণ লাগান। জলপাই তেলের সঙ্গে মিহি গুঁড়া করে লবণ মিশিয়ে ত্বকের যেসব জায়গায় বলিরেখা দেখা দিয়েছে, সেখানে আপার মোশনে (উপরের দিকে) ম্যাসাজ করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন অন্তত ১০ মিনিট ম্যাসাজ করলেই চলবে। এতে বলিরেখা অনেকখানি দূর হবে এবং নতুন বলিরেখা হওয়া প্রতিরোধ করবে।
এটি ফ্লোরাইডের প্রাকৃতিক উৎস। তাই ঝকঝকে সাদা দাঁতের জন্য লবণ দিয়ে দাঁত মাজুন। এতে মুখের ব্যাকটেরিয়াও দূর হবে।
চুলের যাবতীয় সমস্যা এক লবণ দিয়েই দূর করতে পারেন। প্রাকৃতিক খুশকিনাশক হিসেবে লবণের জুড়ি মেলা ভার। এটি মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে। এ ছাড়া মাথার ত্বকে জমে থাকা ময়লা ও জীবাণু দূর করে। লবণের ক্যালসিয়াম চুলের গোড়া মজবুত করে। চুলে লবণ বেশ কয়েকভাবেই ব্যবহার করা যায়। চুলের গোড়া মজবুত করতে বা খুশকি সারাতে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। আবার শ্যাম্পুর সঙ্গে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এ জন্য এক কাপ শ্যাম্পুর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে সংরক্ষণ করুন।