রোদে ত্বক ভালো রাখবেন কীভাবে

গ্রীষ্ম আসতে এখনো মাসখানেক বাকি আছে। কিন্তু শুরু হয়ে গেছে রোদের দাবদাহ। রোদের তাপে বেশ অস্থির হয়ে উঠেছি আমরা ইতিমধ্যেই। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই যেন আগুনের হলকা লাগছে পুরো শরীরে। বাইরে বের হওয়ার আগে এবং ফিরে একাধিক বার স্নান করেও একটু আরাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ত্বক ও চুল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোদ এবং তাপ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিষয়। রোদ কড়া বা হালকা যাই হোক না কেন, মৌসুমটা শীত হোক বা গ্রীষ্ম, সূর্যের তাপ কিংবা অতি বেগুনি রশ্মি সব সময়ই ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই নিজেকেই সাবধানে সবদিক রক্ষা করে চলতে হবে। তার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ রাশেদ মোহাম্মদ খান জানিয়েছেন রোদ ত্বকের কী ক্ষতি করে।

রোদ ত্বকের যেসব ক্ষতি করে

  • কড়া রোদে ঘাম হয় বেশ। আর এ থেকে ঘামাচি বা চুলকানি হতে পারে।

  • অনেক সময় রোদের কারণে ত্বকে ছত্রাক সংক্রমণও হতে পারে।

  • রোদ থেকে সুরক্ষার পদ্ধতি না নিলে ত্বকে একজিমা হতে পারে।

  • সূর্যরশ্মি ত্বকে মেলানিনের (কালো রঞ্জক) মাত্রা বাড়িয়ে ত্বকের রং কালো করে দেয়।

রোদে পুড়ে ত্বকের এ ধরনের ক্ষতি এড়াতে অধ্যাপক রাশেদ কিছু সহজ কৌশল জানিয়েছেন।

ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পানির বিকল্প নেই

রোদে পুড়ে ত্বকের ক্ষতি এড়াতে যা করবেন

  • রোদ যাই থাক, দিনের বেলা ঘর থেকে বের হওয়ার ১০-১৫ মিনিট আগে ত্বকে সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করা উচিত। বাজারে এখন এসপিএফ বা সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর যুক্ত ক্রিম, লোশন, পাউডার, লিপ বাম, স্প্রে ইত্যাদি প্রসাধনী পাওয়া যায়। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো ব্যবহার করুন।

  • তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ম্যাট ধরনের সানস্ক্রিন ও শুষ্ক ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজার সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। আর স্বাভাবিক কিংবা মিশ্র ত্বকের জন্য ‘অল স্কিন টাইপ’ সানস্ক্রিন ব্যবহার করা যায়।

  • ত্বক সব সময় ঠান্ডা ও পরিষ্কার রাখতে হবে। তাই প্রতিদিন ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করতে হবে।

  • ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পানির বিকল্প নেই। দিনে তিন-চার লিটার পানি আধা গ্লাস করে একটু পর পর পান করতে হবে। এ ছাড়া যেকোনো ফলের রস পান করাও উপকারী।

  • রোদ থেকে রক্ষা পেতে প্রসাধনী ব্যবহারে এমনকি রোদে পোড়া ভাব দূর করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারেও ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এ ধরনের সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

ত্বকের ধরন অনুযায়ী সানস্ক্রিন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন রূপবিশেষজ্ঞরা। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে এবং রোদ থেকে ঘরে এসে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

রোদে যাওয়ার আগে যা করবেন

ঘর থেকে বের হওয়ার আগে স্নান করে নেওয়া ভালো। এ সময় যেহেতু প্রচুর ঘাম হয় তাই ঘাম থেকে দুর্গন্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। এ জন্য পানিতে কয়েক ফোঁটা বেনজয়েন এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে স্নান করলে ঘামের দুর্গন্ধ হবে না এবং রোদে ত্বক কালচেও হবে না। ওষুধের দোকানে বা সুপারশপে এই তেল পাবেন। চার ঘণ্টা পর পর ল্যাভেন্ডার অয়েল সমৃদ্ধ ওয়েট টিস্যু দিয়ে ত্বক মুছে নিতে হবে।

রাতে ভেষজ প্যাক ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে

রোদের পোড়া ভাব দূর করতে

যেকোনো ধরনের ত্বকের জন্যই অ্যালোভেরা পেস্ট উপকারী। রাতে টকদই, ডিমের সাদা অংশ ও ময়দার মিশ্রণ প্যাক হিসেবে ত্বকে ব্যবহার যেতে পারে। কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এ ছাড়া সুজি হালকা ভেজে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করা যায়। এটি স্ক্রাবের কাজও করবে। স্ট্রবেরি, টকদই ও ময়দার মিশ্রণ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো। আর শুষ্ক ত্বকের জন্য ব্যবহার করা যাবে দুধের সর, যেকোনো বাদাম, মধু ও সামান্য চিনির মিশ্রণ।

যাদের ত্বক পাতলা, তাদের নিতে হবে বাড়তি যত্ন। এ ধরনের ত্বকে চামড়া ভেদ করে শিরার রেখা চোখে পড়ে। অনেকের পাতলা ত্বক রোদে গেলে অল্পতেই লাল হয়ে যায়। ফলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হয়। ত্বক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাহানারা ফেরদৌস খান জানান, যাঁদের ত্বক পাতলা তাঁরা যেন বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত যতটা সম্ভব রোদ এড়িয়ে চলেন। আর রোদে বের হলে অবশ্যই ত্বক বুঝে সানব্লক ব্যবহার করতে হবে এবং সঙ্গে রাখতে হবে ছাতা।

মুখে মাস্ক থাকতেই হবে

বাইরে থাকলে দুই ঘণ্টা পর পর নতুন করে ত্বকে সানব্লক ব্যবহার করতে হবে। কিছু ফেস পাউডারও সানব্লকের কাজ করে। যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত তাঁরা এমন পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। রোদচশমা এবং হ্যাটজাতীয় বড় টুপি ব্যবহার করতে হবে, যেন মুখের চোয়াল ও এর আশপাশের স্থানে রোদ না লাগে। এরপরও যদি ত্বক লাল হয়ে জ্বালা করে, তবে বরফ ঘষতে হবে অথবা ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে।

পোশাক পরতে হবে সুতি, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের

রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানান, চড়া রোদে বের হলে কেমন মেকআপ ব্যবহার করতে হবে সে বিষয়ে। দিনের রোদে তরল ফাউন্ডেশন ব্যবহার না করাই ভালো বলে জানান তিনি। ওয়াটার বেজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। অথবা মিনারেল ফেস পাউডারও ব্যবহার করা যায়। হালকা আইশ্যাডো আর কাজলই সাজের জন্য যথেষ্ট। চোখে শ্যাডো ব্যবহার না করলেও হয়। মুখ ও ঘাড়ের গড়ন বুঝে চুলে বেণি বা ঝুঁটি করতে হবে। পোশাক পরতে হবে সুতি, ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের। আর মুখে মাস্ক থাকতেই হবে। পোশাকের সঙ্গে ম্যাচ করে বা কনট্রাস্ট রঙের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।