শিরোনাম দেখে কেউ ভাবতে পারেন আটা-ময়দা মাখা ভূতের দল! তবে রূপচর্চার সহজ এক উপকরণ বেসন। রান্নার উপকরণ হিসেবেই বহুল ব্যবহৃত হলেও রূপচর্চায় এর অবদান কোনো অংশে কম নয়। উপকারও নানাবিধ। সৌন্দর্যসচেতনেরা নানা কাজেই ব্যবহার করে থাকেন বেসন। এই উপকরণের সঠিক ব্যবহার ও তৈরির পদ্ধতি জেনে নিন বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে।
হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানালেন, ত্বককে লাবণ্যময় ও প্রাণবন্ত করে তুলতে বেসন উপকারী। বয়সের ছাপ কমাতে, ত্বক পরিষ্কার করতে, ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে এবং তেলের প্রকোপ কমাতে মসুর ডালের বেসন কাজে লাগানো যায় বলে জানা গেল। জানা গেল বেসনের আরও নানাবিধ ব্যবহার।
নানা কাজের ফেসপ্যাক
* ১ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ৪ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ এবং পরিমাণমতো বাদাম তেল মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ভালো করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন করে এ প্যাক ব্যবহার করুন। ত্বক উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
* ১ চা-চামচ বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ দই মিশিয়ে নিন। সামান্য হলুদও দিতে পারেন এতে। মুখে লাগানোর ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করুন।
* ১ চা-চামচ বেসন পেস্টের সঙ্গে সমপরিমাণ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মুখে ঘষার পর হালকা গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে এক দিন করে ব্যবহারে ধীরে ধীরে বলিরেখা কমে আসবে। শুষ্কতাও কমে যাবে।
* পরিমাণমতো বেসনের সঙ্গে অল্প দুধ মিশিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একবার এ প্যাক ব্যবহার করুন। এই প্যাক ত্বকের মৃত কোষের স্তর সরিয়ে ত্বককে করে তোলে প্রাণবন্ত ও সজীব। বয়সের ছাপ কম পড়ে।
ফেস মাস্ক তৈরি
বেসনের সঙ্গে সমপরিমাণ গাঁদা ফুল মিশিয়ে ভালো করে বেটে নিন। মুখে ২০ মিনিট রাখুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের শুষ্কতা কমাতে ও নরম করতে এই মাস্ক কাজে লাগবে। ব্রণের প্রকোপও কমবে। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করুন।
দাগ ফাটা ত্বকে
সমপরিমাণ বেসন, হলুদ ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। শুধু ব্রণের স্থানে ব্যবহার করুন প্রতিদিন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণ কমে আসে। ভালো হয়ে গেলে আর ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।
বেসন, গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এক দিন পর ব্যবহারে পোড়া দাগ কমে আসবে।
বেসন পেস্টের সঙ্গে অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মেছতার ওপর লাগান। ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করুন। দাগ কমে এলে ধীরে ধীরে প্যাক ব্যবহারও কমিয়ে আনুন। যেমন সপ্তাহে একবার, তারপর ১৫ দিনে একবার, তারপর মাসে একবার।
যেকোনো ক্ষতের দাগ (যেমন ব্রণ,বসন্ত) দূর করতে বেসন ও কচি ডাবের পানি একসঙ্গে মিশিয়ে দাগের ওপর লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে ফেলুন। ধীরে ধীরে দাগ কমে এলে প্যাক ব্যবহার কমিয়ে আনুন মেছতার প্যাকের মতো নিয়মে।
বেসন পেস্ট ত্বকের ফেটে যাওয়া অংশে লাগিয়ে রাখুন। ২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক দিন ব্যবহার করুন।
বেসন, কাঠবাদাম তেলের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে চক্রাকারে মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন। সর্বোচ্চ ১০ মিনিট মালিশ করুন। এক দিন অন্তর এ প্যাক ব্যবহার করতে হবে। অবাঞ্ছিত লোম কমে আসবে।
ফেসওয়াশের পরিবর্তে
১ টেবিল চামচ বেসন পেস্টের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ দুধ, সামান্য হলুদ এবং ৩ ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে নিয়ে ফেসওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন প্রতিদিন, একটি বেলায়।
মসুর ডালের বেসন তৈরি ও সংরক্ষণ
২ কাপ মসুর ডাল এবং ২ টেবিল চামচ চাল (ভাতের চাল) ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিন। চাল-ডাল একসঙ্গে না মিশিয়ে আলাদা করে ধুয়ে শুকালে সহজে শুকানো যাবে। ফুড প্রসেসর বা গ্রাইন্ডারে ভালোভাবে গুঁড়া করে নিন। তারপর ভালো করে চালনিতে চেলে নিন। এই বেসন অনেক দিন পর্যন্ত (প্রায় ৬ মাস) বায়ুরোধী পাত্রে মুখ বন্ধ করে সংরক্ষণ করা যায়। ফ্রিজে রাখলে ভালো। ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে মাঝেমধ্যে রোদে দিন (সপ্তাহে এক দিন রোদে দিতে পারেন)। বয়াম থেকে বেসন নেওয়ার সময় ভেজা চামচ ব্যবহার করবেন না।