প্রকৃতির সুরক্ষায় বিশ্বজুড়ে কাজ করছে হাজারো সংগঠন, চলছে নানা আন্দোলন। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বাজারে ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি বিউটি রুটিন’, তথা পরিবেশবান্ধব রূপচর্চার বিষয়টি এখন আলোচনার শীর্ষে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রূপচর্চাকে পরিবেশবান্ধব করবেন কীভাবে? এর আগে জেনে নেওয়া প্রয়োজন পুরো বিশ্বের বিউটি ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশের ওপর কেমন প্রভাব ফেলছে।
পরিসংখ্যানমতে, প্রতিবছর আট মিলিয়ন টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে নিক্ষেপিত হয়। যার ৪০ শতাংশই প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যবহৃত। আর বিউটি ইন্ডাস্ট্রি প্রতিবছর ১২০ বিলিয়ন কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করছে শুধু প্যাকেজিংয়ের জন্য। পরিবেশের সুরক্ষায় তাই এখনই সময় ইকো-ফ্রেন্ডলি বিউটি রুটিনে মনোযোগ দেওয়া। পরিবেশবান্ধব রূপচর্চায় কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, এবার আসা যাক সে প্রসঙ্গে।
পরিবেশবান্ধব রূপচর্চায় প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হলো, মনের সঙ্গে বোঝাপড়া। অর্থাৎ, মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে। আপনি রূপচর্চায় পরিবেশবান্ধব হবেন। সে জন্য যে কাজগুলো করা প্রয়োজন, তা করবেন। প্রথম ধাপের পরই শুরু হবে আসল চর্চা।
দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন করতে হবে সঠিক পণ্য। অর্থাৎ, সৌন্দর্যচর্চায় এমন পণ্য নির্বাচন করুন, যা পরিবেশবান্ধব এবং প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। আজকাল পণ্যের মোড়কেই লেখা থাকে পণ্যটি কী উপাদানে তৈরি। সাবান, শ্যাম্পু, হেয়ার রিমুভার, মেকআপের নানা উপকরণ থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্যে কী পরিমাণ কেমিক্যাল এবং প্রাকৃতিক নির্যাস ব্যবহার করা হয়েছে, তা দেখে কেনাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
কেমিক্যাল ফর্মুলার অজস্র বিউটি পণ্য রয়েছে বাজারে। বিশেষত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যগুলো বর্জন করতে পারেন। এ ছাড়া প্যারাফিন অয়েল, প্রোপাইলিন গ্লাইকল ও ইথাইনল ব্যবহার করা হয় বিভিন্ন পণ্যে। প্রশ্ন হতে পারে, এর বদলে কোন ধরনের পণ্য নির্বাচন করব? সেটাও সহজ, ব্যবহার করতে পারেন মোম, কোকো বাটার ও ভেজিটেবল তেলসমৃদ্ধ পণ্য।
রিসাইকেবল প্যাকেজিং বা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মোড়কজাত পণ্য বাছাই করাও পরিবেশবান্ধব রূপচর্চার একটি অন্যতম মাধ্যম হতে পারে। জনসন অ্যান্ড জনসনের তথ্যমতে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত শুধু আমেরিকাতেই ৫৫২ মিলিয়ন শ্যাম্পুর বোতল তৈরি হয়েছে। রূপচর্চায় পরিবেশবান্ধব হতে চাইলে প্লাস্টিক মোড়কের পণ্য বর্জন করুন। এর বদলে কাচের জারসমৃদ্ধ বোতলের পণ্য রাখুন পছন্দের তালিকায়। এ ছাড়া পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মোড়কের বিউটি প্রোডাক্ট দেখে কিনতে পারেন।
বিউটি প্রোডাক্টের পাশাপাশি বিউটি টুলস বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য বা ধুয়ে ব্যবহার করা যায়, এমন কটন প্যাডস ও ওয়াইপস নির্বাচন করতে পারেন। পাশাপাশি পুরোনো টাওয়েল দিয়েও বানিয়ে নিতে পারেন ওয়াইপস বা প্যাড। এতে অর্থ যেমন বাঁচবে, একই সঙ্গে প্রকৃতিরও সুরক্ষা দেবে। রেজার নির্বাচনে প্লাস্টিক রেজারের বদলে স্টেইনলেস স্টিল সেফটি রেজার থাকতে পারে তালিকায়। এ ছাড়া মেকআপ ব্রাশ, অ্যাপ্লিকেটরস ও হেয়ারব্রাশ কেনার সময় প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, যেমন বাঁশ বা কাঠের পণ্য কিনতে পারেন। প্রাণীজ পশমসমৃদ্ধ ব্রাশগুলো বর্জন করাই শ্রেয়।
বাজার থেকে বিভিন্ন সৌন্দর্যচর্চার পণ্য না কিনে বা পারলারে গিয়ে সময় ও অর্থ খরচ না করে ঘরোয়া উপাদানে সৌন্দর্যচর্চায় মনোনিবেশ করতে পারেন। এটিও হতে পারে পরিবেশবান্ধব রূপচর্চার প্রধান পদক্ষেপ। ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে ত্বক ও চুলের যত্ন নেওয়াটা আজকাল আর কঠিন বিষয় নয়। এ বিষয়ে অনলাইনে পাবেন হাজারো তথ্য এবং ইউটিউবে পাবেন অজস্র ভিডিও। সুতরাং, দেরি না করে আজই শুরু করতে পারেন।
নিজেকে সুন্দর করে তুলতে বা উপস্থাপন করতে আমরা সবাই চাই। এ জন্য নিয়মিত রূপচর্চার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু তাই বলে অনেক পণ্য দিয়ে রূপচর্চারও কোনো মানে নেই। সহজতরভাবেও রূপচর্চায় মনোনিবেশ করা যায়। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্লিনজার, টোনার, ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করার পরামর্শ দেন সৌন্দর্যবিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে অর্থসাশ্রয় যেমন হবে, তেমনি পরিবেশবান্ধব বিউটি রুটিনের চর্চাও হবে।