রূপচর্চা

প্রকৃতির ছোঁয়ায় সুন্দর ত্বক

প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান দিয়ে রূপচর্চা ত্বককে রাখবে সজীব। মডেল: রুশি, কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ
প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান দিয়ে রূপচর্চা ত্বককে রাখবে সজীব। মডেল: রুশি, কৃতজ্ঞতা: হার্বস, ছবি: সুমন ইউসুফ

প্রকৃতিতে বইছে শীতের হাওয়া। চারপাশে ধুলাবালুসহ শুষ্ক আবহাওয়া। এর প্রভাব পড়ছে ত্বকের ওপর। ফল—ত্বক হয়ে উঠছে রুক্ষ, খসখসে, প্রাণহীন। এ ছাড়া ত্বকে পড়ছে কালচে ছোপ ছোপ দাগ, ফুসকুড়ি, রোদে পোড়া ভাব এবং মরা কোষ জমে ত্বক হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য। এ জন্য শীতে ত্বকে চাই বাড়তি যত্ন। প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদান দিয়েই এ সময় ত্বক সুন্দর রাখা সম্ভব।
ভেষজ উপাদানে কোনো ক্ষতিকারক পদার্থ নেই। এগুলো হাতের কাছেই পাওয়া যায়। ফলে এসব উপাদান ব্যবহার করে সহজেই ত্বককে সুরক্ষিত ও সুন্দর রাখা যায়। এ কথাই বললেন আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। ত্বকের ধরন অনুযায়ী কিছু ভেষজ উপাদান ব্যবহারের নিয়মও জানালেন তিনি।

তৈলাক্ত ত্বক
 দুই টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে এক টেবিল চামচ টমেটো পেস্ট, এক চা–চামচ লেবুর রস এবং এক চা–চামচ মধু একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রেখে ২০ মিনিট পর হালকা কুসুম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
 এক চা–চামচ পরিমাণ ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা), এক চা–চামচ বাদাম তেল এবং দুটো ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপ একসঙ্গে মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে রেখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ভালো করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এসব উপাদান ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বককে রাখবে মসৃণ সুন্দর।

শুষ্ক ত্বক
 এক চা–চামচ দুধের সর, এক চা–চামচ কাঠবাদামের পেস্ট, আধা চা–চামচ কাঁচা হলুদ একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ভালো করে লাগিয়ে নিয়ে ২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি গভীর থেকে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে খুব ভালো কাজ করে।
 গোলাপের পাপড়ি বাটা ২ চা–চামচ, মধু ১ চা–চামচ এবং পরিমাণমতো কাঁচা দুধ নিয়ে সারা মুখে মাখুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির সঙ্গে ত্বককে কোমল ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।

স্বাভাবিক ত্বক
স্বাভাবিক ত্বকের যত্নে কোকো পাউডার এক টেবিল চামচ, গোলাপজল এক টেবিল চামচ, নারকেল তেল আধা টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে সারা মুখে মেখে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এ উপাদানগুলো ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
পাকা কলা এক টেবিল চামচ, লেবুর রস তিন–চার ফোঁটা এবং কাঁচা দুধ পরিমাণমতো নিয়ে মুখে মাখুন। ত্বক টানটান হয়ে এলে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। এ উপাদানগুলো গভীর থেকে ত্বক পরিষ্কার করে কালো ছোপ ছোপ দাগ কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।

প্রাকৃতিক উপাদানের তৈরি প্যাক ঘরেই বানানো যায়


শীতে নাজেহাল ত্বকের যত্ন
শীতে ত্বকের পরিচর্যার বিষয়ে হার্বসের ত্বক বিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি বলেন, এই মৌসুমে ত্বক অনেক বেশি নাজুক হয়ে পড়ে। এ কারণে চাই বিশেষ যত্ন। নিয়মিত যত্নসহকারে ত্বক পরিষ্কার করে, স্ক্রাবিং করতে হবে। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী পছন্দমতো একটি প্যাক ব্যবহার করতে হবে। তবেই ত্বক পাবে পরিপূর্ণ যত্ন এবং প্রয়োজনীয় উপাদান। জানালেন কিছু নিয়মকানুনও।

অতিরিক্ত শুষ্ক ত্বকের যত্নে
প্রথমে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। এবার ছোলার ডাল বা মুগ ডালের বেসন এক চা চামচ, চালের গুঁড়া এক চা চামচ এবং পরিমাণমতো দুধ দিয়ে সারা মুখ দুই মিনিট হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আলতো করে ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
এরপর একটা ডিমের কুসুম, এক চা চামচ বাদাম তেল, এক চা চামচ শঙ্খের গুঁড়া অল্প পানিতে ভালোমতো মিশিয়ে নিয়ে ত্বকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটির ব্যবহার শুষ্ক ভাব কমিয়ে ত্বককে মসৃণ ও কোমল করবে।

তৈলাক্ত ত্বক
কাঁচা দুধ, শসার রস পরিমাণমতো নিয়ে তুলার বল দিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে দুই বা তিন মিনিট রেখে ত্বক পরিষ্কার করে পানিতে ধুয়ে ফেলুন।

প্যাক: ডিমের সাদা অংশ, মুলতানি মাটি আধা চা চামচ, এক চিমটি কর্পূর, কয়েক ফোঁটা নারকেল তেল মিশিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে ধুয়ে ফেলুন।


মিশ্র ত্বক
পুদিনা পাতার রস তৈরি করে আগেই ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। মুখ পরিষ্কার করার আগে এর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস তুলা দিয়ে মুখে লাগিয়ে নিয়ে দুই মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে যেমন ত্বক পরিষ্কার হবে, তেমনি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে।
প্যাক: প্রথমে ঘৃতকুমারীর জেল বের করে নিয়ে ফুটন্ত পানিতে মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। তারপর এর সঙ্গে মটর অথবা মুগ ডালের বেসন এক টেবিল চামচ এবং তিন ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিয়ে মুখে লাগিয়ে নির্দিষ্ট সময় পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের দাগ মিশিয়ে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলবে।

স্বাভাবিক ত্বক
এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, আধা চা-চামচ কর্পূর তেল, কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে সারা মুখে মেখে পরিষ্কার করে নিন।

প্যাক: দুধের মধ্যে ভেজানো চন্দন ঘষে নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা কাঁচা হলুদের রস নিয়ে পুরো মুখে মেখে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে।