ত্বকে মৃত কোষ হওয়ার কারণ অনেক। দূষণ, ধুলাবালি ও মেকআপ—এই নেতিবাচক তালিকার ওপরে। সাধারণ নিয়মে মুখ ধুয়ে নিলেও লোমকূপের গোড়ায় ময়লা জমে থাকে। স্ক্রাব করলে লোমকূপ থেকে সেই ময়লাগুলো উঠে গিয়ে ত্বকের অনুজ্জ্বল ভাব কমে যায়। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরেই স্ক্রাব তৈরি করে নেওয়া যায়। শুধু বুঝে নিতে হবে ত্বকের ধরন। হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা এবং হার্বস আয়ুর্বেদিক স্কিন অ্যান্ড হেয়ার কেয়ার ক্লিনিকের রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ঘরে স্ক্রাব তৈরি করার উপায় বাতলে দিলেন।
শুষ্ক ত্বক
গম ভালো করে ভেজে গুঁড়া করে কাচের বয়ামে সংরক্ষণ করে রেখে দিতে পারেন। পরে এর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে পুরো শরীরে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। মুখের জন্য একটি ডিমের কুসুমের সঙ্গে এক চা-চামচ মটর ডালের গুঁড়া এবং আধা চা-চামচ কমলার খোসা গুঁড়া করে মিশিয়ে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করলে শুষ্ক ত্বকে বেশ ভালো ফল পাওয়া যাবে।
তৈলাক্ত ত্বক
পুরো শরীরের জন্য টেলে নেওয়া সমপরিমাণ দারুচিনি ও তেজপাতার গুঁড়া সংরক্ষণ করে রাখা যায়। স্ক্রাব করার আগে এই গুঁড়া মিশ্রণের সঙ্গে মুগ ডালের বেসন ও গোলাপজল মিশিয়ে পুরো শরীরে ব্যবহার করতে পারবেন। সংবেদনশীল ত্বকেও এই স্ক্রাব ব্যবহার করা যাবে।
মুখের জন্য এক চামচ করে পুদিনা ও তুলসীপাতার পেস্ট, খুব ভালোভাবে গুঁড়া করা তোকমা একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করতে পারেন। মৃত কোষ এবং ত্বকে থাকা ছোট ছোট ব্ল্যাক হেডস উঠে যাবে।
মিশ্র ত্বক
সুজি ও চালের গুঁড়া ভালোমতো ভেজে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। স্ক্রাব করার আগে এর সঙ্গে কাঁচা দুধ বা শসার রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মুখের জন্য একটি ডিমের সাদা অংশ, এক টেবিল চামচ সুজি এবং সামান্য কর্পূর মিশিয়ে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ মুখে স্ক্রাব করে নিন। মিশ্র ত্বকে ভালো ফল পাবেন।
পুরো শরীরের জন্য একধরনের স্ক্রাব তৈরি করে সংরক্ষণ করে রাখা সম্ভব। সে জন্য কফি বিন গুঁড়া করে এর সঙ্গে ব্রাউন সুগার মিশিয়ে কাচের বয়ামে রেখে দিন। এরপর স্ক্রাব করার সময় এর সঙ্গে মধু ও ডিমের কুসুম মিশিয়ে পুরো শরীরে ঘষে নিতে হবে। এতে করে মৃত কোষগুলো উঠে গিয়ে ত্বক হবে উজ্জ্বল।
স্ক্রাবার ব্যবহার করে চটজলদি ফলাফল পেতে চাইলে এক কাপ সবুজ মুগ ডাল, আধা কাপ চালের গুঁড়া, কাঁচা হলুদ ও মাল্টার রস একসঙ্গে মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগিয়ে নিতে হবে। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ভালোভাবে ঘষে ধুয়ে ফেলুন। এই স্ক্রাবটিও ত্বকের মৃত কোষগুলো তুলে ফেলে ত্বককে উজ্জ্বল করবে। রাহিমা সুলতানা বলেন, স্ক্রাবের মূল উপকরণ হলো চালের গুঁড়া, শসা, গাজর, কাঁচা হলুদ ও জলপাই তেলের মিশ্রণ। সে ক্ষেত্রে চালের গুঁড়া দিতে হবে দুই টেবিল চামচ, দুই টেবিল চামচ করে গ্রেট করা শসা ও গাজর, দুধ আধা কাপ এবং জলপাই তেল এক টেবিল চামচ ও কাঁচা হলুদ এক টেবিল চামচ একসঙ্গে নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ব্যবহার করলে এই স্ক্রাবটি ত্বককে বেশ উজ্জ্বল করে তুলবে। কাঠবাদামের স্ক্রাব তৈরি করার জন্য গ্রেট করা কাঠবাদাম দুই টেবিল চামচ, গুঁড়া দুধ এক টেবিল চামচ, ময়দা এক টেবিল চামচ এবং মধু দুই টেবিল চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
সুগার স্ক্রাব
টমেটো স্লাইস করে কেটে তার ওপর মধু ও চিনি ছিটিয়ে দিয়ে তা পুরো শরীরে ঘষে নিন। এ ছাড়া অ্যালোভেরার জেল্লা দুই টেবিল চামচ, চিনি দুই টেবিল চামচ এবং মধু এক চা-চামচ দিয়েও সুগার স্ক্রাব তৈরি করা যায়।
মনে রাখা ভালো
অতিরিক্ত শুষ্ক এবং সংবেদনশীল ত্বকে স্ক্রাব না করাই ভালো।
সার্কেল মোশনে স্ক্রাব করতে হবে।
স্ক্রাব করার পর সব সময় ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
স্ক্রাব দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘষে তুলে ফেলতে হবে।
সপ্তাহে এক দিনের বেশি স্ক্রাব করা ঠিক না। সবচেয়ে ভালো হয় ১৫ দিন পরপর করলে।
সব ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই দুই থেকে তিন মিনিট স্ক্রাব করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
স্ক্রাব করার পর কোল্ড কম্প্রেস করতে হবে। অর্থাৎ, একটি তোয়ালে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে আলতোভাবে পুরো মুখ মুছে নিতে হবে। গোসলের আগে স্ক্রাব করলে পানির সঙ্গে একটু গোলাপজল ও বরফ মিশিয়ে নিন। এতে তরতাজা ভাব আসে। এ ছাড়া স্ক্রাবিংয়ের পর শরীরে তাপ সৃষ্টি হয়, বা গরম ভাব আসে। তাই কোল্ড কম্প্রেস করলে অনেক সময় লোমকূপ খুলে গেলেও তা পরে বন্ধ হয়ে যায়।
স্ক্রাবিংয়ের পর কোল্ড কম্প্রেস ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার বিষয়টি অবশ্যই ভুলবেন না।