ঢেউখেলানো কোঁকড়া চুল দেখতে বেশ স্টাইলিশ আর সুন্দর হলেও এর স্বাস্থ্য ঠিক রাখা কিন্তু খুব একটা সহজ নয়। দেখা গেল বেশ যত্ন নিয়ে সাজিয়ে–গুছিয়ে পরিপাটি হয়ে বাইরে বের হলেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বাইরের তাপ, বাতাস, ধুলাবালু লাগার সঙ্গে সঙ্গেই সব প্রায় শেষ।
এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে অনেকেই বেছে নেন রিবন্ডিং, ফ্ল্যাট আয়রনিং কিংবা স্ট্রেইটেনিংয়ের মতো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট। যেগুলোতে বিভন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের পাশাপাশি প্রয়োজন ইলেকট্রিক হিট। চুলের স্বাস্থ্যের জন্য যা মোটেই ভালো নয়। এ পদ্ধতিগুলো স্থায়ী কোনো সমাধান দিতে পারে না। কোঁকড়া চুলের যত্নআত্তির নানা দিক নিয়েই আজকের এই ফিচার।
কোঁকড়া চুলের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো জট। খুব দ্রুতই কোঁকড়া চুলে জট লাগে এবং এর ফলে প্রচুর চুল পড়ে। পাশাপাশি চুল প্রাণহীন হয়ে পড়ে। চুলকে জটমুক্ত রাখতে এবং মাথার রক্তসঞ্চালন ভালো রাখতে কোঁকড়া চুল নিয়মিত আঁচড়ানোর অভ্যাস করতে হবে। চুল আঁচড়াতে বড় দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করাই উত্তম। কেননা, এতে চুলের ওপর খুব বেশি চাপ পড়ে না। কোঁকড়া চুল আঁচড়ানোর সবচেয়ে ভালো সময় হলো চুল যখন অল্প ভেজা থাকে। কেননা, বেশি ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ালে যেমন চুল ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি শুষ্ক চুলেও জট ছাড়ানো বেশ কঠিন। তাই চুল অল্প ভেজা থাকা অবস্থায় কয়েক ভাগে ভাগে করে নিয়ে আঁচড়াতে হবে। চাইলে স্প্রে ব্যবহার করেও চুল আঁচড়াতে পারেন।
কোঁকড়া চুল এমনিতেই কিছুটা শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতির হয়। এর ওপর যদি অতিরিক্ত মাত্রায় কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় শুষ্কতা আরও বাড়ে এবং চুল লাবণ্য হারায়। তাই কোঁকড়া চুলে কেমিক্যাল যত দূর সম্ভব কম ব্যবহার করা উচিত। শ্যাম্পু, তেল, কন্ডিশনার যা–ই ব্যবহার করুন না কেন, চেষ্টা করা উচিত কেমিক্যাল ফ্রি প্রসাধনী ব্যবহার করা। বিশেষ করে বহুল প্রচলিত সালফেট ও অ্যালকোহলসমৃদ্ধ পণ্য একদমই ব্যবহার করা যাবে না। এ ধরনের চুলে কৃত্রিম রং না করাটাই ভালো, তবে করতে চাইলেও অতিরিক্ত কেমিক্যাল আছে কি না, যাচাই করে নিতে হবে।
অনেকে কোঁকড়া চুলকে সাময়িকভাবে সুন্দর দেখানোর জন্য প্রায়ই স্ট্রেইটেনিং করে থাকেন। এতে যে হিট চুলে লাগে, তা চুলের জন্য ক্ষতিকর। আবার অনেকে নিয়মিত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করেন। নিয়মিত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারে যে পরিমাণে হিট চুলকে সহ্য করতে হয়, তাতে করে চুল হয়ে পড়ে আরও রুক্ষ ও প্রাণহীন।
যেহেতু কোঁকড়া চুল প্রাকৃতিকভাবেই কিছুটা রুক্ষ ও শুষ্ক ধরনের, তাই এর চাই বিশেষ যত্ন। চুলের আর্দ্রতা ধরে রেখে একে রুক্ষ–শুষ্ক হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে নিয়মিত তেল ম্যাসাজের বিকল্প নেই। তবে তেলটা যদি হালকা গরম করে নিতে পারেন, তাহলে খুবই ভালো হয়। এতে করে রক্তসঞ্চালন ভালো হওয়ায় চুল থাকবে আর্দ্র আর শক্ত এবং মজবুত হবে চুলের গোড়া।
কোঁকড়া চুলে নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এতে করে চুলের আর্দ্রতা বজায় থাকে এবং চুল নরম ও মসৃণ হওয়ায় চুলে জট হয় কম। তবে অবশ্যই এমন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে, যাতে ক্ষতিকারক কেমিক্যাল নেই।
চুলের রুক্ষতা–শুষ্কতা দূর করতে বিভিন্ন ধরনের প্যাক খুবই কার্যকরী। যেমন টক দই, পাকা কলা, মধু, পাকা পেঁপে ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন মাঝে মাঝে। এতে করে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে এবং রুক্ষতা দূর হবে।
চুল আমাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যতার একটি বড় দিক। যেকোনো ধরনের চুলই সুন্দর, যদি তা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং প্রাণবন্ত হয়। কোঁকড়া চুলও তার ব্যতিক্রম নয়। এ ধরনের চুলে বিশেষ যত্নআত্তির পাশাপাশি প্রচুর পানি এবং তাজা ফলমূল খেতে হবে। এতে করে চুলের রুক্ষভাব দূর হয়ে চুল হবে জটমুক্ত ও ঝলমলে আর আপনি থাকবেন ভাবনাহীন।