দুমুঠো খাবার জোগাড় করতেই যাদের দিন কাটে, গুরুতর অসুস্থ না হলে যারা চিকিৎসকের কাছে যাওয়াটা বাড়তি খরচের কারণ মনে করে, ত্বকের যত্নে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া তো তাদের কাছে একধরনের বিলাসিতাই। দেশের এমন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ত্বকের সুস্থতার জন্যই পাশে দাঁড়িয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্র্যান্ড ‘ভ্যাসলিন’। তাদের এই উদ্যোগের নাম ‘ভ্যাসলিন হিলিং প্রজেক্ট’। এই প্রকল্পের শুভেচ্ছাদূত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী বিপাশা হায়াত।
সামাজিক সচেতনতামূলক ও অনুপ্রেরণামূলক এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ত্বকের নানা সমস্যার কথা শোনেন, পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে হাতে তুলে দেন পেট্রোলিয়াম জেলি—ভ্যাসলিন। উদ্যোগের শুরুর কথা জানতে চাইলে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ত্বকের শুষ্কতা, ফেটে যাওয়া পা, ঠোঁট ফাটা, হালকা কাটা-ছেঁড়ার মতো ছোট ছোট সমস্যা হয়ে উঠতে পারে বড় কোনো অসুখের কারণ। এমন ভাবনা থেকেই ২০১৬ সালে ভ্যাসলিন হিলিং প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, প্রথম বছর তারা ৫০ হাজার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে ভ্যাসলিন পৌঁছে দিয়েছে। ২০১৭ সালে তা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া কার্যক্রমে তাদের লক্ষ্য ২ লাখ সুবিধাভোগী মানুষ।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ১ লাখ মানুষের কাছে বিতরণ করা হয়েছে ভ্যাসলিন। গত ৩ িডসেম্বরের সে আয়োজনে আরও ছিল ত্বকসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের স্বাস্থ্য ক্যাম্প। যেখানে শরণার্থী মানুষেরা নিজেদের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে। এর আগের আয়োজনটা হয়েছে বগুড়ায়। গত ১৫ নভেম্বর বগুড়ার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ভ্যাসলিন। আয়োজন করা হয়েছিল সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের।
প্রতিটি আয়োজনেই উপস্থিত ছিলেন বিপাশা হায়াত। সুবিধাবঞ্চিত মানুষের হাতে নিজে তুলে দিয়েছেন ভ্যাসলিন। সেই অভিজ্ঞতা তিনি বলেছিলেন ভ্যাসলিনের কাছে, ‘ভ্যাসলিন হিলিং প্রজেক্টের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে আমার সুযোগ হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের সংস্পর্শে আসার। তাদের সঙ্গে আমি তাদের জীবনসংগ্রাম ও বিশেষভাবে শীতের শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বকের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি এবং তাদের অসহায়ত্ব আমাকে ভীষণভাবে আবেগাক্রান্ত করেছে। শুধু অভিনেত্রী বা শিল্পী বা নাট্যকার পরিচয়ে নয়, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে ভ্যাসলিন আমাকে এসব মানুষের দিকে ভালোবাসা ও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে চলেছে। আমি তাদের কাছে অপার কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা সবাই যেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াই যা কিছু আছে তা–ই নিয়ে—এই হোক অঙ্গীকার।’
ভ্যাসলিন শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নয়, আগ্রহী মানুষের সহায়তাও পৌঁছে দিচ্ছে সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে। রাজধানীর বিশেষায়িত বিপণিবিতানগুলোতে ঢুকতেই চোখে পড়ে ব্যাংকের এটিএম বুথের মতো দেখতে ভ্যাসলিনের কিয়স্ক। বিশেষ কায়দায় এখানেই ভ্যাসলিন জমা দিতে পারেন আগ্রহীরা। ‘হাতে হাতে ছড়িয়ে দিন ত্বক সুস্থ করার শক্তি’ লেখা পোস্টারের এই বুথ পাওয়া যাবে গুলশানের বিপণিবিতান ইউনিমার্ট, পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, বারিধারার যমুনা ফিউচার পার্কে।
এই উদ্যোগের সঙ্গে শুরু থেকে সহযোগী হিসেবে রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংস্থা (টিএমএসএস) । ভ্যাসলিন ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে ত্বক সুস্থ রাখা যায়, সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ৬০০ জন চিকিৎসক এবং ১ হাজার ২০০ জন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই হাজির হচ্ছেন মানুষের কাছে।
তিন বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের হাতে পৌঁছেছে শীতের সুরক্ষা। ভ্যাসলিন বিতরণের এটা নিছক সংখ্যা নয়। ভ্যাসলিনের ভাষায়, সাধারণ একটি জারের অসাধারণ সব গল্প।