উন্নয়নকর্মী আশা আলমগীর স্কুটিতে যাতায়াত করেন। ঢাকার রাস্তায় স্কুটি চালাতে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। তাঁর অভিজ্ঞতা শুনেছেন জোহরা শিউলী
২০১৯ সাল থেকে আমি স্কুটি চালাই। যখন স্কুটি চালানোর সিদ্ধান্ত নিই, বিষয়টি পরিবারের অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। পরিচিত অনেকেই অবাক হয়েছেন। আমি স্কুটি চালাতে পারব কি না, এ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। সত্যি বলতে কী, আমার নিজের মনেও ভয় ছিল, দুর্ঘটনার শঙ্কা ছিল। মা আমাকে সাহস জোগালেন। এরপর চ্যালেঞ্জটা নিই। চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কারণ, গণপরিবহনে করে যাতায়াতের সমস্যা। প্রতিদিন বাসে অফিস যাতায়াতের ধকল আমি আর নিতে পারছিলাম না। স্কুটিই আমার কাছে সবচেয়ে ভালো সমাধান মনে হয়েছিল।
শুরুতে খুব অস্বস্তি লাগত। পথের মানুষ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকত। তাদের চাহনি দেখলে মনে হতো, অদ্ভুত কোনো প্রাণী দেখছে তারা। পরিচিতদের মধ্যেও আমার স্কুটি মজা করার একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাস্তায় নানা বিড়ম্বনাও ছিল। সেসব অতিক্রম করেই পিচঢালা পথে চলতে হয়েছে।
প্রথম দিকে অন্য যানবাহনের চালকেরা (বিশেষ করে মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কার) খুব ঝামেলা করতেন। আমি নিয়ম মেনে চললেই যেন তাঁদের সমস্যা। বেপরোয়াভাবে ওভারটেক করতেন, কখনো কখনো চাপ দিয়ে যেতেন। ব্যবহারেই তাঁরা বুঝিয়ে দিতেন, নারী হয়ে আমি স্কুটার চালাচ্ছি, এতে তাঁরা খুবই বিরক্ত। দেখা যেত, ইচ্ছা করে স্কুটার ধাক্কা দিচ্ছেন। একদিন তো এক গাড়িচালক কোনো কারণ ছাড়াই আমার স্কুটিকে ধাক্কা দিলেন। নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলাম না। পড়ে গেল স্কুটিটি। কেন এমন করলেন বলতে গেলে উল্টো রাগারাগি করলেন তিনি। ট্রাফিক পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাইনি। বরং ভদ্রলোক বিরক্ত হয়েছিলেন। এমনও হয়েছে, ট্রাফিক পুলিশ আমাকে থামিয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করত। একজন পুরুষের সঙ্গে যা হয়তো করা হতো না। তবে ব্যতিক্রমও ছিল। অনেক নারী প্রশংসা করতেন, স্বস্তির চোখে তাকাতেন। তখন ভীষণ ভালো লাগত।
স্কুটি চালাতে শুরু করে আমার যাতায়াতের সমস্যা অনেক কমে গেছে। এখন আমাকে গণপরিবহনের ওপর নির্ভর করতে হয় না। সকালে অফিস যাওয়ার সময় চিন্তা করতে হয় না সময়মতো গণপরিবহন পাব কি না। পরিবহনের জন্য অনেকটা সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। গাড়িতে ওঠার সময় পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয় না। এখন আমার যাতায়াত নিশ্চিন্ত, নির্বিঘ্ন হয়েছে। আবার দিন দিন স্কুটিচালক নারীর সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ভোগের বিষয়গুলো এখন অনেকটাই কমে গেছে। পরিবর্তনের ধারায় স্কুটি চালানো এখন অস্বাভাবিক কিছু নয়।