তিন বছর আগে তার সঙ্গে প্রথম দেখা, আমার বান্ধবীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। আজও মনে আছে, বিয়ের গেটে সে কি ঝগড়া! এই ঝগড়ার মধ্যেও একটা বিষয় খেয়াল করি, সে বারবার আমার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিল। ইচ্ছা না থাকলেও আমার চোখ চলে যাচ্ছিল তার দিকে। কারণ, ছেলেটির দিকে তাকালেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছিল। তবে অনুভূতিটা তখন ঠিক ধরতে পারিনি। নানা কৌশলে আমার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে সে। যদিও কথাগুলো অপ্রয়োজনীয়, তবু অন্য রকম আবেগ প্রকাশ পাচ্ছিল। এভাবেই দু-একটি কথার মাধ্যমে আমাদের পরিচয়।
যদিও পরিচয়ের পর বন্ধু হিসেবে যোগাযোগ; কিন্তু আমি জানতাম, সে শুধু আমার বন্ধু নয়, এটা বন্ধুত্বের চেয়েও বেশি কিছু। কেউ কাউকে না জানালেও বুঝতাম, ভালোবাসি দুজন দুজনকে। যেটাকে আমরা দুজনই এগিয়ে নিয়েছি যত্নে, মমতায়। লুকানো ভালোবাসাগুলো হয়তো এমনই হয়। কোনো এক বসন্তে পরিচয় আমাদের। তারপর কেটে গেছে অনেক বসন্ত, তবে আর কোনো বসন্তে তার চোখে চোখ রেখে সময় কাটানোর সৌভাগ্য হয়নি আমার। কারণ, সে হারিয়ে গেছে অন্য এক জগতে। এক সকালে অনাকাঙ্ক্ষিত এক দুঃসংবাদে থেমে যায় আমার পৃথিবী। স্বপ্নগুলো ভেঙে যায় এক নিমেষে। আমার হৃদয়ে সাজানো ফুলের বাগানের সব ফুল ঝরে যায় একমুহূর্তের ঝড়ে। কখনো ভাবিনি একটি টিউমার পৃথিবী আলাদা করে দেবে, আলাদা করে দেবে দুটি হৃদয়। মানতে পারছিলাম না এত দ্রুত সে হারিয়ে যাবে আমার কাছ থেকে। তাকে নিয়ে বহুদিন বাঁচার স্বপ্ন ছিল আমার।
স্বপ্ন ছিল একসঙ্গে অনেক সূর্যোদয় দেখার। সমুদ্রের জলে পা ভেজানোর। তবে স্বপ্ন আর ইচ্ছাগুলো যে অপূর্ণই থেকে যাবে, ভাবতে পারিনি। চলে যাওয়ার আগে হয়তো আমাকে শেষবিদায় দিতে চেয়েছিল, সেটাও ভাগ্যে জোটেনি আমার। আমি যাওয়ার আগেই হারিয়ে যায় সে। এক অসীম সাগরে ভাসিয়ে রেখে যায় আমাকে। জানি না নিয়তির কোন খেলায় এমন নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি আমি। ধীরে ধীরে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি বাস্তবতার সঙ্গে। তাকে ছড়া কেটে গেছে অনেক বসন্ত। তবে আমি আজও তাকে ভুলতে পারিনি। প্রতি বসন্তে আমি এখনো তাকেই খুঁজি। যদিও খুঁজে পাব না জানি, কিন্তু আমার মন থেকে সে কখনোই হারাবে না। তার স্মৃতি কখনো মলিন হওয়ার নয়। তার স্মৃতি বুকে নিয়ে বেঁচে থাকব বাকি জীবন। প্রিয়, বেঁচে থাকতে তোমাকে যে কথা বলতে পারিনি, আজ শুনে নাও, ‘অনেক ভালোবাসি তোমায়। ওপারে আমার অপেক্ষায় থেকো।’