বিমান ছাড়ার মাত্র ১০ ঘণ্টা আগে ভিসা হাতে পেয়েছি। পেছনে তাকিয়ে ভাবলে অবাক লাগে, এ রকম কত ঝক্কি পেরিয়েই না ‘এপিএসি কমিউনিটি সামিট ২০২২’-এ অংশ নিয়েছি। তবে যে অভিজ্ঞতা সঙ্গে করে এনেছি, কোনো ঝক্কিই তার কাছে কিছু নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন কমিউনিটিভিত্তিক গ্রুপগুলোর প্রশাসকদের (অ্যাডমিন) নেতৃত্ববিষয়ক দক্ষতা বিকাশের জন্যই মূলত ‘এশিয়া প্যাসিফিক কমিউনিটি এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম’ চালু করেছে মেটা (ফেসবুকের মাদার কোম্পানি)। এ বছর এই প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশের ছয়টি ফেসবুক গ্রুপ—কাস্টঅ্যাওয়ে অন দ্য মুন, অপরাজিতা, পেনসিল, ফুডব্যাংক, স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ার্স এবং উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট। আর মেটার আমন্ত্রণে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি সামিটে অংশ নিই বাংলাদেশ থেকে আমরা চার গ্রুপের প্রতিনিধিরা—কাস্টঅ্যাওয়ে অন দ্য মুনের পক্ষ থেকে আমি, ফুডব্যাংকের সাবিত হোসাইন, উইমেন অ্যান্ড ই-কমার্স ট্রাস্টের নাসিমা আক্তার এবং পেনসিলের নিয়াজ মওলা।
৩ নভেম্বর দুপুরেই আমরা সিঙ্গাপুরে পৌঁছে গিয়েছিলাম। প্রথম দিনে হোটেলে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় ঘুরে দেখেছি সিঙ্গাপুর শহর। একটা ব্যাপার দেখে বেশ ভালো লাগল। সিঙ্গাপুরে প্রচুর বাঙালি থাকেন। এমনকি একটি রাস্তার সব দোকান, হোটেলের নাম থেকে শুরু করে অনেক কিছুই বাংলায় লেখা। বাঙালিদের সঙ্গে গল্প করে, ঘুরেফিরে সন্ধ্যাটা বেশ কাটল।
পরদিন সকালে শুরু হয় মূল আয়োজন। সকালেই মেটার গাড়ি এসে আমাদের নিয়ে যায় তাদের কার্যালয়ে। নানা রকম আনুষ্ঠানিকতা সেরে যখন হলরুমে পৌঁছাই, তখন প্রায় সকাল নয়টা। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ৩১টি কমিউনিটির মানুষ ছাড়াও সেখানে হাজির ছিলেন মেটার প্রোডাক্ট টিমের লোকজন, যাঁরা এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। শুরুতে মেটার দলের লোকজন আমাদের কমিউনিটি এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানান। পরে জানান তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, সামনে আরও নতুন কী কী পণ্য নিয়ে আসছে মেটা। তাঁরা আমাদের কথাও শোনেন খুব আগ্রহ নিয়ে। কীভাবে আমরা ফেসবুকে একটা কমিউনিটি পরিচালনা করি, কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হই, কোথায় আরও উন্নতি করা দরকার—এসবই ছিল আলোচনার বিষয়।
অংশগ্রহণকারী ৩১ জনকে এরপর ৪ ভাগে ভাগ করা হয়। একেকটি ভাগের নাম দেওয়া হয় ‘পড’। অর্থাৎ চারটি দলের নাম হয় পড১, পড২, পড৩ ও পড৪। একেকটি পডে ছিল ১০ জন সদস্য। কারণ, আমাদের সঙ্গে আগের বছরের অংশগ্রহণকারী কিছু অ্যালামনাইও যোগ দিয়েছিলেন। যাহোক, দলীয়ভাবে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। তারপর একেকটি দল মঞ্চে গিয়ে জানাই কোথায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে, কীভাবে সমাধান সম্ভব।
মধ্যাহ্নভোজের পর শুরু হয় দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে মেটার প্রোডাক্ট টিম আমাদের তাদের ভবিষ্যৎ পণ্যগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এ ছাড়া পুরো সেশনে ছিল মজার কিছু অংশ, যেমন গেমিং, মেটা কুইস্ট এক্সপেরিমেন্ট ইত্যাদি। সব শেষে ঘুরে দেখানো হয় মেটার পুরো কার্যালয়।
অফিসটা এত সুন্দর! সাজানো-গোছানো। সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছি ওদের ডাইনিং দেখে। ডাইনিংয়ে চারটা ভিন্ন কুইজিনের খাবার ছিল, সম্পূর্ণ বুফে। প্রতি ফ্লোরে ছোট–বড় দুটি কফি জোন। মেটার কার্যালয়ের আরেকটা বিশেষত্ব হলো, মেঝেতে কংক্রিটের তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। সবটাই কাঠের। একটা দেয়ালে আমাদের নিজেদের ফেসবুক গ্রুপ ও দেশের নাম লিখতে বলা হলো। ফেসবুকের দেয়ালে (ওয়াল) তো অনেক লিখেছি, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই ফেসবুকের কার্যালয়ের দেয়ালে লেখার অভিজ্ঞতা অন্য রকম।
বিকেলে আমাদের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় মেটাভার্স–সংক্রান্ত আলোচনা দিয়ে। মেটাভার্সের ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছু প্রেজেন্টেশন ছিল সত্যিই অবাক করা। ওদের কথা থেকে বুঝলাম, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে মেটাভার্সই হবে এই টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে বড় ধামাকা। মেটাভার্স পৃথিবীকে কতখানি বদলে দেবে জানি না, কিন্তু প্রযুক্তির জগৎ থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনেও যে একটা বড় পরিবর্তন আসবে, সেটা অনুমান করাই যায়।
সবার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা হওয়া, কথা বলার আয়োজন খুব কম সময়ের জন্য হলেও অনলাইনে আমাদের এক্সিলারেটর প্রোগ্রাম এখনো চলছে, চলবে আগামী মার্চ পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে তিন-চারটি ক্লাস করছি। শিখছি, ফেসবুকের মাধ্যমে কীভাবে আরও কার্যকর একটা কমিউনিটি গড়ে তোলা যায়। আমাদের কাজের সুবিধার্থে তারা আমাদের একটি তহবিলও বরাদ্দ দেবে। যেন সামনে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারি।