মানুষমাত্রই নতুনের খোঁজ করে। জামা-জুতা, হাতঘড়ি, মুঠোফোন কিংবা নিত্যব্যবহার্য অনেক কিছুই নতুন এলে মানুষ পুরোনো জিনিসটাকে ছুড়ে ফেলে। নতুনকে স্থান করে দিতেই পুরোনোকে বিদায় দিতে হয়।
তবে কেউ কেউ আছেন, যাঁরা ছুড়ে ফেলতে পারেন না। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেলেও সযতন রেখে দেন। ধুলা জমে গেলে ঝাড়মোছ করে আবার সাজিয়ে রাখেন। বহুদিন পর হাত বুলিয়ে স্মৃতি রোমন্থন করেন। অনেকে আবার কেবল নিজের জিনিসই আগলে রাখেন না; পুরোনো কিছু পেলেই তাঁরা সাগ্রহ নিজের কাছে রেখে দেন। এসব সংগ্রহ করা, সংগ্রহে রাখা তাঁদের নেশা। যেমন যশোরের লুৎফর রহিমের কথাই ধরা যাক। তাঁর পুরোনো জিনিসের সংগ্রহশালায় মোগল আমলের ধাতব মুদ্রা, প্রাচীন ইন্দো-গ্রিক যুগের মুদ্রা, একপাই সিক্কা, ফুটো পয়সা, কানাপাই যেমন আছে, তেমনই আছে দেড়-দুই হাজার বছর আগের টেরাকোটা, নকশাকাটা ইট।
টাঙ্গাইলের ৭০ বছর বয়সী ইসমাইল হোসেন ওরফে সেলিমের সংগ্রহে আছে মাদার তেরেসা, নেলসন ম্যান্ডেলা, রোনাল্ড রিগ্যান, কফি আনান, বুট্রোস বুট্রোস ঘালির মতো প্রখ্যাত সব ব্যক্তির অটোগ্রাফ। ওদিকে কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিটের সুশীলকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সংগ্রহশালার আধো আলো-ছায়া ঘরে রয়েছে প্রাচীন মডেলের শব্দযন্ত্র, স্পিকার, রোদঘড়ি, বায়োস্কোপ, দম দেওয়া মুভি ক্যামেরা, জমিদার বাড়ির বৈঠকখানার হ্যাজাক, বিউগল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতি ইত্যাদি। ইভেত্তে দারদেন্নে নামের বেলজিয়ামের এক নারীর শখ পুরোনো টিনের কৌটা জমানো।
আজ ২ মার্চ, পুরোনো জিনিস দিবস। কবে কীভাবে দিনটির চল হয়েছিল, স্পষ্ট করে জানা যায় না। তবে এই দিবস কিন্তু পালন করা যেতে পারে। পুরোনো বা প্রাচীন মানেই যে ফেলনা, তা তো নয়। মহাকালের নিদর্শন হিসেবে যেমন এসবের তাৎপর্য আছে, তেমনই গুরুত্ব আছে আবেগীয় স্মৃতিনিদর্শন হিসেবেও। আবার সময়ের আবর্তনে অর্থমূল্যের দিক থেকেও এগুলো হয়ে উঠতে পারে মহামূল্যবান।
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে