গা–ভর্তি সোনার গয়না পরার চল কি আর আছে? একালের কনেরা সোনার গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে পরছেন আরও নানা ধাতব গয়না। পাথর আর মুক্তা বসানো একেকটি গয়না বিয়ের একেক আসরে কনেকে করে তুলছে একেক রকম। এই সময়ের কনের সাজে কেমন ধারার গয়নার চলছে, জেনে নিন ফারজানা জামানের কাছে
একটা সময় ছিল, বিয়ের গয়না মানেই ছিল সোনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কনেদের রুচিরও বদল ঘটেছে। সোনার অতিরিক্ত দামও আরেকটা কারণ। সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্য কনের ইচ্ছেমতো গয়না গড়ে নেওয়ার সুবিধা। বিয়েতে কনে যেমন গয়না পরতে চান, সেটা মনমতো গড়ে দেওয়ার জন্য আছে অনেক প্রতিষ্ঠান।
বিয়েতে গয়নার ক্ষেত্রে বর্তমানে কনেদের পছন্দের তালিকায় আছে অ্যান্টিক গোল্ডেন আর ধাতব গয়না। সোনার গয়নার ছোট্ট কোনো একটা অংশের সঙ্গে মিলিয়ে অ্যান্টিক থেকে বেছে নিচ্ছেন বড় কোনো অংশ। কেউ আবার সোনার গয়নায় বসিয়ে নিচ্ছেন নামীদামি পাথর।
জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আমিসের সেলস বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আফিয়া সুলতানা জানান, বিয়ের গয়না সাধারণত ২১ ক্যারেট অথবা ২২ ক্যারেট গোল্ড দিয়ে তৈরি করা হয়। একেক রকম কনের জন্য একেক রকম নকশা। যিনি শাড়ি পরছেন, তিনি যে গয়না বেছে নেবেন; গাউন পরা বউকে সেটা না–ও মানাতে পারে। সোনার ওপরে কুন্দন, পান্না, রুবি ছাড়াও নানা ধরনের পাথর বসানো হয় এখন। সোনার সঙ্গে যেসব পাথর বসানো হচ্ছে, সেগুলোর রং যেন কনের পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়, সেটা খেয়াল রাখছেন কনেরা।
সোনার সঙ্গে পাথরের এই মিলমিশ একালের কনের সাজে সবচেয়ে ট্রেন্ডি। গলার মূল নেকলেসের সঙ্গে মিল রেখে কনের কান ও মাথার জুয়েলারির নকশা করা হয়। কেউ হাতে চুড় পরেন, তার সঙ্গে মিলিয়ে চিকন চুড়ি। কেউ আবার কাচের চুড়ির সঙ্গে সামনে–পেছনে বালা দিয়ে সেট করে নেন হাত। বর্তমানে পল্কির নকশা করা গয়না ভালো চলছে।
কোথায় কেমন গয়না
কনের সাজে একধরনের বিশেষ গয়না থাকে পারিবারিকভাবে পাওয়া। হয়তো শাশুড়ি একটা গয়না দিয়ে বরণ করে নিলেন নতুন বউকে। ধরা যাক, সেটা একটা সীতাহার, তাহলে বিয়ের কোনো একটা অনুষ্ঠানে এই গয়না পরার চেষ্টা করেন কনে। এবার সেই সীতাহারের সঙ্গে মিল রেখেই বাকি গয়না বেছে নিতে চেষ্টা করেন কনে। মা, খালা, দাদি, নানির সাবেকি গয়নাও অনেকে কিছুটা অদলবদল করে নেন। তবে বিয়ের কোন অনুষ্ঠানে সাবেকি গয়না পরবেন, সেটা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে আগেভাগে ঠিক করে রাখা জরুরি।
কনে হয়তো একটি সাদা শাড়ি পরে সাজবেন বলে ঠিক করেছেন। সেখানে গয়নাগুলোয় আই সুদিং (চোখের প্রশান্তি মেলে এমন) ব্যাপারটা থাকলে ভালো। হয়তো পুঁতি আর পান্নার খেলা থাকল সোনার সঙ্গে মিলেমিশে। হাতে কয়েকটি চুড় আর বাহুতে একটা বাজু। ব্যস, কনেকে লাগবে স্বর্গের অপ্সরা।
আজকাল অনেক হার পাওয়া যায় গলাজোড়া। তেমন একটা বেছে নিতে পারেন বিয়ে অথবা বউভাতের সাজে। তার সঙ্গে নাকে টানা নথ আর কানে একটা ভারী গয়না দেখতে মন্দ লাগবে না। টায়রার বদলে টিকলির চলও বেড়েছে। তাই সাজের সঙ্গে মিলিয়ে মাঝসিঁথি বরাবর একটা টিকলি পরতে পারেন।
আঙুলে বিয়ের আংটি ছাড়া অন্য কিছু না পরাই ভালো। হাতে মকরমুখী বালা, অমৃতপাকের বালা ছাড়াও চুড় পরার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। সাবেকি ধাঁচের সাজে থাকতে চাইলে বেছে নিতে পারেন গোলাপ বালা অথবা মানতাসা।
গয়নার দোকান গ্লুড টুগেদারের স্বত্বাধিকারী মেহনাজ আহমেদ বলেন, ‘এখন কনেরা একটু অ্যান্টিক গোল্ডেন গয়নার দিকে ঝুঁকছেন। রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেওয়া গয়নাও পরছেন অনেকে। বর্তমানে কাটাইকাজের, ডাইসের, পাথর বসানো গয়না পরছেন কনেরা। পিতলের ওপর বিভিন্ন নকশার চলও বেড়েছে।
বাঙালি বউ মানে গলায়, হাতে, মাথায় আর কানে অলংকার থাকবে। এখন গলার অলংকারের মধ্যে প্রাধান্য পাচ্ছে চন্দ্রহার, সীতাহার, অর্ধচন্দ্রহার, চোকার, লহরি চেইন। কানে থাকে ঝুমকা, কানবালা অথবা বড় আকারের দুল। মাথার গয়নার একধরনের নতুনত্ব এসেছে এখন। গলার অলংকারের সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে সীতাপাটি অথবা মাথাপাটি পরছেন। নাকে অনেকে হীরার বড় একটা নাকের ফুল পরে থাকেন। কেউ শুধু নথের প্রতিই আস্থা রাখছেন।
পরামর্শ
গয়না কেনার আগে অবশ্যই যে ব্যাপারগুলো মাথায় রাখা উচিত—
১. অবশ্যই অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে রাখুন। তাড়াহুড়া না করে কিছুদিন আগে থেকেই বিয়ের কোন অনুষ্ঠানে কেমন গয়না পরবেন, সেট করে নিন।
২. বিয়েতে যে পোশাক পরবেন, আগে সেটা কিনে ফেলুন। এরপর পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গয়না বেছে নিন। এতে কাজ সহজ হবে।
৩. কনের মুখের আকার–আকৃতির সঙ্গে মানানসই গয়না কিনুন। সব ধরনের গয়না সব শেপের সঙ্গে ভালো না–ও লাগতে পারে।
৪. বাজেট অনুযায়ী গয়না কিনুন। গয়নার পেছনে অনেক টাকা খরচ করতে না চাইলে হালকা ধরনের গয়না বেছে নিন, পরেও যা পরতে পারবেন।