২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেওয়া হচ্ছে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড। পুরস্কারটি প্রবর্তন করেছে প্রিন্সেস ডায়ানার নামে প্রতিষ্ঠিত একটা দাতব্য সংস্থা। ন্যূনতম এক বছর কোনো মানবিক কাজ করেছেন এবং বয়স ৯-২৫ বছরের মধ্যে, এমন উদ্যমী তরুণদেরই কেবল দেওয়া হয় এই পুরস্কার। গত ১ জুলাই ভার্চ্যুয়াল এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো এই বছরের প্রাপকদের নাম। বিশ্বের নানা দেশের উদ্যমী তরুণদের পাশাপাশি তালিকায় বাংলাদেশি আট তরুণ ‘চেঞ্জমেকার’-এর নামও আছে। পড়ুন এই আট তরুণের একজনের গল্প।
‘২০১৮ সালের কোনো একদিন আমার খুব কাছের এক বন্ধু গভীর রাতে ফোন করে। ফোনটা তখন ধরতে পারিনি। পরদিন সকালে জানতে পারলাম, ও আর নেই! রাতে আত্মহত্যা করেছে। ওই ঘটনাটা আমাকে কষ্টের সঙ্গে অসম্ভব নাড়াও দিয়েছিল। বুঝতে পেরেছিলাম, মানসিকভাবে যত শক্তই হোক না কেন, প্রতিটা মানুষই কখনো কখনো ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে,’ বলছিলেন আনুশা চৌধুরী। তাই তো বন্ধুর মৃত্যুর পর গড়ে তুলেছেন ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’। যেসব মানুষ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিংবা অন্য যেকোনো কারণে হীনম্মন্যতায় ভোগে, তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং একটা ইতিবাচক জীবনযাপনে সাহায্য করার লক্ষ্যে কাজ করে এই সংগঠন।
শুধু মানসিক অসুস্থতা মোকাবিলা এবং মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধিই নয়, বরং মানসিক রোগীর জন্য একটা নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতেও কাজ করছে সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছেছে তারা। সরাসরি উপকৃত হয়েছে ৩৭ হাজার মানুষ। আনুশা জানালেন, ভবিষ্যতে দুস্থ নারী, ট্রান্সজেন্ডার, মাদকাসক্ত ব্যক্তি এবং ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করারও পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। দেশ ও বিদেশে ‘ব্রিংগিং স্মাইল’, ‘লাইটেন দ্য লোড, ‘মেন্টাল হেলথ’ এবং ‘লেটস টক অ্যাবাউট মেন্টাল হেলথ’ সংগঠনটির উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। দেশের পাশাপাশি কানাডা, দুবাই, ভারত, ফিলিপাইন, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার ১১২ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন এই সংগঠনে। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৪৭২ জন মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর শরণাপন্ন হয়েছেন। যাঁদের ৩ হাজার ২৫৮ জন নারী এবং ২ হাজার ২১৪ জন পুরুষ।
কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের পরিচালক হিসেবে কর্মরত আনুশা নেপাল থেকে পেয়েছেন ‘গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’। ভারতের সারদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘লাইটেন দ্য লোড’ প্রোগ্রাম থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। ২০২২ সালে ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর সম্প্রতি ‘প্যান আফ্রিকান ইয়ুথ লিডারশিপ ফাউন্ডেশন’-এর গ্লোবাল লিডারস সামিটে বিশ্বের ৫০ প্রভাবশালী নেতার একজন হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। আনুশা বলেন, ‘এমন একটা পৃথিবীর স্বপ্ন আমি দেখি, যেখানে কোনো মানুষকেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। এ জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল আচরণ এবং অভিভাবকদেরও মানসিক সুস্বাস্থ্য নিয়ে অবগত করার বিষয়ে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’