অনেক সময় আবেগে ‘ভেসে গিয়ে’ আমরা এমন সব কর্মকাণ্ড করে ফেলি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর যেগুলো নিয়ে আমাদের আফসোসের শেষ থাকে না। মনে হয়, এভাবে এই পরিস্থিতিতে মাথা গরম না করলেই হতো। আরেকটু সহনীয়ভাবে কথাটা বলা যেত। নিজের প্রতিও হয়তো আরেকটু দয়ালু হওয়া যেত। একটু নিজেকে সামলাতে পারলেই নেতিবাচক অনুভূতির চূড়ান্ত পর্যায়ে হুট করে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হতে পারত অন্য রকম। জেনে নেওয়া যাক, এমন সব মুহূর্তে কী করবেন।
১. রাগে অন্ধ হয়ে গেলে
প্রথমত, চুপ থাকুন। ওই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে যান। মনে করুন, মিটিংয়ে আপনি প্রচণ্ড রেগে গেলেন। রুম থেকে বেরিয়ে যান। পানি খান। জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা–কাটাকাটি চলছে, বেরিয়ে যান। বাইরে থেকে হেঁটে আসুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারছেন, ততক্ষণ কিছুই বলবেন না। পরিস্থিতি শান্ত হলে তখন প্রতিক্রিয়া জানান।
২. বিহ্বল বা আবিষ্ট হয়ে গেলে
মনে করুন, আপনি অনেক কাজের চাপে পিষ্ট। কোনটা রেখে কোনটা করবেন, কিছুই বুঝতে পারছেন না। হতবিহ্বল লাগছে। এমন হলে কাগজ-কলম নিয়ে বসুন। কী কী কাজ জমে আছে, তালিকা করুন। তারপর সেগুলো গুরুত্ব অনুসারে সাজান। যে কাজগুলো ৫ থেকে ১০ মিনিটের ভেতর সেরে ফেলা যায়, সেগুলো একে একে করে ফেলুন। তারপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটিতে মনোনিবেশ করুন। একটা সময়ে কেবল একটা কাজেই ফোকাস করুন।
৩. অনিশ্চয়তা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, হতাশা
এমন সব মুহূর্তে পেছনে ফিরে তাকান। আপনার সেই কঠিন সময়ের কথা ভাবুন, যেটা আপনি পার করে এসেছেন। আপনার মতো অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজের সক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান। নিজের দক্ষতা নিয়ে প্রবল হীনম্মন্যতায় ভোগেন। এটাকে বলে ‘ইমপোস্টার সিনড্রোম’। পর্যাপ্ত মূল্যায়নের অভাবে অনেক মেধা–ই অকালে ঝরে যায়। আর আমাদের পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সিস্টেমে অনেক সময়ই মানুষকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। তাই নিজেই নিজেকে ‘ক্রেডিট’ দিতে শিখুন। নিজেই নিজেকে মূল্যায়ন করুন। বাহবা দিন। আপনি মন দিয়ে আপনার কাজটা করে যান। আর সঠিক সময়ের অপেক্ষা করুন।
৪. ‘প্রত্যাখ্যাত’ অনুভূতি হলে
কথায় বলে ‘রিজেকশন ইজ রিডিরেকশন’। প্রথমত, প্রত্যাখ্যান জীবনের অংশ। সবাই জীবনের কোনো না কোনো সময়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। সেখান থেকেই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেছে। তাই প্রত্যাখ্যান থেকেই আপনার জীবনে আরও ভালো কিছু ঘটতে পারে। যেটা আপনি চিন্তাও করেননি। প্রত্যাখ্যানের অনুভূতি খুবই ভয়ানক ও কষ্টকর। তাই আপনি সেই মুহূর্তে নিজের প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ালু হোন।
৫. ভয় ও উদ্বেগ
ভয় পেলে ও উদ্বেগ হলে প্রথমত বড় বড় করে শ্বাস নিন। এতে মস্তিষ্ক অক্সিজেন বেশি পাবে। আর আপনার ভয় ও উদ্বেগ কমে যাবে। এরপর ঠান্ডা পানি খান। স্থির হোন। ‘ফোকাস’ করুন। মাথাটাকে সঠিকভাবে চিন্তা করার জন্য সময় দিন। সময় নিন। সময় দেওয়া শিখুন। এটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঙ্গে সবকিছুই স্বাভাবিকতা পেতে থাকে।