ঠায় দাঁড়িয়ে দিনে ৫০০ রুটি বানান নাজমা

সকাল আটটায় রুটি বানানো শুরু করেন। শেষ হয় পরের দিন সকাল আটটায়। টানা ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা থাকে। গ্রাহক আসতেই থাকে, আর তিনি একের পর এক রুটি বেলা ও ভাজার কাজ করতে থাকেন। কোনো গ্রাহক ডিম চাইলে রুটি তৈরির ফাঁকে ডিমও ভেজে দেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের ফুটপাতের একটি দোকানে টানা ২৪ ঘণ্টার এ শ্রম দিয়ে তিনি ৮৫০ টাকা মজুরি পান। টানা এক দিন এক রাত কাজ করে পরের ২৪ ঘণ্টা ছুটি।

ফুটপাতের ওই দোকানে বসেই তাঁর সঙ্গে কথা হলো। নাম জানতে চাইলে বলেন, ‘নাম নাই। নাম জাইনে আবার কোন প্যাঁচত ফেলবেন। ভয় লাগে। আমরা বিদেশি মানুষ, ভয় লাগে। পেটের জন্য সারা রাত দাঁড়াইয়্যা থাইকে রুটি বানাই।’ দোকানের মালিক তাঁকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘নাম বলেন, অসুবিধা নাই।’ তখন রুটির দিকে তাকিয়ে থেকেই জানালেন, তাঁর নাম নাজমা বেগম।

নাজমা বেগম

জানা গেল, নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর গ্রামে নাজমা বেগমের (৩৫) বাড়ি। ১০ বছর আগে স্বামী মারা যান। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে চলে আসেন রাজশাহী শহরে। কাজ নেন ফুটপাতের ওই দোকানে। বছর পাঁচেক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন নগরের বিলসিমলা এলাকায় একটা বাড়িতে ভাড়া থাকেন। মাস শেষে ভাড়া দুই হাজার টাকা।

প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে যখন মানুষ আইঢাই করে, উনুনের আঁচে নাজমা তখন ঘামে ভিজে একসা। খানিক পরপর মুখ মুছে নিচ্ছেন। যখন গ্রাহক একটু কমছে, চুলার পাশে রাখা একটি হাতপাখা হাতে তুলে নিচ্ছেন। পাখাটা হয়তো দুবারও ঘুরাতে পারেন না, গ্রাহক চলে আসে। পাখা ফেলে রুটি বেলতে আটা হাতে তুলে নেন নাজমা।

সকাল আটটা থেকে পরের দিন সকাল আটটা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থেকে নাজমা কত রুটি তৈরি করেন, জানতে চাইলে দোকানমালিক তারেক বললেন, সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ কেজি আটার রুটি লাগে। যে মাপের রুটি নাজমা তৈরি করছেন, তা ১ কেজিতে ২০টা করে হয়। ২৫ কেজির রুটি করলে ৫০০ হয়। ৩০ কেজির করলে ৬০০ হয়। তারেক বলেন, গ্রাহক কম-বেশি হয়। তবে ২৪ ঘণ্টায় ৫০০ থেকে ৬০০ রুটির চাহিদা থাকে।

গ্রামের বাড়িতে আধা পাকা একটা ঘর তুলছেন নাজমা। কোমর পর্যন্ত ইটগাঁথা হয়ে গেছে। কবে নাগাদ শেষ হবে, জানতে চাইলে বলেন, রুটি বানানোর কাজ করতে পারলে ঘরের বাকি কাজ শেষ করতে পারবেন। তবে এখন তাঁর পায়ে ব্যথা হয়। দাঁড়িয়ে থাকতে খুব কষ্ট হয়। ঘরটা বানাতে পারলেই আর হোটেলে দাঁড়িয়ে থেকে রাত পার করবেন না। নিজের ঘরে একটু শান্তিতে ঘুমাবেন।