আপনি পরিবারের বড় মেয়ে হলে মিলিয়ে দেখুন চ্যালেঞ্জগুলো...
এলডেস্ট ডটার সিনড্রোম (ইডিএস) এমন এক পারিবারিক ভূমিকা, যা পরিবারের বড় মেয়েরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই শৈশব থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়ে থাকেন। তবে বলে রাখা ভালো, ইডিএস কিন্তু মানসিক রোগ হিসেবে স্বীকৃত নয়। পরিবারের বড় মেয়েটি কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাবেন, তা পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ও ব্যক্তিগত কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। নিচে ১০টি চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করা হলো, যেসব কেবল পরিবারের বড় মেয়েদেরই মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যে কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন ছেলে–মেয়েনির্বিশেষে সব প্রথম সন্তানই। কয়েকটি শুধুই বড় মেয়েসন্তানদের বেলায় প্রযোজ্য।
পরিবারের সদস্যরা সাধারণত আশা করেন, বড় মেয়েটি তাঁর অন্য ভাইবোনের কাছে হয়ে উঠবেন ‘রোল মডেল’ বা সৃষ্টি করবেন ইতিবাচক উদাহরণ। হোক সেটা পড়াশোনা, আচার–আচরণ কিংবা অন্যান্য যেকোনো ক্ষেত্রে। কেবল বর্তমানের জন্যই নয়, পরিবার চায় তাদের প্রথম সন্তান পড়াশোনায় খুব ভালো করে ভবিষ্যতে সম্মানজনক ক্যারিয়ার গড়বেন। পরিবারের সব দায়দায়িত্ব পালন করবেন। রোল মডেল হয়ে ওঠার এই চাপ পরিবারের বড় মেয়েদের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে অনেক সময়।
বাংলা সিনেমায় নায়িকার শাবানার কিছু চরিত্রের কথা মনে করে দেখুন। এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মিল পাবেন। ইংরেজিতে এটি ‘প্যারেন্টিফিকেশন’ নামে পরিচিত। কোনো কোনো পরিবারে সবাই আশা করেন, বড় মেয়ে নিজেই মা-বাবার দায়িত্ব পালন করবেন। যেমন ঘরদোরের কাজকর্ম, ভাইবোনের দেখাশোনা, এমনকি মা–বাবাকে মানসিক সমর্থন জোগানো ইত্যাদি। এমনকি অল্প বয়সে পুরো পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্বও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদের ওপর এসে পড়ে।
সাধারণত দম্পতির কোলজুড়ে প্রথম সন্তান আসে কম বয়সে। মা-বাবারা তখন মাত্রই পেশাজীবনে ঢুকেছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা হয়তো সফলও হন, কিন্তু তত দিনে সন্তানও বড় হয়ে যায়। তাই অনেক পরিবারের বড় সন্তানদের ছোটবেলা কাটে সংগ্রাম আর অভাব দেখে। এ কারণে টাকার মূল্য তাঁরা অন্য সন্তানদের চেয়ে বেশি বোঝেন।
পরিবারের বড় মেয়েরা সাধারণত অন্য ভাইবোনদের তুলনায় কঠিন নিয়মকানুন ও প্রত্যাশার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন। মা–বাবারা অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের প্রথম সন্তানকে নিয়ে একটু বেশিই সতর্ক ও রক্ষণশীল হন। এ ক্ষেত্রে বড় মেয়েটির মধ্যে একটি দমবন্ধ হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে। তাঁর মনে হতে পারে, সবাই তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন।
মা-বাবার মধ্যে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সন্তানের প্রতি কিছুটা নমনীয় হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অন্যদিকে বড় সন্তানটির প্রতি তাঁরা থাকেন কঠোর। অনেক সময় দেখা যায়, ভাইবোনের মধ্যে মারামারি বা গন্ডগোল দেখা দিলে দোষটা আসলে কার, তা না জেনেই মা–বাবা বড় সন্তানকে বকাঝকা করেন, কখনো কখনো গায়ে হাত তোলেন পর্যন্ত। এর মারাত্মক ফলাফল সইতে হয় ওই বড় মেয়েকেই! কারণ, এতে পরিবারের ছোট সন্তানেরা বড় সন্তানকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করার সুযোগ পেয়ে যায়। তাঁকে ছোট করে কথা বলা এবং সব সময় তাঁর ওপর দোষ চাপানো হয়ে ওঠে খুব সহজ।
ছোট ভাইবোনদের খাওয়াদাওয়া, দেখাশোনা, তাদের পড়তে বসানো, জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব ইত্যাদি হামেশাই পরিবারের বড় মেয়ের ওপরে পড়ে। শুধু ছোট ভাইবোনদের দায়িত্বই নয়, বাড়ির বয়সীদের সেবাযত্নের ভারও তাঁরা কাঁধে তুলে নেন। এ ক্ষেত্রে ধরেই নেওয়া হয় বড় মেয়ে তাঁর মা–বাবার দায়দায়িত্ব লাঘবের জন্য এসব করতে বাধ্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা যায়, পরদিন বড় মেয়েটির গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা, তবুও তাঁকে গৃহস্থালির বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে। অথচ কাজগুলো বাড়ির অন্য সদস্যরাও অনায়াসে করতে পারেন। এসব অনেক সময় দুশ্চিন্তা ও অবসাদের মতো মানসিক সমস্যা তৈরি করে।
এসব ছাড়াও আমাদের উপমহাদেশে পরিবারের বড় মেয়ের ওপর আরও একটি চাপ থাকে। সেটি হলো দ্রুত বিয়ে করার চাপ। বিশেষ করে যেসব পরিবারে একাধিক মেয়েসন্তান থাকে, সেসব পরিবারের মেয়েদের পাড়াপ্রতিবেশীরা পর্যন্ত বোঝাতে থাকেন, ‘তোমার কারণে তোমার বোনদেরও বিয়েতে দেরি হবে।’ এই চাপে পড়ে অনেক সময়ই তাঁরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। বিবাহিত জীবনে সুখী না হলেও সহজে তাঁরা বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাঁরা ভাবেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তের কারণে তাঁদের ছোট বোনদের ‘ভালো বিয়ে’ হবে না।
মা-বাবারা ছোট-বড়, ছেলে-মেয়েনির্বিশেষে সব সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে, বিশেষ কারও ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশার বোঝা না চাপালে কেউই নিজেকে অসহায় ভাববেন না। সন্তানের বেড়ে উঠবে কোনোরকম বাধাবিঘ্ন ছাড়াই; গড়ে উঠবে সুখী পরিবার।
সূত্র: মডার্ন ইন্টিমেসি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া