২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পাঠকের কাছে ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানের সময়কার ছবি ও ভিডিও আহ্বান করাছিল প্রথম আলো। ‘ক্যামেরায় বিদ্রোহ’ নামের এই আয়োজনে সাড়া দেন বহু পাঠক। বিচারকদের দৃষ্টিতে দ্বিতীয় সেরা হয়েছে গালিব শাহরিয়ারের এই ছবিটি।
১৫ জুলাই সকালে আমাদের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে ক্যাম্পাসেই বন্ধুরা মিলে বসে ছিলাম। নানা বিষয়ে আড্ডা হচ্ছিল। এর মধ্যেই একবার ফেসবুকে ঢুঁ মেরে রীতিমতো আঁতকে উঠি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়েছে। দুই নারী শিক্ষার্থীকে মারতে উদ্যত সরকারের পেটোয়া বাহিনী—এমন একটি ছবিসহ হামলার অনেক ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেসব দেখে বারবার মনে হচ্ছিল—নাহ, এভাবে বসে থাকা যাবে না। ন্যায্য দাবির পক্ষে আমাদেরও রাস্তায় নামতে হবে।
আমি আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশের (এআইইউবি) ছাত্র। কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। কোটা সংস্কারের বিষয়ে বন্ধুদের সঙ্গেও কথা বললাম। তারাও রাস্তায় নামতে চাইল।
১৬ জুলাই আন্দোলনে অংশ নিতে কয়েকজন বন্ধুসহ বাসা থেকে বের হই। ক্যামেরাটাও সঙ্গে নিই। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকি আমি। রাস্তায় নেমে দেখি, আশপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আর কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছে। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত গোটা এলাকা। অনেকের হাতে ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড। সেসবে লেখা ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘ফ্যাসিস্টরা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত কেন, জবাব চাই জবাব চাই’ ইত্যাদি।
তখন বেলা সাড়ে তিনটা। আমরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটের সামনের পদচারী–সেতুর নিচে দাঁড়ানো। ক্যামেরা হাতে ছবি তুলছি। পুরস্কার বিজয়ী ছবিটিও সেখানেই তোলা। ছবির মধ্যমণি যুবকটি হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। মুখে দৃঢ়সংকল্পের ছাপ, চোখে স্বাধীনতার স্পৃহা। কেউ মুঠোফোনে মুহূর্তটি ধারণ করছে, কেউ আবার সহযোদ্ধার হাত ধরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। তাদের পোশাক বা শরীরী ভঙ্গি—সবকিছুতেই ফুটে উঠেছে এক গভীর প্রতিবাদী চেতনা। পাশাপাশি ব্যস্ত শহরের দৃশ্যপট, বিভিন্ন অবকাঠামো—সব মিলিয়ে মুহূর্তটি যেন আধুনিক শহরের বুকে এক আন্দোলনের জাগরণকে প্রতীকী করে তুলেছে।
আমি মনে করি, ছবিটি শুধু একটি মুহূর্ত নয়; বরং বাংলাদেশের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও চেতনার প্রতিচ্ছবি। আন্দোলনে তরুণ প্রজন্মের সাহসী পদক্ষেপকে আমার ক্যামেরায় ধরে রেখেছি। একজন আলোকচিত্রীর দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে চাই, দাবি প্রতিষ্ঠায় তরুণ প্রজন্মের নির্ভীকভাবে এগিয়ে আসা যেন জাতির প্রতিবাদের চেতনাকেই তুলে ধরেছে।
ছবি তোলার নেশা অনেক দিনের। স্ট্রিট ও লাইফস্টাইল ছবিই বেশি তোলা হয়। শুরুতে বাবার ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতাম। এরপর মুঠোফোনে তোলা শুরু করি। ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়ার সময় ফটোগ্রাফি ক্লাবে যুক্ত ছিলাম। তখন ছবি তোলার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়তে থাকে৷ তবে নিজের ক্যামেরা হাতে পেয়েছি অনেক পরে। কলেজের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এআইইউবি ফটোগ্রাফি ক্লাবের সঙ্গেও যুক্ত আছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ক্লাবের আয়োজিত একটি ছবি প্রদর্শনীতে আমার ছবিও নির্বাচিত হয়। এটাও আমাকে উৎসাহিত করেছে।
অনুলিখন: মো. জান্নাতুল নাঈম