‘বিয়ে করে ফেলো, নইলে একসময় একা হয়ে যাবা’, ‘এত দিন হলো বিয়ে হয়েছে, এখনো বাচ্চা নিচ্ছো না কেন?’, ‘ওর ক্যারিয়ার তো তোমার চেয়ে এগিয়ে গেল, তুমি পিছিয়ে পড়ছো কেন?’, ‘তোমার ফিগার তো ঠিকঠাকই ছিল, এখন এই অবস্থা কেন?’ রোজকার জীবনে এমন কত-না কথার আঘাতে জর্জরিত হতে হয়! কেউ ‘উপদেশ’দেন, আবার কেউ ‘তোমার ভালোর জন্যই বলছি’ জাতীয় কথার আবরণ জড়িয়ে আঘাত দেন, কেউ আবার সরাসরি খোঁচা মারেন। এমন মানুষের সংখ্যা গুনে শেষ করা মুশকিল। পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, প্রতিবেশী, সন্তানের বন্ধুর অভিভাবক—লিখতে থাকলে তালিকা কেবল লম্বাই হতে থাকবে!
এতজনের এত কথার আঘাত সামলাতে গিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অন্যের কথায় প্রভাবিত হয়ে জীবনে বড়সড় ভুল সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলতে পারেন আপনি। তাই জেনে নিন এমন আঘাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর কিছু উপায়।
আত্মশক্তিতে বলীয়ান হন
কথার আঘাত সামলাতে হলে আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। তবে এই উপদেশ দেওয়া যতটা সহজ, তা মেনে চলা ততটাই কঠিন! তাই প্রথমে আপনাকে নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। জীবনধারা রাখতে হবে স্বাস্থ্যকর। আর অবশ্যই নিজের জীবন সম্পর্কে, নিজের অবস্থান সম্পর্কে নিজের ধারণা রাখতে হবে পরিচ্ছন্ন। আপনি কে, আপনি কিসে যোগ্য, আপনার কিসে সুখ তা আপনি নিশ্চয়ই জানেন। নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত আপনি নিজে নিয়েছেন, কিংবা জীবনের কোনো মোড়ে আপনি হয়তো জীবনের ধাক্কায়ই এসে পৌঁছেছেন। পরিস্থিতি যেটাই হোক, সামলে নিন নিজের মতো করে। এগিয়ে চলুন আপন শক্তিতে। এদিক থেকে আপনি শক্তিশালী হলে কারও কথার আঘাত সামলানো আপনার জন্য সহজ হবে।
বিশ্বাস করুন, কারও কথায় কিছু এসে-যায় না
কত লোকে কত কথাই তো বলতে পারে। কথার ওপর তো আর ‘ট্যাক্স’ দিতে হয় না! আশপাশে উপদেশ দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। কিন্তু আপনি কারও কথার চাপে আপনার জীবন পিষ্ট হতে দেবেন না। সোজা ভাষায় ব্যাপারটা হলো, কারও কথাকে ‘পাত্তা’দেবেন না। অন্যের কথাকে অত গুরুত্ব দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই। আপনার জীবনের চালিকা শক্তি আপনিই, অন্য ব্যক্তি নন।
কথা ‘গায়ে মাখবেন না’
আপনি কারও কথা ‘গায়ে মাখবেন না’। ক্রমাগত কারও কথা খুব বেশি বিরক্তিকর মনে হতে থাকলে, সেটা তাঁকে বুঝিয়েও দিতে পারেন। আপনি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতে পারেন, ইচ্ছা করে হাই তুলতে পারেন।
ভেবে দেখুন, কথার পেছনেও কথা থাকতে পারে
যাঁরা অন্যকে কথার আঘাতে জর্জরিত করেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই নিজেদের জীবন হতাশায় পূর্ণ। কেননা যিনি নিজের জীবনে সুখী, তিনি কখনো অন্যকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে সুখ খোঁজেন না। হয়তো তিনি পারিবারিকভাবে নিগৃহীত; কিংবা হয়তো কর্মক্ষেত্রে তাঁকে নিয়ে অসন্তোষ চলছে। আপনি হয়তো ধারণাও করতে পারছেন না, ওই ব্যক্তির জীবনে কী চলছে। সঠিক ব্যাপারটা না জানলেও আপনি ধরে নিতে পারেন, আপনার প্রতি এসব বিষোদ্গার হয়তো তাঁর ব্যক্তিগত হতাশা, মানসিক চাপ বা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাই এমন কথায় নিজেকে ‘ছোট’ মনে করার কোনো কারণ নেই। এমনও হতে পারে, আপনার জীবনের কোনো অর্জনের কারণে তিনি আপনাকে হিংসা করেন। তাই নেতিবাচক কথায় আপনাকে দুর্বল করে দিতে চাচ্ছেন।
ক্ষমা করুন, ভুলে যান
কে কোন কারণে কোন কথা বলেছে, তা আপনার জানা নেই। অতশত না ভেবে মনে মনে ক্ষমা করে দিন ওই ব্যক্তিকে। আপনার জন্য তিনি কতটা ভাবেন, সেই কারণে বরং তাঁকে একটা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে কথার প্রসঙ্গ বদলে ফেলতে পারেন। এরপর অবশ্যই ভুলে যেতে চেষ্টা করুন নেতিবাচক কথার আঘাত। আপনি ক্ষমা করবেন আপনার নিজের জন্য, অন্যের কথার ভার নিজের ভেতর জমতে দেবেন না।
শিক্ষা নিন
যে ধরনের কথার কারণে আপনার মন খারাপ হলো, নিজের কাছে শপথ করুন, আপনি কখনো অমন কথা কাউকে বলবেন না। ভেবে দেখুন, এভাবে কথা বললে যে কারও আঘাত লাগতে পারে, সেই ব্যবহারিক জ্ঞান কিন্তু আপনার হয়েছে ওই ব্যক্তির কথার আঘাতেই।
বুদ্ধি খাটিয়ে মজার জবাব দিন
অনেক ক্ষেত্রেই কটু কথার জবাব সরাসরি দিলে ঝগড়া বাধার আশঙ্কা থাকে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে মজার কোনো উত্তর দিতে পারেন। হয়তো আপনার বাড়িতে এসে কেউ মাকড়সার জাল দেখে মন্তব্য করলেন। আপনি তাঁকে বলতে পারেন, এটা আপনার ‘নেচার প্রজেক্ট’!
জবাব দিতে পারেন ভদ্রভাবে
আপনি কটু কথার একটা মোক্ষম জবাব দিতেই পারেন, তবে অবশ্যই ভদ্রতা বজায় রেখে। অন্যের অভদ্র আচরণের জবাব দিতে গিয়ে আপনি কেন অভদ্র হয়ে উঠবেন, বলুন? আপনি ভদ্রভাবে তাঁকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘আমি কি আপনার জীবনে কোনো সমস্যার সৃষ্টি করেছি?’, কিংবা ‘আপনি কি জানেন, এ কথাগুলো শোনার পর অন্যের কেমন লাগে?’
সূত্র: রিডারস ডাইজেস্ট