একের পর এক অগ্নিদুর্ঘটনায় আহতদের যন্ত্রণা আর স্বজনদের আহাজারি দেখে অনেকের মনেই শঙ্কা, ‘এমন দুর্ভোগ আমার পরিবারেও নেমে আসবে না তো?’ অগ্নিদুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ গ্যাসসংক্রান্ত সমস্যা। জ্বালানি হিসেবে বহুল ব্যবহৃত এই উপকরণ ছাড়া দৈনন্দিন জীবন কল্পনা করাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। নগরজুড়েই গ্যাসের সংযোগ লাইন। তাই গ্যাসসংক্রান্ত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
রান্নাঘরে কাজ শুরুর আগে এবং কাজের শেষে রোজ কী করতে হবে, সপ্তাহ ঘুরলে কী করতে হবে, মাস পেরোলে কী করতে হবে, এই বিষয়গুলো জানা আবশ্যক। বাড়িতে গ্যাস লিকেজ শনাক্তকরণ যন্ত্র রাখুন। গ্যাসের চুলা বন্ধ রাখলেও লাইন কিংবা সিলিন্ডার থেকে অল্প অল্প করে গ্যাস নির্গত হওয়ার কারণে আবদ্ধ রান্নাঘরে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই বাড়ি থেকে ফিরেই আগে দরজা–জানালা খোলা রাখুন কিছু সময়। বদ্ধ রান্নাঘরে ম্যাচের কাঠি বা লাইটার জ্বালানো হলে জমে থাকা গ্যাসে মুহূর্তেই আগুন ধরে যেতে পারে। আবার চুলা জ্বালানো ছাড়াই কেবল বৈদ্যুতিক লাইন বা বৈদ্যুতিকসামগ্রীতে স্পার্কেও বদ্ধ রান্নাঘরে আগুন ধরতে পারে। সচেতনতামূলক নানা অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের তালিকাভুক্ত অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক এবং অ্যাশরে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রকৌশলী মো. হাসমতুজ্জামান।
রান্নাঘর–সংক্রান্ত কিছু বিষয়
কাজ শুরুর আগে সব জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। দরজা, সম্ভব হলে জানালার পাল্লাও বেশ কয়েকবার এদিক-ওদিক করে নেওয়া ভালো। এতে জমাট বাতাস সরে যাবে। ভেন্টিলেশন ফ্যান থাকলে চালু করে দিন। কিচেন হুড থাকলে চালিয়ে দিন।
রোজ কাজ শেষে শুকনা কাপড় দিয়ে চুলা মুছে রাখা জরুরি। প্রয়োজন হলে কাপড়টিকে ভিনেগার দিয়ে ভিজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। তবে পানি দিয়ে ভেজানো যাবে না।
ভালো মানের চুলা ব্যবহার করুন। কিছু অর্থ সাশ্রয় করতে গিয়ে নিম্নমানের চুলার কারণে জীবন সংশয়ও হতে পারে।
মাসে একবার বার্নারের ছিদ্র এবং ক্রেট পরিষ্কার করুন ।
লাইনের গ্যাস এবং গ্যাস সিলিন্ডারের চুলা আলাদা। পিউরিফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস (পিএনজি) এবং লিকুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) জন্যও আলাদা চুলা ব্যবহার করতে হয়। একটির জন্য নির্দিষ্ট চুলা অন্যটিতে ব্যবহার করা উচিত নয়।
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার সময় সতর্ক থাকুন। নিরাপত্তার নিয়মগুলো মেনে না চললে সহজেই সিলিন্ডার থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হতে পারে।
চুলায় সমস্যা হলে অভিজ্ঞ ব্যক্তির সাহায্য নিন।
গ্যাস সংযোগ
সংযোগ লাইন বসানোর সময় জাতীয় ভবন নির্মাণ বিধিমালা মেনে চলা আবশ্যক। বিধিমালা অনুসারে গ্যাসের লাইন অবশ্যই ভবনের দেয়াল থেকে অন্তত আধ ইঞ্চি, বৈদ্যুতিক লাইন থেকে আড়াই ইঞ্চি এবং উত্তপ্ত স্থান থেকে ৬ ইঞ্চি দূরত্বে স্থাপন করতে হয়। গ্যাসের লাইন কোনো দেয়াল বা স্ল্যাবের ভেতর করা যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে সংযোগ পাইপে সরাসরি রোদ না লাগে। ভালো মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করলে এবং সংযোগ পাইপের নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত কালো আবরণ থাকলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না।
গ্যাসসংযোগের নিরাপত্তায় করণীয়
সপ্তাহে একবার গ্যাস লিকেজ শনাক্তকরণ যন্ত্র দিয়ে গ্যাসলাইন পরীক্ষা করুন। তেল-গ্রিজ জমছে কি না, দেখুন।
গ্যাসলাইনের খুব কাছাকাছি জায়গায় ড্রিল করবেন না বা এমন কিছু করবেন না, যাতে লাইনের ক্ষতি হতে পারে।
গ্যাসলাইনের কাজ করাতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সহায়তা নিন।
অবৈধ সংযোগ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আরও যা
ধূমপান করবেন না। করলেও জ্বলন্ত সিগারেট কোথাও ফেলবেন না।
জ্বলন্ত ম্যাচের কাঠিও এদিক-ওদিক ফেলা যাবে না।
বাড়িতে দাহ্য বস্তু (যেমন কার্পেট) না রাখাই ভালো। ছোটখাটো অগ্নিদুর্ঘটনা দাহ্য বস্তুর উপস্থিতিতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটাতে পারে, এমন কাজ অন্যকে করতে দেখলে তাঁকে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিয়ে বলুন।