‘সুযোগ পেলে লেখাপড়ার যে নিয়ম বদলে দিতাম’ — এই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। পড়ুন নির্বাচিত লেখাগুলোর মধ্য থেকে একটি।
গ্রামের স্কুলে পড়েছি। গ্রামে পড়ার সময় বড় ভাই-বোনদের দেখেছি, কত কষ্ট করে নোট করে তারা পড়াশোনা করেছে, সাধারণ জ্ঞানের প্রতি তুমুল আগ্রহ ছিল তখন। আমরা এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেতাম প্রাইভেট পড়ার জন্য, তা-ও তুমুল আগ্রহ নিয়ে। দেখা যেত, গ্রামের একটা স্কুলে মাত্র কয়েকজনের জিপিএ-৫ আসত। কখনো কখনো আবার পুরো গ্রাম থেকে একজনও জিপিএ-৫ পেত না।
তবে আমার কখনো মনে হয়নি, এই জিপিএ-৫ না পাওয়া শিক্ষার্থীরা মেধার দিক দিয়ে পিছিয়ে আছেন; বরং প্রত্যেকেই বেশ মেধাবী। গ্রামে শিক্ষকেরা খুব আন্তরিকভাবে বিভিন্ন বিষয়ের মৌলিক শিক্ষা দিতেন। এ কারণেই বাংলা, গণিত ও ইংরেজির ভিত্তি মজবুত থাকায় গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়ে যেতেন।
উচ্চমাধ্যমিকের জন্য ঢাকায় পড়তে এসে দেখলাম, এখানে জ্ঞানের চর্চা হয় না, এখানে হয় নম্বর চর্চা ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির প্রতিযোগিতা। একই সংস্কৃতি সাম্প্রতিক কালে গ্রামেও ছড়িয়ে গিয়েছে। জিপিএ-৫ না পেলে এখন শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনও জিপিএ-৫ না পেলে অনেক সময় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, অবজ্ঞা করছেন। এই ভয়াল সংস্কৃতি থেকে বের হতে হলে আমার মনে হয়, পরীক্ষাপদ্ধতির সংস্কার প্রয়োজন। গতানুগতিক পদ্ধতিতে উন্মুক্তভাবে যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশও বন্ধ হওয়া দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বিভিন্ন কোচিং থেকে যেভাবে প্রথম স্থান, দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারীর ছবি প্রকাশ করা হয়। আমার মনে হয়, এটা সমাজের ওপর এক রকম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। উন্নত বিশ্বে যার যার ফলাফল শুধু তাকেই জানানো হয়। বাংলাদেশেও এই পদ্ধতি চালু হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক হিংসা বন্ধ হবে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষার নির্যাস লাভে আগ্রহী হবে। শিক্ষাব্যবস্থায়ও উন্নতি আসবে বলে মনে করি।