আমাদের বলা হয়, শুধু পরিশ্রম করলে হবে না। কাজ করতে হবে স্মার্টভাবে। এই কথায় নানা রকম ঘাপলা আছে। তবে সে ঘাপলায় একটু পরে যাই। আগে বলি, কতটা কাজ করব।
একটা ‘হাইপোথিসিস’ আছে—রুল অব হানড্রেড। এই হাইপোথিসিস বলে, যেকোনো দক্ষতা গড়ে তুলতে ১ বছরে ১০০ ঘণ্টা সেই কাজটার চর্চা করতে হয়। অর্থাৎ দিনে মাত্র ১৮ মিনিট কাজটার চর্চা করলেই চলে। দিনে ১৮ মিনিট সময় দিয়ে ১ বছরে ১০০ ঘণ্টা মোট ব্যয় করলে সেই দক্ষতার সেরা বা টপ ৫ শতাংশে জায়গা করে নেওয়া সম্ভব।
এই হাইপোথিসিস কতটা সত্য, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটা আদতে প্রতিদিন নিয়ম করে চর্চার কথা বলে, লেগে থাকার কথা বলে। লেগে থাকলে যেকোনো কাজে দক্ষ হওয়া সম্ভব।
কোডিংয়ের জন্য বলা হয়, ১০০ ঘণ্টা কোডিং করলে প্রাথমিক থেকে মোটামুটি মাধ্যমিক পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব। ১০ হাজার ঘণ্টা ব্যয় করলে সেরা ১ শতাংশে থাকা সম্ভব বলে ধরা হয়। শুধু কোডিং নয়, এ কথা সাঁতার, সাইক্লিং, বেহালা বাজানো কিংবা কারাতে—যেকোনো ক্ষেত্রের জন্যই সত্য বলে মনে করেন অনেকে।
নানাজন নানা কথা বলেন। সব মিলিয়ে সারাংশ হলো, স্মার্ট বলতে বোঝানো হয় একটা কাজ যত সহজে করা যাবে, ততটা সহজে করা। সহজ কাজ কঠিন করে করাকে নিশ্চয়ই স্মার্টনেস বলা যায় না। ফলে কাজটা করতে যেমন হবে, তেমনি কত সহজে করা যায়, তা–ও দেখতে হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা মনে পড়ল। ‘সহজ কথা যায় না কওয়া সহজে।’ বড় একটা বাক্য বা ভাব ৫-১০ শব্দে প্রকাশ করা আদতে বেশ কঠিন। বিজ্ঞাপনী সংস্থার কপিরাইটারদের বেতন তাই অনেক। ১০ লাইনের কোড ৫ লাইনে নামিয়ে আনা গেলে মেমোরি কমপ্লেক্সিটি অর্ধেকে নেমে আসে। কঠিন কাজ বটে। উইন্ডোজ অপারেটরে আমরা যে পেইন্ট ব্যবহার করি, তাতে ১০ মিনিটের কাজ ২ মিনিটে করা যায় ফটোশপে। সহজ, তবে কঠিন!
তাই স্মার্ট হওয়ার মানে আমার কাছে এটাই—চিন্তা করে করা। তবে ঘাপলাটা এখানেই। সবার স্মার্টনেস সমান নয়। আবার না ভেবে একই ধাঁচে পরিশ্রম করে গেলেও তো কাজের কাজ হয় না। কাজেই স্মার্টভাবে কাজ করার কথা ভাবলে আমাদের মাথায় যে ব্যাপক চালচিত্র চালু হয়ে যায়, তার চেয়ে ভেবেচিন্তে, ধাপে ধাপে ও নিয়মিত কাজ করার দিকেই আদতে জোর দেওয়া ভালো।
আপনি যে কাজে দক্ষ, একটু ভেবে দেখুন, সেই কাজটা করতে আপনি অনেক চাপ নেন না। যে কাজে অনেক চাপ নেন, তাতে দক্ষ হওয়া কঠিন। আর্থসামাজিক ও পারিবারিক নানা জটিলতা আমাদের আছে। সে জন্য বলা হয়, মানুষ একসঙ্গে এক জীবনে ১৪টার বেশি শাখায় দক্ষ হতে পারে না।
তবে প্রতিদিন ২০ মিনিট সময় দেওয়া আদতে কঠিন কিছু তো নয়। সমস্যাটা কোথায়? বদহজমে। একদিনে ২-৩ ঘণ্টা করে, এক সপ্তাহ ওভাবে করার পর আর ভালো লাগে না। কাজেই শুরুতে বাড়তি চাপ নেওয়ার মানে নেই। রোজ ২০ মিনিট। ব্যস!
এক বছর লেগে থাকুন। সেরা ৫ শতাংশে না হলেও দক্ষ হয়ে উঠবেন কিছুটা হলেও। এটাই আসল কথা। সময় বেশি লাগুক, কম লাগুক, পাশের বাসার কেউ বা পরিচিত কাউকে ঈর্ষা না করে যদি নিজের কাজ করে যান, তাহলে বোধ হয় আর কিছু লাগে না।
এক জীবনে আমরা অনেক কিছুই করতে চাই। এবার নিজেকেই জিজ্ঞেস করুন তো, এর কয়টার পেছনে আমরা দিনে ২০ মিনিট সময় দিই?