সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনেকের বুক আর মাথা ভারী ভারী লাগে। বিছানা ছেড়ে উঠতে গেলেই ভর করে নানা রকম দুশ্চিন্তা। কেন এমন হয়? জানেন হয়তো, এর নাম ‘মর্নিং অ্যাংজাইটি’, সহজ বাংলায় যেটাকে আমরা বলতে পারি সকালের দুশ্চিন্তা। প্রত্যেকেই দুশ্চিন্তায় ভোগেন এবং এটা মানবজীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যেমন চাকরির ইন্টারভিউ বা স্কুলের পরীক্ষার কারণে ঘুম থেকে উঠে একটা দুশ্চিন্তা দেখা দিতেই পারে। কিন্তু এমন সব দুশ্চিন্তা যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন একে গভীরতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা দরকার। নানা কারণেই এমন হতে পারে। এর কিছু কারণ ও মুক্তির উপায় জেনে নেওয়া যাক...
জৈবিক কারণ
কর্টিসোল হরমোনটি নিঃসৃত হয় অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে, একে বলা হয় স্ট্রেস হরমোন বা মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তার হরমোন। সকালে ঘুম ভাঙার পর কর্টিসোল অনেক বেশি থাকে। কর্টিসোল অ্যাওয়েকিং রেসপন্স বা সিএআর এমন একটি ঘটনা, যার কারণে আমরা সবাই সকালের দুশ্চিন্তার মুখোমুখি হই।
অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার
সকালের দুশ্চিন্তা জেনারেলাইজড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার বা জিএডির মতো রোগের কারণ হতে পারে। জিএডি যাঁদের আছে, তাঁদের অন্তত ছয় মাস উদ্বেগ ও ভয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হতে পারে। এর কারণে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি, মনোযোগে সমস্যা ও অস্থিরতা।
ঘুমের মান খারাপ
অনিদ্রা, ঘুমে ব্যাঘাত কিংবা ঘুমের মান খারাপ হলে দুশ্চিন্তা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি রাতে কম ঘুমের কারণে সকালের দুশ্চিন্তার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
চিনি ও ক্যাফেইন গ্রহণ
আমরা যা খাই, তা আমাদের অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার সঙ্গে দুশ্চিন্তার সম্পর্ক আছে। অন্য একটি গবেষণায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া এবং দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বেশি পরিমাণে ক্যাফেইন গ্রহণও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।
শারীরিক অসুস্থতা
কারও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক অসুস্থতা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। চিকিৎসা গ্রহণ এ ধরনের দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
জীবনের চাপ
জীবনের নানা চাপের কারণে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়। যেমন চাকরি চলে যাওয়া বা বদলের কারণে জীবনযাত্রার ব্যবস্থায় পরিবর্তন; শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের সম্মুখীন হওয়া; প্রিয়জনের মৃত্যু বা ছেড়ে চলে যাওয়া; সম্পর্কে ফাটল ধরা; অর্থনৈতিক উদ্বেগ ইত্যাদি।
ক্যাফেইন, অ্যালকোহল ও নিকোটিন গ্রহণ না করা।
সকালে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের অনুশীলন করা।
টু–ডু লিস্ট তৈরি করে মেনে চলা, যাতে কোনো দুশ্চিন্তা ভর করতে না পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা।
চাপের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
নেতিবাচক চিন্তা দূরে রাখা।
এমন একটি রুটিন তৈরি করা, যাতে সকালটা হয় মনে রাখার মতো।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস