একটি ক্যাকটাসপ্রেমের গল্প

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাকটাস নিয়ে বসেন চিন্ময় দাশ
ছবি: সংগৃহীত

শাটল ট্রেনের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এই ক্যাম্পাসের প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই এক তরুণকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁর সামনে পাতা থাকে একটা ফোল্ডিং টেবিল। তাতে অনেক প্রজাতির ক্যাকটাস। ভাবতে পারেন, কোনো প্রদর্শনী হয়তো! না, কোনো প্রদর্শনী নয়। বিক্রির উদ্দেশ্যে গাছগুলো নিয়ে এখানে বসেছেন তিনি।

এই তরুণের নাম চিন্ময় দাশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী। এই বিভাগে প্রতি সেমিস্টারে মাঠ সফর থাকে, শিক্ষার্থীদের কোথাও না কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। এ রকমই এক সফরে একবার চট্টগ্রামের চুনতি গিয়েছিলেন চিন্ময়। সেখানে বিশাল ক্যাকটাস দেখে এই কণ্টকাকীর্ণ গাছের প্রেমে পড়ে যান। ফিরে আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে আসেন ক্যাকটাসের কিছু কাটিং।

করোনার সময় ক্যাকটাসগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রেখেই বাড়ি চলে যান চিন্ময়। ফিরে এসে দেখলেন, যত্ন-আত্তি ছাড়াই গাছগুলো বড় হয়ে গেছে। বুঝলেন, গাছগুলোর টিকে থাকার ক্ষমতা অনেক বেশি। তখন ক্যাকটাসপ্রেমটা আরও গাঢ় হলো। ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে যুক্ত হলেন। ক্যাকটাস নিয়ে করা বিভিন্ন পোস্ট, কোথায় কী ধরনের ক্যাকটাস পাওয়া যায়—দেখতে লাগলেন। সুবিধামতো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তা সংগ্রহ করা শুরু করলেন। চিন্ময় জানালেন, লালমনিরহাট, চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, বগুড়াসহ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো থেকে মূলত ক্যাকটাস সংগ্রহ করেন তিনি।

চিন্ময়ের সংগ্রহে বর্তমানে ২০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে

নিয়মিত পরিচর্যা ও সংগ্রহের ফলে সংগ্রহশালার একসময় টইটম্বুর দশা হলো। চিন্ময় তখন উদ্ভিদগুলো বিক্রির উদ্যোগ নিলেন। প্রথম দিকে ফেসবুকে স্টোরি দিতেন, পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রুপগুলোয় প্রচার শুরু করেন। সেখানে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর স্টল দেওয়া শুরু করেন। এ কাজে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ছিল। চিন্ময় বলেন, রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমার হল মাস্টারদা সূর্য সেনের দূরত্ব অনেক। রিকশায় করে প্ল্যান্টগুলো আনা-নেওয়া করতে হয়। অনেক সময় ঝাঁকিতে ক্যাকটাস ভেঙে যায়, পড়ে যায় বা মাটি থেকে মূল উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়। এ রকম অনেকবার হয়েছে।

চিন্ময়ের সংগ্রহে বর্তমানে ২০ প্রজাতির ক্যাকটাস রয়েছে। ক্যাকটাসগুলো তিনি ভালোবাসেন। জানালেন, জীবনে চাকরি, ব্যবসা যা–ই করি, ক্যাকটাস সব সময় সঙ্গে থাকবে।