স্পষ্টতই জগতের মানুষ দুই রকম—কারও কাছে আশা বা স্বপ্ন একধরনের বিভ্রম, মরীচিকা; আরেক দলের কাছে আশা জীবনেরই অন্য নাম। আশা-নিরাশার পরস্পরবিরোধী অবস্থান থেকে চূড়ান্ত বিচারে কিন্তু জিতে যায় আশাবাদী স্বাপ্নিক মানুষের দল। মানুষ আশায় বাঁচে। বাঁচে স্বপ্নের শক্তিতে। স্বপ্ন থাকে বলেই মানুষ হারতে হারতে জিতে যায়। ধ্বংসের প্রান্ত থেকে ঘুরে দাঁড়ায় নির্মাণের নতুন নকশা বুকে নিয়ে। কেবল স্বপ্নকে সম্বল করে কলের শ্রমিক, খেতের মজুর, খেটে-খাওয়া প্রান্তিকজন হয়ে ওঠেন রাষ্ট্রনায়ক। কিংবা পৃথিবী বদলে দেওয়া পরিবর্তনের রূপকার।
স্বপ্নবিহীন মানুষ মূলত মৃত মানুষ। পৃথিবীতে দুঃখ থাকবে, থাকবে জীবনের মৃত্যু; তাই বলে তো স্বপ্নের মৃত্যু হতে পারে না। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ—এ কথা ভুলে গেলে চলবে কেন! যখন বন্ধ হয়ে আসে জীবনের দশদিক, দুয়ার এঁটে ঘুমানোর আয়োজন করে জীবনের শেষ সম্ভাবনাটুকু, তখনো ইচ্ছারা জেগে থাকে নির্ঘুম। জেগে থাকে স্বপ্ন। নচিকেতা গানে গানে বলেছেন, যখন সময় থমকে দাঁড়ায়, নিরাশার পাখি দুহাত বাড়ায়/ খুঁজে নিয়ে মন নির্জন কোণ কী আর করে তখন/ স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন দেখে মন।
আজ ২৯ এপ্রিল, বিশ্ব ইচ্ছা দিবস (ওয়ার্ল্ড উইশ ডে)। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘মেইক অ্যা উইশ ফাউন্ডেশন’-এর উদ্যোগে দিনটি চালু হয়। লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত সাত বছরের ক্রিস গ্রেসিয়াস বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হতে চেয়েছিল। এটি জানতে পেরে স্থানীয় পুলিশ বিভাগ ক্রিসকে এক দিনের জন্য পুলিশ বানিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করে। দিনটি ছিল ১৯৮০ সালের ২৯ এপ্রিল। এর বেশ পর, ২০১০ সাল থেকে দিনটি উইশ ডে হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে পালিত হতে থাকে।
ইচ্ছা, স্বপ্ন, শখ, আকাঙ্ক্ষা, যা-ই বলি না কেন, মূলত এটিই জীবনের জ্বালানি। ব্যক্তিভেদে ইচ্ছাটা হতে পারে বিশাল কিংবা খুব ছোট্ট। কিন্তু এর গুরুত্ব কোনোভাবেই কম কিছু নয়। নক্ষত্রের রাত নাটকের সেই সংলাপ নিশ্চয়ই মনে আছে, শখ কোনো তুচ্ছ করার বিষয় নয়!
ডেজ অব দ্য ইয়ার অবলম্বনে