‘বিনা লাভের দোকান’ পরিচালনা করেন খুলনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা
‘বিনা লাভের দোকান’ পরিচালনা করেন খুলনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা

খুলনায় শিক্ষার্থীদের ‘বিনা লাভের দোকান’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই টাস্কফোর্সের একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন হৃদয় ঘরামী। বাজার তদারক করতে গিয়ে তিনি দেখতে পান, একটি পণ্য কৃষকের কাছ থেকে খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত আসতে পাঁচ থেকে সাতবার হাতবদল হয়। অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখনই। এর জন্য অনেকটাই মাঝপথের মধ্যস্বত্বভোগীরা দায়ী।

সমস্যার খোঁজ পাওয়ার পর হৃদয় সমাধান নিয়েও ভাবতে শুরু করেন। ‘মধ্যস্বত্বভোগীদের জায়গাটা যদি আমরা দখল করি, তাহলে কেমন হয়’—এই ভাবনা থেকেই খুলনার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিয়ে চালু করেন ‘বিনা লাভের দোকান’। অর্থাৎ, পণ্য সংগ্রহ করে লাভ ছাড়াই বিক্রির উদ্যোগ নেন তাঁরা।

দোকানটি পরিচালনা করছেন খুলনার বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই দলে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের আরিফুল ইসলাম, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের শাহিন হোসেন, ফাস্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিভাগের প্রভাস সরকার, রূপসা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) ইব্রাহিম খলিল, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের খালিদ সাইফুল্লাহ, সরকারি আজম খান কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেখ রাফসান জানীসহ অনেকেই আছেন।

১৮ অক্টোবর খুলনার শিববাড়ি মোড়ে দোকানটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতি কেজি মসুর ডাল ৯৯ টাকা, আলু ৫০, লালশাক ২৫, ভারতীয় ও দেশি পেঁয়াজ যথাক্রমে কেজিপ্রতি ৬৫ ও ১০০, লাউ ৩০ থেকে ৪০ এবং ডিম ১২ টাকায় বিক্রি করেন তাঁরা। তবে শর্ত হলো, একজন ক্রেতা এক কেজির বেশি পণ্য বা এক ডজনের বেশি ডিম কিনতে পারবেন না। রূপসা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের শিক্ষার্থী হৃদয় ঘরামী বলেন, ‘১০০ কেজি করে আলু, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ, ৫০ কেজি লালশাক, ১০০ পিস লাউ ও ৫০০ পিস ডিম বিক্রির জন্য এনেছিলাম। চাহিদা এত বেশি ছিল যে মাত্র তিন ঘণ্টায় সব বিক্রি হয়ে গেছে। ৩০০ থেকে ৫০০ জন পণ্যগুলো পেয়েছেন।’

কম দামে ও তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যে যশোরের বিভিন্ন গ্রাম–গঞ্জ থেকে পণ্য সংগ্রহ করেন শিক্ষার্থীরা। খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। বিক্রয়ের পর দেখা যায়, মূলধন ৩০ হাজার টাকাই ফেরত এসেছে। পুরো টাকাই শিক্ষার্থীরা পকেট খরচ থেকে দিয়েছেন। এই কার্যক্রমের একটি বিশেষ দিক হলো—পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে প্রচারণা। কাগজের প্যাকেটে ও কাপড়ের সুতা দিয়ে তৈরি জালিব্যাগে পণ্য সরবরাহ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এখন থেকে প্রতি শুক্রবারে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ‘বিনা লাভের দোকান’ বসবে বলে জানালেন তাঁরা। দাম আরও বাড়লে দোকানের সময়সূচিও বাড়ানো হবে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল অবস্থায় না আসা পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে জানিয়ে হৃদয় ঘরামী যোগ করেন, ‘আমরা যদি কৃষক ও মূল ক্রেতাকে সরাসরি যুক্ত করতে পারি, হাতবদলের সংস্কৃতি থাকবে না। এভাবে সিন্ডিকেট আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চাওয়া।’