রোজগার যেমনই হোক, অর্থ নিয়ে যেকোনো পরিবারেই সৃষ্টি হতে পারে অনর্থ। দুর্মূল্যের এই বাজারে সীমিত আয়ের পরিবারে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানো নিয়েই সৃষ্টি হতে পারে মনোমালিন্য। শখের কেনাকাটা বা ‘সামাজিক মর্যাদা’ রক্ষার্থে কেনাকাটার মতো বিষয় নিয়েও অশান্তি হওয়াটা বিচিত্র কিছু নয়। তবে রোজগার যেমনই হোক, পারিবারিক জীবনে টাকাপয়সা নিয়ে অশান্তি হয় কিন্তু পরিবারের সদস্যদের কিছু ভুলের কারণেই।
আপনি হয়তো অর্থনৈতিক সংকটে আছেন। বুঝতে পারছেন, সেখানে আপনার জীবনসঙ্গীর তেমন কিছু করার সুযোগ নেই। তা বলে কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে আলাপ বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। পরিস্থিতি ভালো হোক কিংবা মন্দ, আয়-ব্যয় সম্পর্কে আলাপ করতে হবে। দুজনে মিলে পরামর্শ করতে হবে, পরিকল্পনা করতে হবে। তবে এই আলাপ হতে হবে শান্তিপূর্ণ। তা ছাড়া হুট করে বড় খরচের প্রসঙ্গ তোলাও ঠিক নয়। পরিবারের কেউ বুদ্ধি করে কখনো আর্থিক উন্নতিতে সহায়তা করে থাকলে তাঁর প্রশংসা করতে ভুলবেন না।
পরিবারের সদস্যসংখ্যা যতই হোক না কেন, নিজেদের মতো করে একটা ‘বাজেট’ তৈরি করে ফেলুন। ‘বাজেট’ অনুযায়ী খরচ করলে পরবর্তী সময় পারিবারিক অশান্তির ঝুঁকি কমে। মূল্যস্ফীতির বাজারে আপনার ‘বাজেট’ ব্যর্থ হতেই পারে। তাই বিকল্প ভাবনা ভেবে রাখা, সঞ্চয়ের প্রচেষ্টা করা আর খরচ কমানোর উপায় খোঁজার কাজটাও করতে হবে। ‘বাজেট’-এ ভারসাম্য রাখতে না পেরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া পারিবারিক অশান্তির এক বড় কারণ।
পরিবারে উপার্জনকারী ব্যক্তির সংখ্যা যতই হোক, পরিবারের কর্তা-কর্ত্রী সবারই কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক বিষয়ে যুক্ত থাকা উচিত। নইলে যিনি অর্থ উপার্জন করেন না, তিনি একসময় নিজেকে গুরুত্বহীন মনে করতে পারেন। তাই পরিকল্পনা এবং খরচে দুজনেরই অংশগ্রহণ থাকতে হবে। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া থাকতে হবে।
প্রতিটি টাকাই পারিবারিক যৌথ খাতে খরচ করা উচিত নয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য ব্যক্তিগত খরচের জন্য কিছুটা অর্থ বরাদ্দ রাখা উচিত। পারিবারিক আয় বুঝে ঠিক করতে হবে এর পরিমাণ। কিন্তু ব্যক্তিগত খরচের বিষয়ে পরবর্তী সময় ‘জিজ্ঞাসাবাদ’ করা যাবে না। এটি একেবারেই স্বাধীনভাবে খরচ করার জন্য থাকতে হবে।
কার ‘দোষে’ সংসারে অভাব দেখা দিচ্ছে, দম্পতিদের ভেতর এ নিয়ে তর্কবিতর্ক হয়ে থাকে। এটা কিন্তু ভীষণ অসুস্থ এক চর্চা। কে কোন সময় ‘বাজে’ খরচ করেছে, কে কবে নিজেকে ‘সামলে’ চলতে পারেনি—এসব প্রসঙ্গ কখনোই তুলবেন না।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পদের বিষয় গোপন না রাখাই ভালো। এসব বিষয়ে হঠাৎ ‘সত্য’ উদ্ঘাটিত হলে অশান্তির সৃষ্টি হতে পারে। ঋণ থেকে থাকলেও তা জীবনসঙ্গীকে জানিয়ে রাখা উচিত।
আবেগের বশবর্তী হয়ে মানুষ অনেক সময়ই বাড়তি খরচ করে ফেলে। এমনটা করা কিন্তু উচিত নয়। প্রতিটি সামাজিক আয়োজনেই যে ‘মুখরক্ষা’ করতে দামি উপহার দিতে হবে কিংবা যেকোনো উপলক্ষেই যে অনেক বেশি খরচ করে ফেলতে হবে, তার কিন্তু কোনো মানে নেই। অতিরিক্ত খরচ না করেও আপনি আনন্দময় কোনো উদ্যাপনের আয়োজন করতে পারেন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট