ওজন ব্যবহার করে যেসব ব্যায়াম করা হয়, সেগুলো যে কেবল পেশিই সুগঠিত করে, তা কিন্তু নয়। এসব ব্যায়ামে ক্যালরিও খরচ হয় বেশি। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্যও এসব ব্যায়াম দারুণ কার্যকর। হাড়ক্ষয় রোধ ও দেহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যও এসব ব্যায়াম ভালো। তবে এসব ব্যায়াম করতে হয় নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে। নইলে এ ধরনের শরীরচর্চায় হিতে বিপরীত হতে পারে।
শুরুর দিকে আপনাকে অল্প ওজন ব্যবহার করে ব্যায়াম করতে হবে। ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে ওজনের মাত্রা। ব্যায়ামের বিভিন্ন ধাপের মাঝে বিরতিও চাই। তা ছাড়া সপ্তাহে এমন একাধিক দিনও রাখতে হবে, যেদিন আপনি ব্যায়াম করবেন না। এমনটাই বলছিলেন রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের প্যাসিফিক ফিটনেসের সুপারভাইজার ও ট্রেইনার আনোয়ার করিম।
শুরুর কথা
আগে থেকে এ ধরনের ব্যায়ামে অভ্যস্ত না থাকলে একজন প্রশিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শুরু করা ভালো। এসব ব্যায়ামের সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা প্রয়োজন। ভুল দেহভঙ্গিতে ওজন তুললে ব্যথার ঝুঁকি বাড়বে। প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরে ব্যায়ামটা করলে আরও একটা সুবিধা আছে। শরীরচর্চার ফাঁকে ফাঁকে একই উদ্দেশ্য নিয়ে আসা অন্যান্য মানুষের সঙ্গে গল্প করতে পারবেন। তাতে উৎসাহ বাড়বে। এ ধরনের ব্যায়াম শুরুর আগে বয়সটাও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তারুণ্যের দৃপ্ততায় একজন মানুষ যত সহজে এসব ব্যায়ামে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির পক্ষে সেটি ততটা সহজ হবে না। তবে ব্যায়াম শুরু করার ১০-১৫ দিন পর আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, এই ব্যায়ামে কতটা অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারছে আপনার শরীর। ওজন উত্তোলন করার ক্ষেত্রে আপনার শরীর আরও দুই কেজি বাড়তি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে কি না। আর এসব ব্যায়ামের জন্য সঠিক পোশাক বাছাই করাও আবশ্যক।
হরেক রকম ব্যায়াম
ওয়েট ট্রেনিংয়ের অর্থ কিন্তু কেবল ভারী ভারী ওজন তোলাই নয়। নিজের দেহের ওজনকে কাজে লাগিয়েও এ ধরনের ব্যায়াম করা যায়। এই যেমন লাঞ্জ, স্কোয়াটস, প্ল্যাঙ্ক, কাফ রেইজেস। ডাম্বেল দিয়েও হতে পারে নানান রকম ব্যায়াম—বাইসেপ কার্লস, ট্রাইসেপস এক্সটেনশনস, ডাম্বেল সিঙ্গেল-আর্ম রোস, ডাম্বেল শোল্ডার প্রেস, ডাম্বেল চেস্ট প্রেস। ১৫-২০ কেজি ওজন নিয়ে ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে আপনি ৩০০-৪০০ ক্যালরি পোড়াতে পারেন। আপনি যতটা ভারী ব্যায়াম করতে পারবেন, আপনার ক্যালরি খরচের মাত্রাটাও হবে তত বেশি।
ধাপ মেনে চলুন
ওজন ব্যবহার করে ব্যায়াম করার আগে আপনাকে অন্তত ১৫-২০ মিনিট ‘ওয়ার্ম আপ’ করতে হবে। এ সময়টাতে আপনি ‘কার্ডিও’ করতে পারেন। হতে পারে হাঁটাহাঁটি। ট্রেডমিলেও চলতে পারে এই হাঁটাহাঁটি। কিংবা চালাতে পারেন সাইকেল। এ ধরনের যেকোনো ব্যায়াম দিয়ে আগে শরীর গরম করে নিন। এরপর অন্তত পাঁচ মিনিট ‘স্ট্রেচিং’। তারপর শুরু করুন মূল ব্যায়াম।
তিনটি ‘সেট’ বা ধাপ দিয়ে শুরু করতে পারেন ব্যায়াম। প্রথম ধাপে ৮-১২ বার ব্যায়ামটি করতে পারেন (৮-১২ রিপিটেশন)। দ্বিতীয় ধাপেও তা–ই। শেষ ধাপে সংখ্যাটা কমিয়ে আনতে পারেন। ওজনের ব্যায়ামের সময় শ্বাস আটকে রাখা উচিত নয়। ব্যায়াম শেষে অবশ্যই ঠিকঠাক ‘কুল ডাউন’ করতে হবে। শরীর অভ্যস্ত হয়ে উঠলে ধীরে ধীরে ব্যায়ামের মাত্রা বাড়াতে পারবেন। এমনকি একসময় পাঁচ ‘সেট’ ব্যায়াম করতেও সক্ষম হয়ে উঠবেন আপনি।
শুধু একটা নির্দিষ্ট পেশিকে সুগঠিত করার প্রচেষ্টার চাইতে দেহের বিভিন্ন পেশির প্রতি যত্নবান হওয়া ভালো। তাতে শরীরটা সার্বিকভাবে ‘ফিট’ থাকে। তবে কোনো ব্যায়াম করতে গিয়ে কোনো পেশিতে ব্যথা বোধ করলে সেই পেশির ব্যায়াম কিছুদিন বন্ধ রাখারও প্রয়োজন পড়ে।
বিরতিটা জরুরি
ব্যায়ামের সময় যে তিনটি সেট বা ধাপের কথা বলা হলো, এসব সেটের মাঝে অন্তত এক মিনিট বিরতি দেওয়া খুবই জরুরি। একটানা এ ধরনের ব্যায়াম করতে নেই। ব্যায়ামের সময় শরীর যেন পানিশূন্য হয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখুন। আবার ধরুন, তিন দিন টানা এ ধরনের ব্যায়াম করলেন। এরপর কিন্তু একটা দিন বিরতি দেওয়া চাই। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া হলে ব্যায়ামের উপকারিতার সবটুকু পাবেন আপনি।