আমরা যখন প্রথম লিখতে শিখি, তখন থেকেই সঠিক নিয়ম মানলে কাজটা সহজ হয়ে যায়
আমরা যখন প্রথম লিখতে শিখি, তখন থেকেই সঠিক নিয়ম মানলে কাজটা সহজ হয়ে যায়

যেভাবে শিশুর হাতের লেখা সুন্দর হবে

২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলায় ছিল বর্ণলিখন প্রতিযোগিতা। এতে স্কুলপড়ুয়া শিশু–কিশোরেরা অংশ নিয়েছিল তিন বিভাগে। ‘ক’ বিভাগে প্রথম ঢাকার হলি ক্রস বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্ধী অদ্রিকা হালদার জানাল ওর হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার রহস্য—

হাতের লেখা একধরনের শিল্প। ইংরেজিতে একে বলে ‘ক্যালিগ্রাফি’, বাংলায় ‘লিপিকলা’। ছবি আঁকা আমার শখ। আমি ছবি আঁকা শিখি, বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিই। ঠিক তেমনই হাতের লেখাও আমার শখের কাজ। হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য আমি নিয়মিত অনুশীলন করি। যেকোনো কিছুতেই ভালো করতে চাইলে প্রয়োজন অনুশীলন।

আমরা যখন প্রথম লিখতে শিখি, তখন থেকেই সঠিক নিয়ম মানলে কাজটা সহজ হয়ে যায়। আমাদের বাংলা বর্ণমালা খুব সুন্দর; তবে লিখতে গেলে বোঝা যায় ইংরেজির তুলনায় বাংলা বর্ণমালা বেশ জটিল। এ কারণে আমি বর্ণগুলো বারবার সঠিক নিয়মে লেখার অনুশীলন করি।

সঠিক নিয়ম বলতে প্রথমেই বর্ণগুলো ভালোভাবে চিনতে হবে। তারপর খেয়াল করতে হবে বর্ণগুলোর আকার। কোন বর্ণ বড় করে লিখতে হবে, কোনটা ছোট করে, আমি এসব খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করি। কোনো কোনো বর্ণের মাত্রা আছে, কোনোটায় নেই, কোনোটা আবার অর্ধমাত্রা।

লেখার সময় কোন বর্ণ কোথা থেকে শুরু করতে হবে, এটাও গুরুত্বপূর্ণ। ধরো তুমি লিখবে ‘ল’। এখন তুমি যদি প্রথমে একটা সোজা টান দিয়ে তারপর ডান পাশ থেকে দুটি প্যাঁচ দিয়ে ‘ল’ লেখো, তাহলে হবে এক রকম। আবার যদি ‘ল’ শুরু করো বাঁ পাশ থেকে, তাহলে দেখতে হবে আরেক রকম। তাই অনুশীলনের জন্য ডট লাইনের ওপর হাত ঘোরালে ভালো ফল পাবে। এ ছাড়া একটা কিছু পড়ার পর বারবার লিখতে থাকলে হাতের লেখা সুন্দর ও দ্রুত করা সম্ভব।

লেখা সোজা রাখাও একটা কঠিন কাজ। এ জন্য প্রথম দিকে রুলটানা খাতা ব্যবহার করতে পারো। অথবা ঘর বানিয়েও লেখা যায়। আমি আরেকটা কাজ করি, কোথাও সুন্দর হাতের লেখা দেখলেই অনুকরণ করার চেষ্টা করি। তুমিও করতে পারো, এটা দারুণ কাজে দেয়।

‘ক’ বিভাগে প্রথম অদ্রিকা হালদারের হাতে লেখা

আরও কিছু বিষয় আছে। যেমন লেখার জায়গায় যেন যথেষ্ট আলো থাকে। লেখার সময় পিঠটা সোজা রেখো। কলম বা পেনসিল ধরার সময় হাত বেশি শক্ত করে ফেলো না। লেখার সরঞ্জাম, যেমন কলম, পেনসিল, ইরেজার, কাগজ কেনার সময় দেখেশুনে নিয়ো। এসবও লেখা সুন্দর করতে ভূমিকা রাখে।

‘খ’ বিভাগে তৃতীয় নাজিবা নূরের হাতের লেখা

আমার স্কুলে হাতের লেখায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। পরীক্ষার খাতায় সুন্দর হাতের লেখা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদা নম্বর বরাদ্দ থাকে। স্কুলে এ ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকলে হাতের লেখা সুন্দর করায় আগ্রহ জাগে। বাসায় মা–ও সব সময় আমার হাতের লেখার ব্যাপারে সচেতন। আমার বড় বোনের হাতের লেখা সুন্দর বলে স্কুলে সুনাম আছে। বোনকে দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি।

‘গ’ বিভাগে তৃতীয় আবিদ হোসেনের হাতের লেখা

তোমার বাসায় এমন কেউ না থাকলেও অসুবিধা নেই। আশপাশে সুন্দর করে লিখতে পারেন, এমন কারও কাছ থেকে সাহায্য নাও। ইউটিউবে হাতের লেখা নিয়ে অনেক ভালো ভালো ভিডিও আছে, চাইলে সেখান থেকেও ধারণা নিতে পারো।

খ বিভাগে দ্বিতীয় শাহিরা বিনতে মুনিরের হাতের লেখা

হাতের লেখার বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিলেও তোমার আগ্রহ বাড়বে। আমি যেমন গত ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো আয়োজিত বর্ণমেলায় বর্ণলিখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে ‘ক’ বিভাগে প্রথম হয়েছি। এমন অর্জন আমার জীবনে প্রথম। এতে আমার আগ্রহ আরও বেড়েছে।

খেয়াল করে দেখো, সুন্দর হাতের লেখা আমাদের পড়ার আগ্রহও বাড়িয়ে দেয়। তাই হাতের লেখা সুন্দর করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর এ জন্য চেষ্টার বিকল্প নেই। সব সময় চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। বারবার অনুশীলন করলে আর আগ্রহ থাকলে শুধু হাতের লেখা নয়—সবকিছুই সুন্দর করা সম্ভব।