কেবল নবজাতকই নয়, সব শিশুর ক্ষেত্রেই গোসলে চাই বাড়তি সতর্কতা। নবজাতক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের গোসলের নানা দিক জানালেন শিশুবিশেষজ্ঞ ও জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুল ইসলাম।
অনেকেরই ধারণা, জন্মের পরপরই নবজাতকের গোসল করানো উচিত। তবে এটি নবজাতকের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জন্মের পরপরই নবজাতককে গোসল করানো উচিত নয়। সাধারণত গরমের সময় তিন দিন আর শীতের সময় পাঁচ দিন পর্যন্ত নবজাতককে গোসল বা শরীর মোছানোর বিষয়ে আমরা নিষেধ করে থাকি। কারণ, জন্মের সময় নবজাতকের শরীরে ‘ভার্নিক্স কেসিওসা’ নামে একধরনের সাদাটে আবরণ থাকে, যা মায়ের গর্ভ থেকেই নিয়ে আসে তারা। এই আবরণের একটা বিশেষ প্রভাব শিশুর ওপর রয়েছে, যেটা তার শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে। জন্মের পরপর গোসল করিয়ে এই ভার্নিক্স কেসিওসা সরিয়ে ফেললে বিভিন্ন ধরনের রোগ সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে শিশুকে ফেলে দেওয়া হয়।
এমনিতে শিশুদের ত্বক খুব একটা রোগপ্রতিরোধী নয়। মৌসুমি আবহাওয়ায় মানিয়ে নেওয়া শিশুর পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ সময় খুব সহজেই শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শরীরের বিভিন্ন অংশ বিশেষ করে চামড়া বা অন্যান্য অংশে খুব দ্রুতই জীবাণু বাসা বাঁধতে পারে।
তাই মৌসুম বুঝে তিন বা পাঁচ দিন পর শিশুর শরীর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। কাজটি অবশ্যই দিনের মাঝামাঝি সময় বেলা ১১টা থেকে ২টার মধ্যে করতে হবে। কারণ, এ সময় প্রকৃতিতে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও উত্তাপ থাকে, শিশুর শরীরের তাপমাত্রার সঙ্গে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। গোসলের এই কাজটি কম সময়ের মধ্যে শেষ করে শিশুকে পরিষ্কার শুকনা কাপড় দিয়ে আবৃত করে দিতে হবে। বেশি সময় ধরে গোসল করালে হাইপোথারমিয়া বা শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে শিশু মারাত্মক রকম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ থেকে নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শীতকালে নবজাতককে ১ থেকে ২ দিন পরপর গোসল করাতে হবে।
শিশুদের গোসলের স্বাভাবিক সময় দিনের মধ্যভাগ। বেশি ঠান্ডা বা বেশি গরম অবস্থায় শিশুকে গোসল না করিয়ে মোটামুটি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। অনেকেই গোসল করানোর আগে শিশুর শরীরে তেল মালিশ করেন, এটা বিজ্ঞানসম্মত নয়। শিশুর শরীরে তেল দেওয়ার পর পানি দিলে শরীরে পানি ঠিকভাবে লাগবে না। এ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য উপযোগী গ্লিসারিনসমৃদ্ধ সাবান কিংবা শিশুর ত্বকের উপযোগী শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসবেরও প্রয়োজন হয় না। এর পরিবর্তে নরম কাপড় দিয়ে শিশুকে মুছে পরিষ্কার করলেই যথেষ্ট। যেহেতু শিশুদের ত্বক তুলনামূলক বেশি সংবেদনশীল, তাই সাবান কিংবা শ্যাম্পু কম ব্যবহার করা উচিত।
অনেকেই ভাবেন, শীতের সময় শিশুদের প্রতিদিন গোসলের প্রয়োজন নেই। আসলে আমাদের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশে শীত, গ্রীষ্ম উভয় আবহাওয়াতেই প্রতিদিন গোসল করানো ভালো। শীতের সময় শিশুরা প্রতিদিন গোসল করলে চনমনে বোধ করবে, ঘুম এবং খাবার হজমসহ অন্য শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াগুলো ভালোভাবে চলবে।
শীতের এ সময় গোসলের জন্য রোদযুক্ত জায়গা বেছে নিন। এতে গোসলের সময় শিশু যেমন আরাম পাবে, তেমনি পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তার শরীরে পৌঁছাবে।
অনেকেই শিশুকে সাঁতার শেখানোর জন্য সুইমিংপুলে নিয়ে যান। এ ক্ষেত্রে সুইমিংপুলের পানির তাপমাত্রা শিশুর শরীরের তাপমাত্রার কাছাকাছি কিংবা পরিবেশের উষ্ণ তাপমাত্রার কাছাকাছি রাখতে হবে। ৫ বছরের নিচের শিশুদের ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি সময় টানা সুইমিংপুলে রাখা যাবে না।
শিশুকে যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাতের নখ বড় রাখা যাবে না। গোসল করানোর আগে হাতের গয়না খুলে রাখুন। হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
গোসলের আগে প্রয়োজনীয় সব অনুষঙ্গ গুছিয়ে নিন। কোনো অবস্থাতেই কাপড় খুলে রোদে শুইয়ে রাখা যাবে না।
সরাসরি সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। নিজের হাতে ফেনা তুলে সেই ফেনা দিয়ে শিশুকে পরিষ্কার করুন।
গোসলের সময় শিশুর কানে যাতে পানি না ঢোকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
শীতে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে। এতে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে। খসখসে ভাব দেখা যায়। ত্বক আর্দ্র রাখতে গোসল শেষে নরম তোয়ালে দিয়ে শিশুর শরীর মুছে দিতে হবে। এরপর ত্বক আর্দ্র থাকতেই গায়ে লোশন মাখিয়ে দিতে হবে। এতে শীতের শুষ্কতা থেকে রেহাই পাবে শিশুদের ত্বক। এরপর দ্রুত শিশুকে শীতের পোশাক পরাতে হবে।