শীত শেষে বসন্ত এসেছে। শীতের অনুষঙ্গ বাক্সবন্দী করে ফেলার পালা এবার। তবে শীতে ব্যবহৃত পোশাক, লেপ, কাঁথা, কম্বল তুলে রাখারও কিন্তু কিছু প্রস্তুতি আছে। না হলে পড়তে পারেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। জেনে নিন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ—
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান জানালেন, শীতে ব্যবহৃত এসব অনুষঙ্গ আপাতদৃষ্টিতে পরিষ্কার মনে হলেও এসবে ধুলা লেগে থাকতে পারে। এমনকি আটকে থাকতে পারে মারাত্মক জীবাণুও। পরিষ্কার না করে তুলে রাখা হলে পরবর্তী সময়ে এসব বের করার সময় কিংবা নাড়াচাড়া করার সময় নানান রকম সমস্যা হতে পারে। নাক সুড়সুড় বা নাক থেকে পানি পড়ার মতো সমস্যা তো হয়ই; কারও বারবার হাঁচি হতে থাকে, কারও আবার হয় কাশি। অনেকের ক্ষেত্রে এই কাশি সহজে নিরাময়ও হয় না, দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসকষ্টেরও অন্যতম এক কারণ হলো পুরোনো ধুলা। ত্বকে জীবাণুর সংক্রমণও হতে দেখা যায়, যার মধ্যে ছত্রাকের সংক্রমণ বেশ মারাত্মক আকার ধারণ করার ঝুঁকি থাকে। সব মিলিয়ে ওই বাড়িতে পুরোপুরি সুস্থ থাকাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই যেসব অনুষঙ্গ শীতে বের করা হয়েছিল, সেসব পরিষ্কার করে তবেই ওঠাতে হবে।
ঢাকার গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসমিয়া জান্নাত জানালেন শীতের অনুষঙ্গ পরিষ্কার করার কিছু নিয়ম—
যেসব অনুষঙ্গ ধোয়া যায় (যেমন পশমি কম্বলের সুতি কভার), সেসব সাবান-পানিতে ভিজিয়ে রাখুন ১৫-২০ মিনিট। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সুতি–জাতীয় কাপড় (যেমন শাল, সোয়েটার বা লেপ-কম্বলের কভার) কিংবা হাতে বোনা কম্বল ভিজিয়ে রাখতে গরম পানি ব্যবহার করুন। পানির তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হলে ভালো হয় অর্থাৎ একেবারে মৃদু গরম নয়, মোটামুটি মাঝারি তাপমাত্রার পানি। তবে মিশ্র তন্তু দিয়ে তৈরি অনুষঙ্গ ভিজিয়ে রাখতে গরম পানি ব্যবহার করা যাবে না, এসব উত্তাপে কুঁকড়ে যায়।
ধোয়া কাপড় রোদে শুকিয়ে নিন। তবে টানলে বাড়ে, এমন কাপড় ঝুলিয়ে রাখবেন না।
অনেক ক্ষেত্রেই দামি অনুষঙ্গের গায়ে তা পরিষ্কারের নিয়মাবলি যুক্ত থাকে। নিয়ম মেনে পরিষ্কার করতে হবে সেসব।
যেসব অনুষঙ্গ ধোয়া যায় না (যেমন পশমি কম্বল), সেসব কড়া রোদে দিয়ে রাখতে হবে একটানা কয়েক দিন। ভালোভাবে রোদ লাগানোর পর ঝেড়ে নিন। ঝাড়ার সময় অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং আশপাশে শিশুদের রাখা যাবে না। ঝাড়া শেষ হলে সেই জায়গাও পরিষ্কার করে ফেলুন। যেসব জিনিস ড্রাইওয়াশ করতে হবে, সেসবও একই নিয়মে কেবল রোদে দিয়েই উঠিয়ে রাখুন। পরের বার ব্যবহারের আগে ড্রাইওয়াশ করে নেবেন।
সংরক্ষণের নিয়মও জেনে নিন তাসমিয়া জান্নাতের কাছ থেকে—
পরিষ্কার করা সব অনুষঙ্গ আলাদা আলাদা প্যাকেটে মুখবন্ধ অবস্থায় উঠিয়ে রাখা ভালো। কোনো বায়ুরোধী স্থানে রাখা সবচেয়ে ভালো। বায়ুরোধী বড় বাক্স বা ট্রাঙ্ক কাজে লাগাতে পারেন। আলমারি বা ক্যাবিনেটে রাখলেও অবশ্য খুব একটা ক্ষতি নেই। তবে রাখার আগে ভেতরটা ভালোভাবে মুছে পরিষ্কার করে নিতেও ভুলবেন না।
যেখানেই রাখা হোক, সঙ্গে ছোট্ট একটা মুখবন্ধ প্লাস্টিকের বাক্সে করে কিছুটা কর্পূর রেখে দিন। পোকামাকড় দূরে থাকবে, ওই স্থানের আর্দ্রতাও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। আলমারি বা ক্যাবিনেটের প্রতিটি তাকেই এ রকম একটি ছোট্ট বাক্স রাখা ভালো।
কর্পূরের পরিবর্তে সিলিকার প্যাকেটও রাখতে পারেন কাপড় বা কম্বলের ভাঁজে। তবে সিলিকা ব্যবহারে সতর্কতা আবশ্যক। অনেক সময় আলমারি খোলার সময় শিশু ও পোষা প্রাণী সেখানে দৌড়ে গিয়ে ঢুকে পড়ে। আবার কাপড় বের করার সময় অসাবধানে সিলিকার প্যাকেটটি পড়েও যেতে পারে। তাতে শিশু বা পোষা প্রাণী ওই প্যাকেটের নাগাল পেয়ে যেতে পারে। তারা যদি কোনোভাবে সিলিকা মুখে দেয় কিংবা সিলিকা স্পর্শ করে হাতমুখে দিয়ে ফেলে, তাহলে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।