বাসায় কি ডেঙ্গুর জটিল রোগীর চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব

অনেক হাসপাতালেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী আসছেন এ মৌসুমে। এসব রোগীর অনেকেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক অনেককে পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। কিন্তু হাসপাতালে জায়গা নেই। এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায়? এমন রোগীর বাসায় চিকিৎসা নেওয়া কতটা নিরাপদ?

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর শরীরে যখন পানির অভাব দেখা দেয়, তখনই বাঁধে বিপত্তি। যে পরিস্থিতিতে তরল খাবারের মাধ্যমে এই পানির প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হয় না, তখনই প্রয়োজন হয় শিরাপথে স্যালাইন দেওয়ার। পানির অভাবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, মারাত্মক পরিস্থিতিতে রোগীর জীবননাশের শঙ্কাও সৃষ্টি হয়। সে জন্য রোগীকে প্রয়োজনমাফিক স্যালাইন দিতেই হবে। হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়াটাই রোগীর জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে নিতান্তই নিরুপায় হয়ে পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দক্ষ নার্সের সহায়তায় বাসায় স্যালাইন নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু রোগীকে রক্ত কিংবা রক্তের কোনো অংশ (যেমন প্লাটিলেট) দিতে হলে হাসপাতাল ছাড়া গত্যন্তর নেই। বাসায় জটিল ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রসঙ্গে এমন নানা তথ্য জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনূর শারমিন।

বাসায় চিকিৎসার ঝুঁকি

• স্যালাইন যে গতিতে দেওয়ার কথা, নার্সের অনুপস্থিতিতে তার গতি কমে গেলে কিংবা বেড়ে গেলে বাড়ির লোকেরা অনেক সময়ই বুঝতে পারেন না। আবার বুঝতে পারলেও তাঁদের পক্ষে সেটিকে ঠিক করে নেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু কম গতিতে স্যালাইন গেলে রোগীর পানির ঘাটতি রয়েই যাবে। অনেক সময় স্যালাইনের গতি একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। আর বেশি গতিতে স্যালাইন গেলে শরীরে পানি জমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

• রোগী বাথরুমে গেলে স্যালাইন খুলে রাখা এবং বাথরুম থেকে ফিরে আসার পর পুনরায় স্যালাইন লাগানোর জন্যও প্রশিক্ষিত ব্যক্তির প্রয়োজন পড়ে।

রোগীর শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসক অনেককে পরামর্শ দিচ্ছেন হাসপাতালে ভর্তি হতে

• অনেক সময় স্যালাইনের লাইনে রক্ত চলে আসে কিংবা বাতাস ঢুকে যায়। কখনো স্যালাইনের জন্য করা ক্যানুলা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যায় এবং জায়গাটা ফুলে যায়। তাই ঠিক কোন মুহূর্তে যে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির প্রয়োজন হবে, আগে থেকে তা ধারণা করা মুশকিল।

• রোগীর যে প্রতিদিন একই পরিমাণ স্যালাইনের প্রয়োজন হবে, তা নয়। তা ছাড়া রোজ রক্তের কিছু পরীক্ষাও করানো লাগতে পারে। এসব কিছুর জন্যই চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে থাকা জরুরি। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে একেক বেলাতেই বদলে যেতে পারে প্রয়োজনীয় স্যালাইনের পরিমাণ। তাই শিশুদের চিকিৎসা হাসপাতালেই হওয়া উচিত।

• হুট করে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে বাসায় তৎক্ষণাৎ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।

• বাসায় স্যালাইন দেওয়া হলে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে।

যখন নিরুপায়

ঝুঁকিগুলো তো জানা হলো। কিন্তু নিতান্ত বাধ্য হয়েই যদি বাসায় স্যালাইন দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে কী করতে হবে, তা–ও জেনে নিন শাহনূর শারমিনের কাছ থেকে—

• চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপ করুন। বাসায় স্যালাইন নেওয়াটা অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে কি না, জেনে নিন। চিকিৎসা বাসায় হলেও হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। হাসপাতালের রোগীর ছুটি হলেই সেখানে ভর্তি হওয়ার জন্য নাম লিখিয়ে রাখার ব্যবস্থা থাকলে তা–ও করে রাখুন।

প্রতিদিনই রাজধানীসহ সারা দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

• বাসায় স্যালাইন দিতে অবশ্যই দক্ষ নার্সের সহায়তা নিন। হুটহাট প্রয়োজনে কোথায় কাকে পাওয়া যাবে, জেনে রাখুন। জরুরি মুহূর্তে তাঁকে না পেলে বিকল্প হিসেবে কে কাজ করতে পারবেন, সেই খোঁজটাও নিয়ে রাখুন।

• বাসায় একবার স্যালাইন লাগানো হলে রোগীকে সাবধানে রাখুন। যেখানে ক্যানুলা করা হয়েছে, সেখানটা ভেজানো যাবে না। বেশি নাড়াচড়া করা যাবে না।

• স্যালাইন চালু হওয়ার পর স্যালাইনের গতির দিকে কীভাবে নজর রাখতে হবে এবং কোন পরিস্থিতিতে নার্সকে আনার ব্যবস্থা করতে হবে, জেনে নিন তাঁর কাছ থেকে।

• কী ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে, কখন রক্তচাপ, পালস বা অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখতে হবে, কখন কোন রক্তের পরীক্ষা করাতে হবে এবং কখন কোন বিষয়টি চিকিৎসককে জানাতে হবে, সেই বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলুন।