মাসল মেমোরি কী, কীভাবে গড়ে তোলা যায়

ব্যাপারটা কি খেয়াল করেছেন? সাঁতার শেখার শুরুতে যতটা মনোযোগ দিয়ে পেশিগুলোকে সঞ্চালন করতে হয়, শিখে ফেলার পর কিন্তু সাঁতারের সময় আর ততটা মনোযোগ দিতে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে একই ধরনের কাজ করতে করতে পেশি সেই কাজে অভ্যস্ত হয়ে যায়।

পেশির প্রশিক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর সেই ধারাতেই কাজটি করতে থাকার দক্ষতা সৃষ্টি হয়
ছবি: নকশা

শারীরিক কসরত, খেলাধুলা, কম্পিউটার টাইপিং, সেলাই, কুশিকাঁটার কাজ, বাদ্যযন্ত্র বাজানো—অনেক কাজের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। আর তাই এ ধরনের কাজে নিজের সর্বোচ্চটা দিতে ওই কাজটি বারবার করার কোনো বিকল্প নেই। বারবার একই কাজ করতে করতে পেশির অভ্যস্ত হয়ে পড়ার এ ব্যাপারটিকেই বলে মাসল মেমোরি বা পেশিস্মৃতি। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, স্মৃতিধারণ তো মস্তিষ্কের কাজ, তাহলে পেশি কীভাবে স্মৃতি সংরক্ষণ করে? পুরো ব্যাপারটা সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।

মস্তিষ্কের মাধ্যমেই দেহের পেশিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। এই নিয়ন্ত্রণের জন্য স্নায়ুকোষ অর্থাৎ নিউরনের এক বিশাল নেটওয়ার্ক কাজ করে। পেশির সঙ্গে স্নায়ুকোষের এই সংযোগের মাধ্যমেই পেশির প্রশিক্ষণ হয়ে যায়। কাজটি করতে করতে কাজের একটা প্যাটার্ন বা ধারা অবচেতনভাবে তৈরি করে ফেলি আমরা। যেভাবে করলে কাজটি আমাদের জন্য সহজ হয়, সেই ধারাটিই আমরা বেছে নিয়ে থাকি। পেশির এই প্রশিক্ষণটা হয়ে যাওয়ার পর সেই ধারাতেই কাজটি করতে থাকার দক্ষতা সৃষ্টি হয়। পরে কাজটি করার সময় মনোযোগ একটু কম হলেও ছন্দপতন হয় না। কাজটি সূক্ষ্ম ধরনের হলেও একই ছন্দে কাজ করাটা কঠিন হয় না।

মাসল মেমোরি তৈরি হয়ে গেলে যেকোনো কাজের গতিও বাড়ে

মাসল মেমোরি তৈরি হয়ে গেলে যেকোনো কাজের গতিও বাড়ে। অনায়াসে, স্বাচ্ছন্দ্যে কাজটা করা সম্ভব হয়। কারণ, কাজটা আপনি সবচেয়ে সহজে কীভাবে করতে পারবেন, তার একটা ধারা তৈরি হয়েই আছে পেশি আর স্নায়ুকোষের নেটওয়ার্কে। এমনকি ওই কাজটি অনেক দিন করা না হলেও নেটওয়ার্কের এ ধারাটা কিন্তু নষ্ট হয় না। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন করে শুরু করতে গেলেও মাসল মেমোরির কারণে কাজটিতে পুনরায় দক্ষ হয়ে ওঠাও সহজ হয়।

ধরুন, আপনি পেশি গঠনের জন্য শরীরচর্চা করছেন। প্রথম দিকেই কিন্তু পেশি সুগঠিত হয়ে উঠবে না। বরং ধীরে ধীরে শরীরচর্চার ধাপগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে উঠতে পেশির দৃঢ়তা বাড়বে। এরপর পেশি দৃশ্যমানভাবে সুগঠিত হয়ে উঠতে শুরু করে। দীর্ঘদিন ব্যায়াম করার পর চর্চাটা যদি বাদ পড়ে যায়, তাতেও কিন্তু পেশির দৃঢ়তা বজায় থাকে দীর্ঘদিন, যদিও তখন আর সুগঠিত থাকে না। তবে কিছুদিন পর যখন আবার একইভাবে ব্যায়াম শুরু করা হয়, তখন পেশি গঠনের কাজটা সহজ হয়ে যায়, পেশি সুগঠিত হতে সময়ও লাগে কম।

শরীরচর্চার ধাপগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে উঠতে পেশির দৃঢ়তা বাড়বে

তাই যে কাজেই আপনি দক্ষতা প্রদর্শন করতে চান, তা করার আগে বারবার অনুশীলন করতেই হবে। নিয়মিত চর্চাই আসলে অনায়াস দক্ষতার পূর্বশর্ত। তাই তারকা খেলোয়াড়দেরও ম্যাচের আগে সঠিকভাবে অনুশীলন করে নিতে হয়, ম্যাচ না থাকলেও নিজেকে রাখতে হয় চর্চার ভেতর। তারকা সংগীতশিল্পীকেও গলা সাধতে হয় নিয়মিত। তবেই মাসল মেমোরির সুফল পান তাঁরা।