তাঁরা প্রমিত ভাষা আর আবৃত্তির চর্চা করেন

বছরজুড়েই আবৃত্তি মঞ্চের থাকে নানা রকম আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

নানা আঞ্চলিক ভাষা আর মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত ভাষার কারণে প্রমিত বাংলা থেকে আমরা দূরে সরে যাচ্ছি না তো? এ বিষয়টিই ভাবিয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একঝাঁক উদ্যমী তরুণকে। প্রমিত বাংলা ভাষার চর্চাটা আরও জোরালো করার একটা তাগিদ অনুভব করছিলেন তাঁরা। সেই তাগিদ থেকেই ২০০০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয় ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ’।

আবৃত্তি মঞ্চের সক্রিয় সদস্যের সংখ্যা ৩০ জনের বেশি, যাঁরা মূলত প্রমিত বাংলা উচ্চারণ ও কবিতা আবৃত্তি নিয়ে কাজ করেন। মাসে একাধিকবার মিলিত হয়ে সাংগঠনিক কাজ, বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে আবৃত্তি মঞ্চের পরিচিতি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের সবচেয়ে জনপ্রিয় আয়োজনের নাম ‘প্রমিত উচ্চারণ, উপস্থাপনা ও আবৃত্তি কর্মশালা’। এই কর্মশালার মাধ্যমে প্রতি বছর দুই শ প্রশিক্ষণার্থীকে প্রমিত বাংলা ভাষার পাঠ দেওয়া হয়। এটির ষড়বিংশ আবর্তন সম্প্রতি সম্পন্ন হয়েছে। আবৃত্তি উৎসব সংগঠনটির আরেক উদ্যোগ। এতে সারা দেশের আবৃত্তি শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। গুণী কবি ও সাহিত্যিকদের সম্মাননা দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত ১০টি আবৃত্তি উৎসব করেছে আবৃত্তি মঞ্চ। শুধু উৎসব-কর্মশালাই নয়, ‘পলাশ ছোঁয়া শব্দবাণের খোঁজে’ নামে একটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতাও করেন তাঁরা। এতে চট্টগ্রামের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন, ঋতুভিত্তিক আয়োজন ছাড়াও কবিদের স্মরণে বছরজুড়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়।

সংগঠনের ব্যতিক্রমী উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে পথ আবৃত্তি, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ‘বিজয়ের পঙ্‌ক্তিমালা’ ও ‘কবি ও কবিতা’। ‘পড়ুয়া’ ও ‘বৈঠক’ আবৃত্তি মঞ্চের আরও দুটি উদ্যোগ, যেখানে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করা হয়। বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান খোঁজা হয়। ‘প্রেক্ষা’ নামে একটি ই-ম্যাগাজিন প্রকাশ করে এই সংগঠন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক সজীব তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘সাহিত্যের পাঠ-পর্যালোচনা নিয়ে এই ই-ম্যাগাজিন।’

প্রমিত বাংলা ভাষা জানা যেমন জরুরি, তেমনি জড়তা দূর করা, বক্তৃতা দিতে পারা, উপস্থাপনার দক্ষতাও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সংগঠনের সদস্যরা। এসব বিষয়েই প্রশিক্ষণ দেয় আবৃত্তি মঞ্চ। এ কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগের শিক্ষার্থীরা তো বটেই; চট্টগ্রাম শহর, এমনকি আশপাশের জেলাগুলো থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা এখানে ভিড় করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব তঞ্চঙ্গ্যা বললেন, ‘এযাবৎ ১০টি জাতীয় মানের আবৃত্তি উৎসব আমরা করেছি। গুণীজনদের সম্মাননা দিয়েছি। আমাদের সদস্যরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে নিয়মিত আবৃত্তি ও উপস্থাপনা করে। আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বেগবান করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রতিবছর একটি আর্থিক অনুদান দেয়।’

প্রমিত ভাষাকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া; বাংলা কবিতা, সাহিত্য ও কবিতা আবৃত্তির প্রতি ভালোবাসা তৈরি করা আবৃত্তি মঞ্চের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সংগঠনটির সদস্যরা।