অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়াম অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর। মিসরীয় মমি থেকে সমসাময়িক শিল্প পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্কৃতি ও মানুষের গল্প বলে অ্যাশমোলিয়ান। এ বছর আমি সেখানে আর্টিস্ট-ইন-রেসিডেন্স হয়েছিলাম। সাধারণ দর্শনার্থী ও রেসিডেন্স আর্টিস্টের মধ্যে পার্থক্য আছে। একজন দর্শনার্থী হয়তো এক দিনে সম্পূর্ণ মিউজিয়ামটি পরিদর্শন করেন। সেখানে আমি এক মাস সময় নিয়ে নানান সংগ্রহ খুব কাছ থেকে দেখা ও বোঝার সুযোগ পেয়েছি। ১৯ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমি অ্যাশমোলিয়ানে ছিলাম। এ সময় মিউজিয়ামের ডিসপ্লেতে যে সংগ্রহগুলো রয়েছে, সেগুলো ছাড়াও ‘ইস্টার্ন আর্ট’ জামিল সেন্টারে কোম্পানি আমলের চিত্র ও ফটোগ্রাফ, কালীঘাট, বাংলার পটচিত্র, মাইকা পেইন্টিং, মোগল, পাহাড়ি ও রাজস্থানি মিনিয়েচারের সংগ্রহ দেখেছি। ঐতিহাসিক পটভূমিগুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। বলে রাখি, শুধু অ্যাশমোলিয়ান নয়, এই এক মাসে অক্সফোর্ডের অন্যান্য মিউজিয়াম যেমন পিট রিভার্স, মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রি, বিভিন্ন লাইব্রেরি যেমন বডলিয়ান লাইব্রেরি, ইউরোপের তিনটি প্রাচীনতম লাইব্রেরি (ওয়েসটন লাইব্রেরি, ওয়াটার স্টোন ও বাকওয়েলস বুক শপ) এবং অক্সফোর্ডের বিভিন্ন কলেজ, শিল্প-প্রদর্শনী, থিয়েটার, পার্ক ইত্যাদি পরিদর্শন করেছি।
এই প্রোগ্রামের বেশ কিছু দিক আমার কাছে অবিশ্বাস্য, অসাধারণ ও প্রথম ছিল। প্রথমেই বলতে হয়, অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামের ইস্টার্ন আর্ট স্টাডিরুম, জামিল সেন্টারের সংগ্রহগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখার সুযোগ। জামিল সেন্টারের অসাধারণ সংগ্রহভান্ডারে প্রবেশ করে বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। হাজার বছরের পুরোনো সব নিদর্শন নিজ হাতে স্পর্শ করা, এ এক অদ্ভুত অনুভূতি! এ পর্যন্ত যত মিউজিয়াম পরিদর্শন করেছি, সেখানে দেখেছি নানা যুগের নানা সময়ের নিদর্শন ভাগ ভাগ করে সাজানো থাকে। কিন্তু অ্যাশমোলিয়ান মিউজিয়ামে ভাগ করার সঙ্গে সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ স্থাপন করা হয়েছে। নানা যুগের বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে কী সম্পর্ক ছিল, কী পরিবর্তন হয়েছে, বাণিজ্যের ফলে কী কী রূপান্তর হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ের বিশদ বর্ণনা ও নিদর্শন সাজানো হয়েছে।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জামিল সেন্টারে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন, চিত্র, ভাস্কর্য স্টাডি করেছি। সে সময় মিউজিয়ামের কর্মীদের যে সাহায্য, সহযোগিতা ও আন্তরিকতা পেয়েছি, ভাষায় তা প্রকাশ করা যাবে না। তাঁদের জ্ঞান, মেধা, বিনয়, দক্ষতা এবং সবচেয়ে বড় কথা, শিল্পী-গবেষকদের সাহায্য করার যে স্পৃহা, সত্যিই তা প্রশংসনীয়।
অক্সফোর্ডের জেসাস কলেজের স্মৃতিও কখনো ভুলতে পারব না। এখানে আমার থাকার বন্দোবস্ত হয়েছিল। প্রতিদিন সকালে অক্সফোর্ডের এই আশ্চর্য, ঐতিহাসিক স্থাপত্যের মধ্যে সূর্যোদয় দেখেছি। কাজ শেষে বিকেলবেলা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা উপভোগ করেছি।
রেসিডেন্সি প্রোগ্রামটি ছিল সম্পূর্ণ ফুল ফান্ডেড। ফলে প্রচুর বই ও শিল্পসামগ্রী সংগ্রহ করতে পেরেছি। পুরো সফরে যা কিছু দেখেছি, বুঝেছি, সেগুলো নিজের মতো করে অধ্যয়ন ও বোঝাপড়ার সময় এখন। এই জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আমার শিল্পযাত্রায় কীভাবে প্রতিফলিত হবে, আমার ভাবনায় কী রূপে আসবে, তা নিয়ে আমি নিজেও অনুসন্ধিৎসু!
সোমা সুরভী জান্নাত: স্নাতক (অঙ্কন ও চিত্রায়ণ), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, স্নাতকোত্তর (চিত্রকলা), বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন: তানভীর রহমান