যে বাবা–মায়েরা সন্তানকে যথাযথ সমর্থন, সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন, তাঁদের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করে, শিখতেও ভালোবাসে
যে বাবা–মায়েরা সন্তানকে যথাযথ সমর্থন, সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন, তাঁদের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করে, শিখতেও ভালোবাসে

সন্তানকে পরীক্ষায় ভালো ফল করতে যেভাবে সাহায্য করবেন

সন্তানের শিক্ষাগত অর্জন কতটা ভালো হবে, তা অনেকাংশে নির্ভর করে বাবা–মায়েরা কীভাবে সহযোগিতা করছেন, তার ওপর। যে বাবা–মায়েরা সন্তানকে যথাযথ সমর্থন, সহযোগিতা ও উৎসাহ দেন, তাঁদের সন্তানেরা পড়াশোনায় ভালো করে, শিখতেও ভালোবাসে। জেনে রাখুন পরীক্ষায় সন্তানের ভালো ফলের জন্য বাবা–মায়েরা যে ৮টি উপায় অবলম্বন করতে পারেন।

১. পড়াশোনার সময়সূচি

সন্তানের পড়াশোনার একটি সময়সূচি তৈরি করে দিন। এটি সময় ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দারুণ সহায়ক হবে। পড়াশোনা, খেলাধুলা, ঘুম এবং বিনোদনের জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখুন। এতে পরীক্ষার আগের রাতে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকবে আপনার সন্তান।

২. পরিবেশ হোক নিরিবিলি

সন্তানের পড়ার জন্য একটি পরিচ্ছন্ন, শান্তিপূর্ণ, স্বাচ্ছন্দ্যময় পড়ার ঘর বা জায়গা দিন। যেখানে থাকবে না টিভি, মুঠোফোন বা কম্পিউটারের মতো কোনো যন্ত্র। যেখানে থাকবে না চলমান দৃশ্যের হাতছানি কিংবা উচ্চশব্দে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার উপকরণ। বিশৃঙ্খলা কিংবা মনোযোগ নষ্ট করার মতো হট্টগোল থেকেও তাকে দূরে রাখুন। এ রকম নিরিবিলি পরিবেশে শিশু–কিশোরেরা আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে।

৩. ঘন ঘন বিরতি দিন

কোনো বিরতি ছাড়া লম্বা সময় ধরে পড়াশোনা করলে ক্লান্তি আসে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সন্তানদের বিরতি নিতে উৎসাহ দিন। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে তারা বিভিন্ন ধরনের পাজল সমাধান করতে পারে, পুতুল বা অন্যান্য খেলনা নিয়ে খেলতে পারে কিংবা সাইকেল নিয়ে আশপাশের এলাকা থেকে একটু ঘুরে আসতে পারে। এতে তারা মানসিক শান্তি পাবে, আরও মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে উজ্জীবিত হবে।

৪. উৎসাহ দিন, সহযোগিতা করুন

সন্তানদের সব সময় উৎসাহ দিন। আপনার কথাবার্তায় তারা যেন দমে না যায়। তাদের মানসিক শক্তি জোগান। একটি শিশু মা-বাবার কাছ থেকে সব সময় ইতিবাচক সমর্থন পেলে সে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে, তার মধ্যে মানসিক উদ্বেগ কম দেখা যায়, সে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে অনুপ্রাণিত হয়।

৫. সার্বিক দেখভালে ছাড় নয়

অনেক সময় সন্তানকে বাসায় বাবা–মায়েরাই পড়ান। অনেকে আবার গৃহশিক্ষক রাখেন কিংবা কোচিং সেন্টারে পাঠান। স্কুলের বাইরে আপনার সন্তান যার কাছেই পড়ুক না কেন, সার্বিক দেখভাল আপনাকে করতেই হবে। সন্তান কী শিখল, সে ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর নিন। শেখার প্রক্রিয়ায় আপনিও যুক্ত হোন। তাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়া তৈরি করতে দিন, কঠিন গাণিতিক সমস্যাগুলো সমাধানের সময় তাদের সাহায্য করুন। এতে তাদের সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে আপনার অবদান নিশ্চিত হবে। তাদের কাজের প্রতি আপনার আগ্রহও প্রকাশ পাবে।

৬. ভালো অভ্যাস গড়ে তুলতে দিন

আপনার সন্তানের খাওয়া ও ঘুমের দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখুন। তার পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে কি না, সে পুষ্টিকর খাবার খাচ্ছে কি না, যথেষ্ট পরিমাণে পানি খাচ্ছে কি না, এসব ব্যাপারে সচেতন থাকুন। সর্বাঙ্গীন সুস্থতা এবং তীক্ষ্ণ স্মৃতিশক্তি ভালো খাবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সন্তান মুঠোফোন, টিভি, গেমস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেছনে কতটা সময় ব্যয় করছে, সেদিকেও নজর রাখুন।

সন্তানদের সব সময় উৎসাহ দিন, আপনার কথাবার্তায় তারা যেন দমে না যায়

৭. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণে সন্তানকে সহায়তা করুন

সন্তানকে বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণে সহায়তা করুন। ধরা যাক, আপনার সন্তান পরীক্ষায় সব বিষয়ে ভালো করতে পারছে না কিংবা একেবারেই গড়পড়তা নম্বর পাচ্ছে। এ অবস্থায় আপনি যদি তাকে বলেন, ‘তোমাকে আগামী পরীক্ষায় ক্লাসে প্রথম হতে হবে’, তাহলে আপনার ঠিক করে দেওয়া লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী হবে; কিন্তু বাস্তবসম্মত হবে না। যুক্তিসংগত লক্ষ্য নির্ধারণ করলে সন্তানদের ওপর অতিরিক্ত প্রত্যাশার চাপ পড়ে না। ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে তারা সাফল্য অর্জন করে এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে।

৮. শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন

আপনার সন্তানের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। পড়াশোনায় তাদের কতটা উন্নতি হলো এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের আরও উন্নতি করা দরকার, এসব সম্পর্কে জানার জন্য শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল স্কুলের শিক্ষকেরা হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য যোগাযোগমাধ্যমে অভিভাবকদের গ্রুপ তৈরি করে সেখানে পড়াশোনা–সংক্রান্ত সব তথ্য দেন। গ্রুপগুলোতে দেওয়া সব নোটিশ গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল করুন। ক্লাসের কাজ, বাড়ির কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট, ছুটি, পরীক্ষা ইত্যাদি সংক্রান্ত কোনো তথ্য আপনার নজর যেন না এড়ায়। বিশেষ করে সন্তানের ব্যাপারে কিছু জানানোর জন্য শিক্ষকেরা যদি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, তাহলে অবশ্যই সাড়া দিতে হবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া