আপনি হয়তো প্রতি মাসেই ভাবছেন, আগামী মাস থেকে একটু একটু করে টাকা জমাবেন। কিন্তু মাস শেষে দেখা যায় আবারও যা তা–ই। টাকা জমানো তো দূরের কথা, টুকটাক ধারদেনাও হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে একা ভাববেন না। এ রকম সমস্যা আরও অনেকেরই। কেন আমরা টাকা জমাতে পারি না? চলুন, এর পেছনে পাঁচটি কারণ জেনে নেওয়া যাক। সমস্যা জানতে পারলেই আপনি হয়তো সমাধানে উদ্যোগী হবেন।
ঢাকা শহরের প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ ভাড়া বাসায় থাকেন। তাঁদের আয়ের একটা বড় অংশই চলে যায় বাসাভাড়ার পেছনে। ঢাকার বাইরেও ভাড়া বাসায় থাকেন বহু মানুষ। আজকাল শহরে দুই রুমের মোটামুটি ভালো একটা বাসা পেতে হলেও গুনতে হয় প্রায় ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা। ফলে আয়ের শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগ এই খাতে ব্যয় করে ফেলেন মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। বেতনের বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে সঞ্চয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অফিসপাড়া, স্কুলের আশপাশে, বড় রাস্তার পাশে দেখা যায় বাসাভাড়া আরও বেশি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসিক মোট আয়ের শতকরা ৩০ ভাগের বেশি বাসস্থানের জন্য খরচ করা উচিত নয়। অতএব বাসাভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু কৌশলী হোন। বাসা না হয় গলির ভেতরেই হোক, বড় রাস্তায় উঠতে না হয় ৫-১০ মিনিট হাঁটতে হোক, তবু একটু কম ভাড়ার বাসা খুঁজুন। তাতে বাকি টাকাটা জমাতে পারবেন।
মাসের বেতন পেয়ে প্রথমেই চোখ রাখতে হবে আয়-ব্যয়ের হিসাবে৷ অধিকাংশ সময়ই দেখা যায়, আমরা মাসের কোনো বাজেট হিসাব করি না। এতে বেতনের পুরো টাকাই খরচ হয়ে যায়। তাই হিসাবের খাতা তৈরি করতে হবে আগেভাগে, ঠান্ডা মাথায়। কোথায় কী খরচ করছেন, খাতায় লিখে রাখুন। চাইলে মুঠোফোনেও নোট রাখতে পারেন। আগের মাসের খরচের দিকে তাকিয়ে দেখুন, কোন কোন খাতে আপনার খরচ কমানোর সুযোগ আছে। সবকিছু বিবেচনা করে একটা মাসিক বাজেট তৈরি করুন। কত টাকা জমাবেন, তা-ও নির্ধারণ করে রাখা উচিত। অন্য খাতের ব্যয়কে কখনোই সঞ্চয়ের ওপর প্রভাব ফেলতে দেওয়া যাবে না।
সবাই কমবেশি নিজের মতো করে স্বাচ্ছন্দ্যের জীবনযাপনে অভ্যস্ত থাকেন। কেউ খাওয়াদাওয়ায় বেশি ব্যয় করতে অভ্যস্ত, কেউবা জামাকাপড় কেনায়। হঠাৎ করে নতুন কোনো অভ্যাস দৈনন্দিন জীবনে যোগ করা বেশ কঠিন। অর্থাৎ নিজের সুবিধাজনক অবস্থা থেকে কেউ নড়তে চান না। ফলে নিজের খরচের জন্য নতুন বাজেট বানানো, রুটিন অনুযায়ী সেটা বাস্তবায়ন করা, সঞ্চয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ, প্রতি মাসে সেই লক্ষ্য পূরণ ইত্যাদি কাজ অনেক কঠিন মনে হয়। উটকো ঝামেলা ভেবে অনেকেই এই পরিবর্তন আনতে চান না৷ তাই শুরুতেই সঞ্চয়ের কঠিন লক্ষ্য নির্ধারণ করা যাবে না। একদম সহজ কোনো সংখ্যা দিয়ে শুরু করা উচিত। বেশ কয়েক মাস সেটা ঠিকঠাকভাবে করতে পারলে অঙ্কটা একটু বাড়াতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে লক্ষ্য বাড়িয়ে এই সমস্যা উতরে যাওয়া সম্ভব।
‘যে বেতন পাই, টেনেটুনে সংসার চলে৷ যখন বেতন আরও বাড়বে, তখন টাকা জমাব।’—এ রকম মানসিকতা আমাদের অনেকের মধ্যেই আছে। বেতন বাড়লে টাকা সঞ্চয় করা সহজ হয়, এটা সত্যি। কিন্তু ভেবে দেখুন, দুই বছর পর যখন আপনার পদোন্নতি হবে, আপনার ব্যয়ও কি বাড়বে না? জিনিসপত্রের দাম কি আজকের মতোই থাকবে? থাকবে না। আয়ের সঙ্গে আপনার ব্যয়ও বেড়ে যাবে। তাই এ ধরনের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যত ছোট অঙ্কেই হোক, টাকা জমানো শুরু করতে হবে আজ থেকেই। প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা জমালেও বছর শেষে ১২ হাজার হয়। সেটা দিয়ে ছোটখাটো শখ তো পূরণ হবেই। আকস্মিক বিপদ, অসুস্থ হলেও খানিকটা কাজে আসতে পারে।
মাঝেমধ্যে ঝোঁকের মাথায় আমরা অনেক কিছু কিনে ফেলি। সেটা হয়তো আমার দরকার নেই বা আপাতত দরকার হবে না। ধরুন আপনি সুপারশপে গেছেন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে। সেখানে গিয়ে দেখলেন কিছু আসবাবপত্রে ছাড় চলছে। প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও কিনে ফেললেন। আরেকটি দৃশ্য কল্পনা করা যাক। আপনি একটি ছোট বা মাঝারি আকারের রেফ্রিজারেটর কিনতে শোরুমে গেছেন। বিক্রয়কর্মীর কথার ফাঁদে পড়ে একটি বড় রেফ্রিজারেটর কিনে বাসায় ফিরলেন। আপনার ছোট সংসারে হয়তো আগামী পাঁচ বছরেও এই যন্ত্রটির সদ্ব্যবহার হবে না। তাই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজেকে বেশ কিছু প্রশ্ন করুন। এই শখ মেটাতে গিয়ে আমার ওপর কতটা চাপ পড়বে? এত বড় খরচের পর এ মাসে সঞ্চয় করা কি সম্ভব হবে? এটা আমার জন্য কতখানি জরুরি? এসব প্রশ্ন মাথায় রাখলেই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। সঞ্চয়ের জন্য টাকা আলাদা রেখে কোন শখের জিনিস কিনলে সেটা নিশ্চয়ই দোষের কিছু নয়।