আপনার সমবয়সী বান্ধবী হয়তো ভালো একটা বিয়ের জন্য কোনোভাবে পড়াশোনাটা শেষ করেছেন বা পড়াশোনা শেষ করেই কেবল আর্থিক দায় থেকে চাকরি নিয়ে বিয়ে করে সন্তান, সংসার সামলাচ্ছেন। আর আপনি তাঁদের একজন হয়েও এসবের ভেতরে ভরসাম্য করছেন। অথবা ভারসাম্য করে বা না করে কেবল পেশাজীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। লোকের পাঁচ কথা উপেক্ষা করে নারী হয়েও আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতাকে জীবনে অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের সফলতার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তবে আপনি একজন আলফা নারী। আলফা নারীরা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, আত্মনির্ভরশীল, যুক্তিবাদী। নিজের ক্ষমতা–সীমাবদ্ধতা আর তিনি কী চান—এই দুই বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান রাখেন। যেকোনো পরিস্থিতিতে সহজে মানিয়ে নেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে চিনবেন আলফা নারী।
সবসময় কোনো না কোনো লক্ষ্য কেন্দ্র করে জীবন যাপন করেন
আপনার জীবনের একটি নির্দিষ্ট মুখ্য উদ্দেশ্য রয়েছে, যা অর্জনের জন্য আপনি ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আপনার সবকিছুই সেই উদ্দেশ্যকে ঘিরে। হতে পারে সেটা আপনার চাকরি, সম্পর্ক, সন্তান, সামাজিকতা অথবা পদাধিকার বা অন্য যেকোনো লক্ষ্য। আপনি সহজেই হাল ছেড়ে দেন না কিংবা কোনো ব্যর্থতা আপনাকে দমিয়ে রাখতে পারে না। বরং ব্যর্থতা আপনাকে নতুন শুরুর শক্তি যোগায়। সেসব ক্ষেত্রে আপনি ঝুঁকি নিতে ভয় পান না, সব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন হাসিমুখে। যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে, পরিবর্তনে ভয় না পাওয়ার সাহসও আপনি রাখেন। আপনার সাহস অদম্য!
উচ্চ মানসিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন
আপনি আপনার আবেগকে চিনতে, বুঝতে, নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। জানেন যে কোথায় কতটুকু আবেগ প্রকাশ করা যায়, কিংবা কখন আবেগকে প্রশ্রয় দিতে নেই। খুব সহজে মানুষ চিনতে পারেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহজেই অন্যদের প্রভাবিত করতে পারেন।
মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আপনি
যখন আপনি কোনো একটি অনুষ্ঠান বা দলে থাকবেন, তখন আপনার আত্মবিশ্বাস ও নেতৃত্বের গুণাবলির কারণে সবাই আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাইবে, মতামত জানতে চাইবে। আপনি আপনার দলের মতমোড়ল (অপিনিয়ন লিডার)। গবেষকেরা দেখেছেন যে আলফা নারীদের প্রায়ই পরামর্শদাতার অবস্থানে রাখা হয়। নন-আলফারা দল ছেড়ে চলে গেলে তেমন কিছুই আসে–যায় না। তবে যখন একজন আলফা নারী দল ছেড়ে যান, তখন অদ্ভুত কিছু ঘটতে দেখা গেছে। হয় মতবিনিময় সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, কিংবা দলের অন্যরা একজন নতুন আলফার প্রত্যাশায় চারপাশে তাকান, অথবা সবচেয়ে বেশি যেটা হয়—দলটি ভেঙে যায়!
বহির্মুখী ও অন্তর্মুখী স্বভাবের মাঝামাঝি থেকে সম্প্রীতি ছড়ান
দলের মধ্যমণি হয়ে সবার সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ, আড্ডা যেমন দিতে পারেন, তেমনি বন্ধুদের সমস্যায় সবার আগে এগিয়ে আসেন, মানুষকে ভালোবাসেন। আবার একা থাকতেও পছন্দ করেন। একা সময়ে নিজেকে ‘রিচার্জ’ করে নেন। নিজের যত্ন নেন, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করেন, সবকিছুর ভারসাম্য করতে শেখেন।
নেতৃত্বের উচ্চাকাঙ্ক্ষা
আলফা নারীদের উপস্থিতি সবাই পছন্দ করে, তাঁদের পরামর্শ শোনে। তবে আলফা নারীরা বিষয়টি উপভোগ করেন, অন্যকে ভালো কাজে প্রভাবিত করেন, অনুপ্রেরণা দেন। খুব অল্প বয়স থেকেই ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি ভাগাভাগি, সহযোগিতা, মানুষ চিনতে পারার গুণ শেখানো হয়। তাই মেয়েরা অন্যদের আবেগ পড়তে পারেন, একটি দলের অন্যদের আবেগ-চিন্তা ধরতে পারেন। আলফা নারীরা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে এই গুণ সহজেই কাজে লাগান।
নতুন কিছু জানা ও শেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ
আলফা নারীরা নতুন নতুন বিষয় শিখতে, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করতে পছন্দ করেন। তাঁরা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, অভিজ্ঞতা থেকে শেখেন, নতুন কিছু শেখার নেশায় আশপাশে তাকান, পর্যবেক্ষণ করেন।
পৃথিবীতে আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটা হলেন মা
আলফা নারীদের তাঁদের মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী। যখন কোনো নারী তাঁর পরিবারে ছোট থেকে একজন শক্তিশালী মা ও দৃঢ় পারিবারিক ভিত্তির সাহচর্যে থাকেন, তখন তাঁরাও ছোট থেকে জীবনে কিছু করার, ঘরের বাইরের দুনিয়া দেখার সাহস নিয়ে বেড়ে ওঠেন।
সায়েন্স অব পিপল অনুসারে, আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় অনেক পুরুষই আলফা নারীদের ‘ভীতিকর’, ‘লাউড’, ‘দৃষ্টিকটু’, ‘দলবাজ’—এসব ট্যাগ দেন। কেননা, অবচেতনে তাঁরা এই নারীদের নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবেন। এই নারীদের কারণে তাঁদের ক্ষমতাচর্চার সীমা কমে আসবে বলে আশঙ্কায় থাকেন। এই ক্ষমতাচর্চার লড়াইয়ে নারীরা যোগ্য দাবিদার হিসেবে অনেক বাধা ঠেলে নিজেদের উপস্থাপন করেন। তবে আলফা নারীরা কিন্তু এই পুরুষদের নিয়ে ভাবেন না। তাঁদের ভাবনাজুড়ে থাকে তাঁদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আপনজন, মা, জীবনসঙ্গী, সন্তান, বন্ধু, সমাজ আর সুস্থ ও যৌক্তিক ক্ষমতাচর্চা। তবে ম্যারেজ ডটকমের সমীক্ষা বলছে, আলফা নারীর জন্য আলফা পুরুষেরাই সেরা জীবনসঙ্গী!