কোষ্ঠকাঠিন্য আমাদের খুব পরিচিত একটি সমস্যা। এই রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সবাই কিছু না কিছু জানি। কিন্তু ‘হার্শপ্রাং ডিজিজ’ সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না।
হার্শপ্রাং ডিজিজ একটি জন্মগত সমস্যা। শিশু মায়ের পেটে থাকা অবস্থায় বৃহদান্ত্রে (কোলন) স্নায়ুকোষ বিন্যাসপ্রক্রিয়া ব্যাহত হলে এ রোগের সৃষ্টি হয়। কোলনের যে অংশে স্নায়ুকোষ থাকে না, ওই অংশটুকু প্যারালাইজড থাকে। ফলে কোলনে মল জমা হয় ও ধীরে ধীরে পেট ফুলতে থাকে।
শিশু জন্মের পর স্বাভাবিকভাবেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সবুজ কালো রঙের পায়খানা করে। শিশু যদি এই সময়ের পরে মলত্যাগ করে বা কোনো ওষুধের মাধ্যমে মলত্যাগ করানো হয়, তবে তা হার্শপ্রাং ডিজিজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শতকরা ৯০ ভাগ হার্শপ্রাং ডিজিজে এমন উপসর্গ থাকে। এর সঙ্গে জন্মের পর থেকেই পেট ফুলে থাকা, সবুজ রঙের বমি হওয়া ধরনের উপসর্গ থাকতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার দেওয়া শুরু করলে দুই-তিন দিন পরপর পায়খানা করে। এমনকি মাঝেমধ্যেই সাপোজিটরি বা এনেমার সাহায্য নিতে হয়। বাচ্চার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পেট ফাঁপার সমস্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বমি, জ্বর ও দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানাও হতে পারে। আর এসব খুব অল্প সময়ের মধ্যেই মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
শিশুদের সাধারণ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে হার্শপ্রাং ডিজিজকে কীভাবে আলাদা করা যায়?
১. শিশু জন্মের পর স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে প্রথম পায়খানা হলে হার্শপ্রাং ডিজিজ না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২. যেসব শিশু ফর্মুলা দুধ, গরুর দুধ, সুজি ইত্যাদি খাবার খায় ও শাকসবজি কম খায়, তাদের সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন ও ওষধ সেবনের মাধ্যমেই কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়ে যায়।
৩. রোগীর ইতিহাস ও অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে মলদ্বার থেকে মাংসপিণ্ড নিয়ে পরীক্ষা করে হার্শপ্রাং ডিজিজ নিশ্চিত করা হয়।
হার্শপ্রাং ডিজিজ নিরাময়ে পেটের অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুটির বেশি অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। প্যারালাইজড কোলন ফেলে দেওয়াই এই রোগের মূল চিকিৎসা। হার্শপ্রাং ডিজিজের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত শিশু সার্জারি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।