‘সময় নেই’, ‘লেট লতিফ’, ‘আর পাঁচ মিনিট’, ‘অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্য আরও দুই দিন বাড়িয়ে দিন’—শিক্ষাজীবনে ঘুরেফিরে এসব শব্দ-বাক্য আমাদের জীবনে প্রায়ই আসে। সময় যেন পাল্লা দিয়ে ছুটে যায় আর আমরা পরিকল্পনার অভাবে কিংবা অভ্যাসের কারণে কাজ কিংবা পড়াশোনার চাপে সেই পাল্লায় হেরে যাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে গবেষক কিংবা তরুণ পেশাজীবী—সময় ব্যবস্থাপনা সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। কীভাবে করব সময় ব্যবস্থাপনা? জেনে নেওয়া যাক।
সময় ও কাজ সাজাতে হবে
কাজের গুরুত্ব বুঝে সময়কে সাজাতে হবে। অনেক কাজের মধ্যে কোন কাজটি করবেন, তা জানতে আইজেনহওয়ারের ‘ডিসিশন ম্যাট্রিক্স’ ব্যবহার করতে পারেন। কোন কাজের গুরুত্ব কেমন আর কোন কাজ কতটা জরুরি, তা বুঝে ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন। এ ছাড়া পোমোডোরো টেকনিক ব্যবহার করে সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চেষ্টা করতে পারেন। যেসব কাজ নিয়মিত করছেন, তার জন্য ‘টাইম বক্সিং’ কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহের যেকোনো একটি দিনের নির্দিষ্ট সময়ে কিছু কাজ নিয়মিত করতে থাকলে তাড়াহুড়ো করে কাজের চাপ কমে।
কেন করছি—জানুন
অনেক সময় আমরা কেন কোন কাজ করছি, তা জানি না। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে বোঝার চেষ্টা করুন। কেন কাজ করছেন, কাজের মাধ্যমে কী লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন? কোনো গবেষণার ক্ষেত্রে কী করছেন, কেন করছেন আর ভবিষ্যতের বিষয়টি মাথায় নিতে হবে আগে। কাজ করতে হবে বলেই কাজ করছেন, এমনটি যেন না হয়। কাজের সঙ্গে নিজের আগ্রহ ও দক্ষতা বিকাশের সুযোগ, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনের দিকে খেয়াল রাখুন।
পরিকল্পনা সবার আগে
ধরুন, আগামী মাসের ১০ তারিখে আপনার মার্কেটিং বিষয়ে একটি প্রেজেন্টেশন দিতে হবে। আপনি কি ৮ তারিখে তাড়াহুড়ো করে সেই প্রেজেন্টেশন তৈরি করে জমা দেবেন? উত্তর অবশ্যই হওয়া উচিত— ‘না’। যেকোনো কাজ বা কর্মসূচির জন্য আগে পরিকল্পনা করতে শিখুন। কাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিন। কোনো কাজ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। পুরো সময়টিকে পরিকল্পনা, প্রাথমিক ধাপ, পূর্ণাঙ্গ কাজ এবং সম্পাদনার জন্য সময় রেখে ভাগ করুন। এক দিনে তাড়াহুড়ো করে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার চেয়ে, প্রতিদিন দুই-তিন ঘণ্টা সময় নিয়ে ডেডলাইনের আগেই কাজ শেষ করুন। এতে মানসিক চাপ কমবে, কাজের গুণগত মান ভালো হবে।
নিজেকে জানতে হবে
সময় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে আপনার দক্ষতা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কীভাবে কাজ করেন, কোন কোন টুলস ব্যবহার করেন, তা মাথায় রাখতে হবে। আপনি রাতে কাজ করেন বেশি, না সকালে? নিয়ম করে অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করুন। সময় ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে জানতে শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শ নিতে পারেন। এ–সংক্রান্ত বেশ কিছু ভালো বই আছে। যেমন ব্রায়ান ট্রেসির ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’, ‘ইট দ্য ফ্রগ: টোয়েন্টি ওয়ান ওয়েইজ টু স্টপ প্রোক্যাস্টিনেটিং অ্যান্ড গেট মোর ডান ইন লেস টাইম’, অথবা কেন ব্ল্যাঙ্কার্ড ও স্পেন্সার জনসনের ‘দ্য ওয়ান মিনিট ম্যানেজার’।
বাস্তবতা মেনে নিন
অনেক ক্ষেত্রে গবেষণা কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট করার সময় আমরা বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলি না। হয়তো গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে ১০ দিন লাগবে, আমরা ৩ দিনে শেষ করতে চাই। আবার কোনো প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে আমাদের দুই দিন সময় লাগবে, আমরা বলছি এক দিনেই করে ফেলব। এমনটা করা যাবে না। নিজের অবস্থান ও বাস্তবতার নিরিখে কাজের পরিকল্পনা করুন। সমন্বিতভাবে কাজ করা শিখুন। যে কাজে অন্যদের যুক্ত করা যায়, তাঁদের যুক্ত করুন। দলগত অ্যাসাইনমেন্টে সবার কাজ ভাগ করে দিন, যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিন। ফলোআপ করুন। একই সঙ্গে অনেক কাজ বা এখনকার চলতি ট্রেন্ড ‘মাল্টিটাস্কিং’ করবেন না, এতে কাজের মান ভালো হয় না।
লিখুন, তালিকা করুন
তালিকা তৈরির মাধ্যমে যেকোনো কাজের হিসাব রাখুন। আজকের কাজ, আগামীকালের কাজ, ভবিষ্যতের কাজগুলো লিপিবদ্ধ করুন। অনলাইনে যেমন অনেক অ্যাপ (যেমন এভারনোট, গুগল কিপ) আছে, তেমনি ডায়েরি বা খাতায় কাজের কথা লিখে রাখুন। এ ছাড়া ই-ক্যালেন্ডারে বিভিন্ন ইভেন্ট বা টুকরো কাজের কথা লিখে রাখলে নির্দিষ্ট সময়ে নোটিফিকেশন পাওয়া যায়। টু ডু লিস্ট, পোস্ট-ইট-নোটস, নোটপ্যাড, বুলেট জার্নালসহ নানাবিধ কৌশলের মাধ্যমে কাজের হিসাব রাখা যায়।