কদিন আগেই শেষ হলো ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২৩। জাতীয় উৎসবে বিজয়ী ৩৫ জন খুদে গণিতবিদকে নিয়ে লালমাটিয়ার একটি ভবনে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় গণিত ক্যাম্প। আরও কয়েক ধাপে যাচাই–বাছাইয়ের পর এখান থেকেই নির্বাচন করা হবে ‘বাংলাদেশ দল’। নির্বাচিতরা জাপানের চিবায় অনুষ্ঠেয় ৬৪তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।
কেমন ছিল এবারের গণিত ক্যাম্প। বাংলাদেশ গণিত দলের কোচ মাহবুব মজুমদারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্যাম্পে ঢুঁ মেরেছিলাম ২ মার্চ। তখন বিকেল পাঁচটা। ক্যাম্পে পা রেখেই টের পাই সুনসান নীরবতা। জানা গেল, চলছে প্রস্তুতিমূলক পরীক্ষা। অংশ নিচ্ছে ৩৫ জন শিক্ষার্থী। বিকেল ৫টায় শুরু হওয়া পরীক্ষা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নটর ডেম কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র রেজওয়ান আহমেদ বলছিল, ‘আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতেই আমরা ক্যাম্পে দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষায় অংশ নিই।’ গণিত নিয়ে আগ্রহী হলেও ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চায় রেজওয়ান। তার ভাষ্য, গণিত সব পড়াশোনাতেই লাগে। চিকিৎসাবিজ্ঞানেও গণিতের অনেক কাজ আছে। রেজওয়ানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল বরিশাল ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থী মুসাহিদ আহমেদ। সে বলল, ‘এ বছর আমি এসএসসি পরীক্ষা দিব। কিন্তু জাতীয় গণিত ক্যাম্পের ডাক উপেক্ষা করতে পারিনি। এসএসসির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি জোরেশোরে।’ ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের আরেক এসএসসি পরীক্ষার্থী সাকিবুল আসলামও অংশ নিচ্ছে জাতীয় গণিত ক্যাম্পে। প্রথমবার সুযোগ পেয়েছে বলে সে ভীষণ খুশি। এবারের ক্যাম্পে সাকিবের মতো প্রথমবার অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর তুরাব হক জানান, আগের ক্যাম্পগুলোতে সংখ্যাতত্ত্ব ও বীজগণিত নিয়ে তুলনামূলক কম ক্লাস ছিল। এবারের ক্যাম্পে জ্যামিতি ও কম্বিনেটরিকসের ক্লাসের পাশাপাশি সংখ্যাতত্ত্ব ও বীজগণিতের ক্লাস বাড়ানো হয়েছে।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মনামী জামানের সঙ্গে কথা হলো। বলল, ‘গণিত ক্যাম্পে আমরা যে শুধু গণিতই করছি, বিষয়টি এমন নয়। বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান–কৌশল নিয়ে আলোচনা করছি। একই প্রশ্ন কতভাবে, কত আঙ্গিকে সমাধান করা যায়, সমাধানের জন্য কীভাবে নিজেকে তৈরি করা যায়, বোঝার চেষ্টা করছি।’ ২০২২ সালের আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়েছিল নুজহাত আহমেদ। সে-ও আছে এবারের ক্যাম্পে। জানাল, এবার আরও ভালো ফলাফলের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
ক্যাম্প মানে কি শুধুই গণিত, কেবলই পরীক্ষা? দাবা থেকে শুরু করে নানা ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক খেলাধুলায় অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর প্রত্যয় ঘোষ জানান, বিভিন্ন বছরের আইএমও অংশগ্রহণকারী, কিংবা আগে যাঁরা ক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন, তাঁরাও আসছেন অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে।
কেমন লাগছে ক্যাম্প, জিজ্ঞাসা করতেই নানা রকম উত্তর পাওয়া গেল। তবে মোদ্দাকথা একটাই, নতুন কিছু শেখার সুযোগ পেয়েই খুশি এই খুদে গণিতবিদেরা। গণিত ক্যাম্পে অনেকে নতুন বন্ধু পেয়েছে। কেউ টাঙ্গাইল থেকে এসেছে, কেউ এসেছে বরিশাল থেকে। একেকজনের স্কুল–কলেজও আলাদা। এর ফলে মিথস্ক্রিয়ার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।
জানিয়ে রাখি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি গণিত উৎসব আয়োজন থেকে শুরু করে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।